শিরোনাম:
●   ভোলার কর্ণফুলী-৩ লঞ্চে চাঁদপুরের মোহনায় অগ্নিকাণ্ড ●   উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় ●   ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ●   ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ●   চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস ●   ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ●   ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ●   ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ●   ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ●   ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
ভোলা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার সংবাদ
শুক্রবার ● ৭ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » খেলা » তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের
প্রথম পাতা » খেলা » তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের
৪৯৫ বার পঠিত
শুক্রবার ● ৭ অক্টোবর ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের

 ---

ঢাকা: ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে ‘ভীত’ সিংহ! সঙ্গে অতীতের সুখস্মৃতি অনুপ্রেরণা দিচ্ছিল লাল-সবুজদের। মিরপুরের ২৫ হাজার দর্শকের গগনবিদারী চিৎকারও সাহস যোগাচ্ছিল মাশরাফিদের। প্রথম বল গড়াতেই মনে হচ্ছিল ‘আজও হবে’। জেগে ওঠার এতোসব মন্ত্র থাকলেও জেগে ওঠা হল না! ব্রিস্টল, চট্টগ্রাম, অ্যাডিলেডের পর ঢাকায় ইংল্যান্ড বধের কাছাকাছি গিয়েও পা পিছলে গেল। তীরে এসে তরী ডুবল! চোখের জলে ভাসলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে ভয়ে ঢাকায় আসা দলটিকেই যেন জয় উপহার দিল বাংলাদেশ। অনেক নাটকের পর শুক্রবার হাসি মুখে মাঠ ছাড়ল ইংল্যান্ড। সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস। সঙ্গে সাকিবের টর্নেডো হাফসেঞ্চুরি! তারপরও লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সব শেষ! বাংলাদেশের বিপক্ষে ২১ রানের জয় সফরকারীদের।

এই জয়ে ওয়ানডে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।

তিনশো পেরোনো স্কোর টপকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের সমীকরণটা কঠিনই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সেই ‘মিশন ইম্পসিবল’ পথ পাড়ি দিতে দলকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন ইমরুল কায়েস এবং সাকিব আল হাসান। দুজনে মিলে রাতের মিরপুরকে রঙ্গিন করে দেন। সাকিব মাত্র ৫৫ বলে করেন ৭৯ রান। ইমরুল ১১৯ বলে ১১২। কিন্তু সাকিব বিদায় নিতেই শেষ ৬ উইকেট বিস্ময়করভাবে পড়ল মাত্র ১৭ রানে! তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে গেল স্বপ্নও।

উইকেটে আসা-যাওয়ার দায়টুকু যেন সারলেন মুশফিক, মোসাদ্দেক আর মোশাররফ রুবেলরা। তাতে জয়ই তুলে দিলেন ইংল্যান্ডের হাতে।

অথচ সতর্ক শুরু ছিল বাংলাদেশের। দ্রুত রান তোলার চেয়ে উইকেটে মানিয়ে নেয়াতেই মনোযোগ দেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। যদিও আফগানদের বিপক্ষের সেই তামিমকে এই ম্যাচে খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুরু থেকেই ব্যাট হাতে যেন অস্বস্তি ছিল তার। কিছুক্ষণ লড়েছেন, কিন্তু সেই পরিস্থিতি থেকে বের হতে পারেননি আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান। এক পর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে জ্যাক বলের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারি উড়িয়ে মারতে যান। কিন্তু ব্যাটে-বলে সেভাবে সংযোগ হলো না। ক্যাচ চলে যায় জেমস ভিন্স হাতে। ২১ বলে ১৭ করে ফিরেন তিনি।

প্রিয় পজিশন তিন নম্বরে এসে শুরুটা বেশ ভালই ছিল সাব্বির রহমানের। কিন্তু এদিন ভাগ্যটা সঙ্গে ছিল না তার। যে বলটি ছক্কা হয়ে যাচ্ছিল প্রায়, তাতেই কিনা আউট! সেই জ্যাক বলের ডেলিভারিতে ডেভিড উইলির অসাধারণ ক্যাচে ফিরেছেন সাব্বির। তার আগে ১১ বলে করেন ১৮ রান। ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে পুল করেছিলেন সাব্বির। মনে হচ্ছিল ছক্কা পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু দড়ির ঠিক সামনে হাওয়ার শরীর ভাসিয়ে বল সীমানার ভেরতে ঠেলে দেন উইলি। এরপর সীমানার ভেতরে ফিরে এসে সেই বলে ক্যাচ মুঠোতে নেন তিনি। টিভি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে মাঠ ছাড়েন সাব্বির।

তবে অন্য প্রান্তে লড়ে যাচ্ছিলেন প্রস্তুতি ম্যাচে রানে ফেরা ইমরুল কায়েস। এদিন মেজাটাই ছিল অন্যরকম। রানের চাকা সচল রাখার প্রত্যয় নিয়ে শুরু থেকে লড়ে গেছেন এই ওপেনার। চার-ছক্কায় উত্তাল করে দেন মিরপুরের গ্যালারি। ৫৫ বলে ফিফটি তুলে নেন।

কিন্তু অন্য প্রান্তে একের পর এক উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। বলের দিকে তাকিয়ে দ্রুত রান তোলাতে মনোযোগী হয়ে উঠেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু তিনিও বেশি দূর যেতে পারলেন না। ২৬ বলে ২৫ রান করে লেগ স্পিনার আদিল রশিদের শিকার হয়ে ফিরে যান। দুঃসময়ে থাকা মুশফিকুর রহীম ব্যর্থ আরো একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচে। প্রস্তুতি ম্যাচে হাফসেঞ্চুরিটা স্বপ্ন দেখালেও শুক্রবার এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ফিরে গেলেন মাত্র ১২ রানে। সেই আদিল রশিদই তুলে নিলেন উইকেট।

তবে ইমরুল ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটো ওয়ানডেতে বসিয়ে রাখার শোধ যেন নিলেন তিনি! আর তাতেই ঠিক পথে থাকল বাংলাদেশ। এক পর্যায়ে শতরানও তুলে নেন তিনি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি সাজিয়েছেন ১০৫ বলে। যাতে ২ ছক্কা ১১ চারের সমাহার।

অন্য প্রান্তে সাকিব আল হাসানও এদিন নিজেকে উজাড় করে দিলেন। দলের প্রয়োজনে ঠাণ্ডা মাথায় সঙ্গ দিলেন ইমরুলকে। তবে রানরেটের কথা ভুলে যাননি। যার সুফলটাও মিলেছে। ঝড়ো গতিতে খেলে ৩৯ বলে পেয়ে যান হাফসেঞ্চুরি!

পঞ্চম উইকেট জুটিতে ইমরুল-সাকিব যোগ করেন ১১৮ রান। এরই পথ ধরে আরেকটি ইংল্যান্ড বধের গল্প মঞ্চস্থ হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। সাকিব ফেরেছেন ৫৫ বলে ৭৯ রানে। তবে মোসাদ্দেক প্রথম বলেই ফিরে গেলে হারের শঙ্কা ভর করে। সেই শঙ্কাই সত্য হয়েছে। ১৭ রানে ৬ ব্যাটসম্যান উইকেটে আসলেন আর গেলেন!

এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে টাইগার বোলারদের আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল ইংল্যান্ড। ৬৩ রানে ৩ উইকেট শেষ। মনে হচ্ছিল ঢাকার গরমে কাহিল ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা চট জলদি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে ফিরে যাবেন! যেমনটা গিয়েছিলেন জেমস ভিন্স। তাকে ফিরিয়ে মিরপুর উত্তাল করে দেন শফিউল ইসলাম। এই পেসারের বলে তার বলে মিডঅনের উপর দিয়ে বল ভাসিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক হল না। মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে ভিন্স (২০ বলে ১৬ বল) ধরেন সাজঘরের পথ।

তবে আরেক ওপেনার জেসন রয় ছিলেন বেশ সাবলীল। বলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রান করে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে বাদ সাধেন সাকিব আল হাসান। তার স্পিন ঘূর্ণিতে বোকা বনে লংঅফে সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন রয়। তার আগে করে যান ৪০ বলে ৪১। এই উইকেট দিয়ে ঘরের মাঠে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় পঞ্চম স্থানে উঠে আসেন সাকিব। পেছনে ফেলেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি স্পিনার শেন ওয়ার্নকে। দেশের মাঠে ওয়ানডে ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ১৩৬টি। ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত খেলা ওয়ার্নের শিকার ১৩৪ উইকেট। ১৫৪ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন আছেন সাকিবের ঠিক ওপরে। ১৯৩টি উইকেট নিয়ে শীর্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার এক সময়ের নাম্বার ওয়ান পেসার শন পোলক।

সাকিবের এমন কীর্তির পর আরেকটি উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। সাব্বির রহমানের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে কোন রান না করেই সাজঘরে ফিরেন জনি বেয়ারস্টো।

ম্যাচটা এভাবেই হাতের মুঠোয় প্রায় এসে যাচ্ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু এরপরই হয় ক্যাচ মিসের প্রতিযোগিতা। মনে হচ্ছিল হাতে মাখন মেখে ক্যাচ ধরতে গিয়েছিলেন মোশাররফ-মাহমুদউল্লাহরা। বিশেষ করে ভয়ংকর হয়ে ওঠা বেন স্টোকস একাধিক জীবন পেয়েছেন। প্রথমে তাসকিন আহমেদের বলে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ ফেলেন। ঠিক পরের ওভারেই মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে স্টোকসের ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি মোশাররফ। ৬৯ ও ৭১ রানে জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল করলেন না এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। ৪৫ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে এটি তার প্রথম শতরান।

অন্য প্রান্তে অভিষিক্ত বেন ডাকেটও দারুণ সঙ্গ দিয়ে গেছেন তাকে। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ২৬.৩ ওভারে দু’জন জমা করেন ১৫৩ রান। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে শফিউল বোল্ড আউট করে ফেরান ৬০ রান করা ডাকেটকে।

এরপর সেঞ্চুরিয়ান স্টোকসও ফিরেন তিন অংকের ম্যাজিক্যাল স্কোরের দেখা পেয়ে। ১০০ বলে ১০১ রান মাশরাফির বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে হাটা ধরেন সাজঘরের পথে। মঈন আলির (৬) উইকেটটিও দ্রুত তুলে নেন মাশরাফি। এরপর ক্রিস ওকসকে (১৬) রান আউট হয়ে ফিরে যান।

ইনিংসের শেষ বলে অধিনায়ক জস বাটলারকে প্যাভিলিয়নের টিকিট ধরিয়ে দেন সাকিব। তার আগে অবশ্য তার ব্যাট থেকে আসে ৩৮ বলে ৬৩ রানের ঝড়ো ইনিংস। যদিও বাটলার শফিউল ইসলামের বলে আগেই আউট হয়ে ফিরতে পারতেন। কিন্তু ক্যাচ মিসের মহড়ার দিনে তাসকিন বলের নীচে যেতে পারলেন না! তার খেসারতও দিল দল। এরপর ইংলিশ অধিনায়ক পরের তিন বলে দুটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান। শেষদিকে মোসাদ্দেক আর তামিমের ভুল বোঝাবুঝিতে আরেকটি ক্যাচ ড্রপ! তা না হলে তিনশ’র নিচেই আটকে থাকতো ইংল্যান্ড।

বাংলাদেশের হয়ে দুটো করে উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, শফিউল ইসলাম এবং সাকিব আল হাসান।

তবে এই মিরপুরেই এমন যন্ত্রণার ইতি টানার সুযোগ আছে টাইগারদের। রোববার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এই মাঠেই লড়বে দুই দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩০৯/৮ (স্টোকস ১০১, বাটলার ৬৩, ডাকেট ৬০, রয় ৪১; মাশরাফি ২/৫২, শফিউল ২/৫৯, সাকিব ২/৫৯)
বাংলাদেশ: ৪৭.৫ ওভারে ২৮৮/১০ (তামিম ১৭, সাব্বির ১৮, মাহমুদউল্লাহ ২৫, মুশফিক ১২, ইমরুল ১১২, সাকিব ৭৯ ; বল ৫/৫১ রশিদ ৪/৪৯)
ফল: ইংল্যান্ড ২১ রানে জয়ী





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

© 2024 দ্বীপের সাথে ২৪ ঘণ্টা Bholar Sangbad, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।