শনিবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » রাজনীতি » অতীত ভুলে সংলাপে আসুন: বিএনপি
অতীত ভুলে সংলাপে আসুন: বিএনপি
ঢাকা: অতীতচারিতা ভুলে আবারও সরকারকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের ক্ষমতা আছে বলে যা খুশি করছে। কিন্তু জনগণের মন থেকে তারা জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলতে পারবে না। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বর্তমান শাসনামলে সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রবাদ ও আইনের শাসন শীর্ষক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। ব্যারিস্টারস ফর চেঞ্জ নামের একটি সংগঠন ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে।বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তুলনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, কাস্ত্রোর মৃত্যুর পর বিভিন্ন দেশের তরুণেরা তাঁর জন্য কাঁদছে। জিয়াউর রহমানও এমন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর লাখ লাখ মানুষ তাঁর জন্য কেঁদেছিল। তিনি আরও বলেন, সরকার জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম পদক কেড়ে নিয়ে তাঁর চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না। কারণ, জিয়াউর রহমানকে মানুষ হৃদয়ে ধারণ করে।নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, মামলা দিয়ে খালেদা জিয়াকে দমিয়ে রাখা যাবে না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে খালেদা জিয়ার দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য আবারও আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপরও বিএনপি আশা করে সরকার দাম্ভিকতা পরিহার করে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। পাশাপাশি নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ এবং শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে সংলাপের আয়োজন করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, সরকারের সাহস থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিক। ফলাফল যা-ই হোক, বিএনপি তা মেনে নেবে।শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা আগে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, আমরা আবারও বলছি, অতীতচারিতা ভুলে যান। লেট আস ফরগেট অ্যাবাউট দ্য পাস্ট। আসুন আমরা নতুন করে একটা আলোচনা করি, একটা সংলাপ করি। সেই সংলাপের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কীভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়, সেই পথ বের করি।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও তারা (আওয়ামী লীগ) সাথে সাথে তা রিজেক্ট করেছে। এখনও আমরা আশা করব। নিরপেক্ষ নির্বাচনে দিলে যে ফলাফল হবে, বিএনপি তা মেনে নেবে বলেও তিনি।সাহস যদি থাকে, জনগণের প্রতি আস্থা থাকে, তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিন, যা ফলাফল হয়, তা-ই আমরা মেনে নেবে। লুই কানের নকশা ভেঙে সংসদ ভবন এলাকায় জিয়াউর রহমানের কবরসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা বিভিন্ন সময়ে নির্মিত হয়। মূল নকশা পাওয়ার পর সেগুলো সরানো হবে বলে জানিয়েছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।স্থপতি লুই আই কানের করা জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসার পরদিন শুক্রবার বিএনপি মহাসচিবের এই প্রতিক্রিয়া এল। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে সরানোর বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতাই শুধু নন- একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরোত্তম, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে মানুষকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। তার মাজার সরিয়ে ফেলার জন্য আপনারা আজকে ষড়যন্ত্র করছেন।কিউবার প্রয়াত নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর মতো বাংলাদেশেও জিয়াউর রহমানের নাম কোটি মানুষ হৃদয়ে রয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আমরা বলতে চাই, দিস ইজ জিয়াউর রহমান। যদি তার বিরুদ্ধে কিছু করার চেষ্টা করেন, জনগণ তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, জনগণ তাকে হৃদয়ে ধারণ করে নিয়েছে, জনগণ তাকে মাথার ওপরে রাখবে।জঙ্গিবাদ সরকারের সৃষ্টি এমন অভিযোগ করে তাদেরকে বিনাবিচারে হত্যার সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। কোনো তদন্ত ছাড়া, বিচার ছাড়া বিচার হয়ে যাচ্ছে। কী নাশকতার চেষ্টা করছিল, সেই খবর পেয়ে নির্মূল করে দিল। উইদিন ওয়ান মানথ একমাসের মধ্যে সব জঙ্গিবাদ শেষ, খতম হয়ে গেছে। কার স্বার্থে তৈরি হয়, কারা তৈরি করে, কিভাবে তৈরি করে, তারাই বলতে পারবেন- আসামি করেন আমাদের দলের নেতাদের। সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।