বুধবার ● ১৬ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » ভোলার উপকূল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বেতুন গাছ
ভোলার উপকূল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বেতুন গাছ
আদিত্য জাহিদ : আবহমান গ্রাম বাংলার চিরচেনা চিত্র হলো সবুজ বন-বনানী। বাড়ির পেছনের অংশে বাঁশ ঝাড়, গাব গাছসহ অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছের মধ্যে একটি ছিলো বেত গাছ। গ্রামে বেত গাছ হারিয়ে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বেতফলও এখন হারিয়ে যাচ্ছে। বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে আর ফল পাঁকে ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে। এটি অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকের কাছে খুবই প্রিয়। এটি যেমন পুষ্টিকর তেমনি সু-স্বাদু ও ঔষুধি গুণাবলী সমৃদ্ধ। মূলত মাটির অবস্থা ভেদে এই ফল খুব মিষ্টি হয়। বেত গাছ দিয়ে গ্রাম বাংলায় বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়। বাংলা মাসের চৈত্র, বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে বেত ফল পাকে। গ্রামে বেত গাছ হারিয়ে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বেতফলও এখন হারিয়ে যাচ্ছে। পল্লীঞ্চলের কৃষক শ্রেণীর অতি প্রয়োজনীয় গাছ হিসেবে পরিচিত বেত গাছ। বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারী, ঢুষি, হাতপাখা, চালোন, টোকা, গোলা, ডোল, ডুলা, আউড়ি, চাঁচ, ধামা, পাতি, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা, খাট, ঝুড়ি, টেবিলল্যাম্প, ল্যাম্পশেড ইত্যাদি তৈরি করা হয়ে থাকে। এটি গৃহনির্মাণ সহ বিভিন্ন কাজেও ব্যবহার করা হয়, বিশেষ কওে রেস্তরাঁ বা অফিসের শৌখিন পার্টিশন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া লম্বা বেত ফালা করে নানা কিছু বাঁধার কাজেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কালের আবর্তে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছে। গত কয়েক বছর পূর্বেও ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে গ্রামের কৃষক শ্রেণীর মানুষ বেত বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসতো। একটি ২০-২২ হাত লম্বা বেত আগে বিক্রি হতো ২০ থেকে ২৫ টাকায়। কিন্তু আজ সে বেত ১৫০ টাকা দিলেও পাওয়া যাচ্ছে না।
চরফ্যাশনের বেত ব্যবসায়ী মোঃ খালেক মিয়া জানান, আমি এই ব্যবসার সাথে প্রায় বিশ বছর যাবৎ জড়িত। কয়েক বছর আগেও ওড়া বা ধামার চারিদিক মজবুত করে গিঁট দেয়ার জন্য বেত ব্যবহার করতাম। আজ বেত অনেকটাই দুষ্পপ্রাপ্য হওয়ায় তার স্থান দখল করেছে পরিবেশ দুষণকারী তৈরি প্লাষ্টিকের দড়ি বা রশি। খালেকের মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানুষ বাড়ির আশপাশের ঝোপ-ঝাড় কেটে পরিষ্কার করে সেখানে ঘর-বাড়ি তৈরি করছে। এতে যেমন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় প্রজাতির লতানো গাছ তেমনি হারাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য।
চরফ্যাশন উপজেলা বনবিভাগের এসিএফ জানান, বাণিজ্যিক প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ গ্রামে এখনো যে সকল ক্ষুদ্র বেত-ঝাড় রয়েছে, সেখানে বেত বৃদ্ধির জন্য বিশেষ কৃষি প্রকল্প গ্রহণ করলে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প প্রাণ ফিরে পাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।
এফএইচ