বুধবার ● ১৯ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » রাজনীতি » এই ২০, বিশ না !
এই ২০, বিশ না !
ঢাকা: ‘ধারে কাটে না ভারে কাটে’, অনেকটা এই তত্ত্বে বিশ্বাস করেই দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি গঠন করেছিল ২০ দলীয় ঐক্যজোট। জোট গঠনের সময় এ কথা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তারা চেয়েছিলেন প্রতিপক্ষ ১৪ দলীয় মহাজোটের চেয়ে সংখ্যাটা কোনো রকম বাড়িয়ে একটা রাজনৈতিক জোট করতে, যেখানে সংখ্যাটাই বড়, মান যাই হোক!
দিন যায়, রাত যায়, বছর গড়িয়ে ছোট থেকে ছোট হয়েছে ২০ দলীয় জোটের পরিসর। রাজনীতির স্রোত অনেক দূর গড়িয়ে গেলেও ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব এখন আর নেই বললেই চলে। মূলত এই জোটে শরিকের সংখ্যা কমতে কমতে এখন এসে দাঁড়িয়েছে ১২টিতে।
সাতটি দল ছেড়ে গেছে বিএনপিকে। আরও একটির থাকা না থাকা এখন সমান কথা। যারা বিএপিকে ছেড়ে গেছে তাদের বিএনপিকে ছেড়ে যাওয়ার পন্থাটাও ব্যতিক্রমী। আবার শরিকদের এই ছেড়ে যাওয়াকে সহজভাবে মানতে চাইছে না বিএনপি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ দলীয় জোট থেকে এরইমধ্যে বেরিয়ে গেছে যে সাতটি দল- তাদের ছায়া হয়ে সে সব দলের দু’একজনকে রেখেই ২০ দলের অবয়ব রাখার চেষ্টা করছে বিএনপি। গত বছরই ২০ দলীয় জোট ছেড়ে গেছেন শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি। এনপিপি নামে ঐ দলের সাবেক মহাসচিব ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদকেই এখন এনপিপি বলে চালিয়ে নিচ্ছে বিএনপি। যদিও নির্বাচন কমিশন এমনকি আদালতও শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বাধীন এনপিপিকেই মূল দল বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
গত রমজানে ফরহাদুজ্জামান এনপিপির নামে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধান অতিথি করে ইফতার পার্টি আয়োজন করতে গিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে পারেননি। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এনডিপির মহাসচিব আলমগীর মজুমদার ২০ দলীয় জোট ছেড়ে গেছেন একটি বড় অংশ সঙ্গে নিয়ে। আছেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তুজা। যিনিও গত রমজানে বেগম খালেদা জিয়ার শিডিউল নিয়ে ইফতার পার্টি করতে সক্ষম হননি।
মরহুম ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্য জোটও বিএনপিকে ছেড়ে গেছে। ইসলামী ঐক্যজোটের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী ২০ দলীয় জোটকে ছেড়ে যাওয়ার পর সে দলের সাবেক সহসভাপতি আব্দুর রকিবের নেতৃত্বে কয়েকজনকে দিয়ে জোটে ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারটি পূরণ করা হচ্ছে।
ন্যাপের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক তার মহাসচিবসহ ২০ দলীয় জোট ছেড়ে গেছেন। এক্ষেত্রে ন্যাপের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি ক্ষুদ্র অংশ এখন বিএনপির কাছে ‘ন্যাপ’ হিসেবে জায়গা পেয়েছে।
মুসলিমলীগের মহাসচিব আতিকুল ইসলাম দলবল নিয়ে দলটির চেয়ারম্যান এএইচএম কামরুজ্জামান খানকে একা ফেলে ২০ দলীয় জোট বা বিএনপিকে ছেড়ে গেছেন। ২০ দলের শরিক বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন মারা যাওয়ার আগেই দলটির মহাসচিব এমএ রশিদ মজুমদার ২০ দলীয় জোট ছেড়ে গিয়েছিলেন।
একদল এক নেতা তত্ত্বে টিকে আছেন শফিউল আলম প্রধান। কিন্তু এরই মধ্যে মত আর স্বার্থের দ্বন্দ্বে প্রধানকে ছেড়ে গেছেন তার দলের সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন বাবুল ও মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি বড় অংশ।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মূল জাতীয় পার্টি ছেড়ে একই নাম নিয়ে ২০ দলীয় জোটে যোগ দিয়েছিলেন কাজী জাফরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি নাম দিয়ে কয়েকজন। যদিও আরো একটি জাতীয় পার্টি ২০ দলে আছে। তা হলো প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জুর ছেলে আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। কাজী জাফর আহমদ মারা যাওয়ার পর তার জাতীয় পার্টি এখন আর নেই বললেই চলে।
এতোকিছুর পরও ২০ দলীয় জোট ঠিক আছে বলে দাবি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।
তিনি পরিবর্তন ডটকমককে বলেন, আমরা চেয়েছি শুধু দল নয় সব মত পেশার মানুষকে এক সঙ্গে রাখতে।
২০ দলীয় জোটের নামে যারা আছে তাদের মাঝেও ক্ষোভ-বিক্ষোভ বিরাজ করছে। এখনও কোনো কূলকিনারা না পেয়ে যারা বিএনপির সঙ্গে রয়ে গেছেন সেসব দলের একাধিক নেতা পরিবর্তন ডটকমের কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক জোট শরিকদের তাদের ছেড়ে যাওয়া ও নিজেদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।
জোটের বেশ কয়কজন শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপি নেতারা তাদের অবজ্ঞা আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। ফোন করলে বিএনপি মহাসচিব ফোন ধরেন না। এমনকি মহাসচিবের ব্যক্তিগত সহকারীও তাদের পাত্তা দেননা, বিশেষ দরকারে জোটের ছোট ছোট শরীকদের ফোন পর্যন্ত ধরেন না।
জোট শরিকরা তাই বিএনপিকে নিয়ে শংকা ও আস্থাহীনতায় ভুগছেন। তাদের আশংকা এখনই যেহেতু বিএনপি তাদের অবজ্ঞা করে তাহলে ক্ষমতায় গেলে ভবিষ্যতে আর কিছু থাকবে না ছোট ছোট শরিকদের।
একই সঙ্গে বিএনপির বর্তমান শরিকরা জানান, ক্ষোভ-বিক্ষোভ অভিমানতো আছেই, সেই সঙ্গে সরকারের লোভ লালসা দেখানোর টোপ গিলে ও চাপেও কেউ কেউ ২০ দলীয় জোট ছেড়ে গেছেন।
২০ দলীয় জোট ছেড়ে যাওয়া বর্তমানে শওকত হোসেন নীলুর নেতুত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এনডিএফের মহাসচিব গোলাম মোর্তুজা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছাড়ার অনেকগুলো কারণ আছে। বিএনপি কোনো সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারে না। কোনো ইস্যুতেই আন্দোলনে ধারাবাহিকতা রাখে না। প্রকৃত বন্ধুদের মূল্যায়ন না করে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা এবং ক্ষমতার স্বাদ একা নেওয়ার প্রবণতাও বিএনপির প্রবল।
তিনি আরো বলেন, জোটের ভেতর থেকে যারা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে তাদের বিষয়েও বিএনপি কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এইসব কারণেই জোট ছেড়ে আসা।
যোগাযোগ করলে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ২০ দলীয় জোটের বিষয়ে মহাসচিবের বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। শরিকরা কেন দরকারে বিএনপির নীতি নির্ধারকদের পায় না জানতে চাইলে গয়েশ্বর রায় পাল্টা প্রশ্ন করেন, কে বলেছে পায় না? অন্যদের কথা জানিনা। আমাকে পায়। আমাকে একটা রিকশাওয়ালা পর্যন্ত পায়। আর ওরা পাবে না কেন?
২০ দলীয় জোট গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একটা পরিস্থিতিতে ওই জোট গঠন হয়েছিল। আমাদের জোট ঠিকই আছে। দু’একজন লোক চলে গেছে মাত্র।
পিডি