বৃহস্পতিবার ● ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » খেলা » টোকিও অলিম্পিকে মার্গারিটার হাতে লাল-সবুজ পতাকা
টোকিও অলিম্পিকে মার্গারিটার হাতে লাল-সবুজ পতাকা
ডেস্ক • সোনার মেয়ে মার্গারিটা মামুন। তাকে নিয়ে মনে মনে আক্ষেপের শেষে নেই। ইশ্ মেয়েটি যদি বাংলাদেশের হয়েই খেলতো! রিটার জয়ের আনন্দে আহ্লাদিত সবাই। এরপরও তালুতে জিভ ঠেঁকিয়ে একটিবার হলেও আফসোস করেননি এমন ক্রীড়ামোদীর দেখা মেলাই ভার। একটা সময় ছিল যখন মেয়েকে দেশের হয়েই খেলানোর জন্য ক্রীড়া সংগঠকদের কাছে গিয়েছেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার বাবা আবদুল্লা আল মামুন। কিন্তু তখন আগ্রহ দেখাননি কেউ। আজ সময় পাল্টেছে, পরিস্থিতিও পাল্টেছে। তাই দেরিতে হলেও এতদিন পর সেই আক্ষেপ ঘুচানো যেতে পারে। রিও ২০১৬-তে হয়নি তো কী হয়েছে? টোকিও ২০২০-এর সূচনায় মার্গারিটার হাতেই উড়তে পারে রক্ত দিয়ে কেনা লাল-সবুজের পতাকা! তবে সেজন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে থাকা মার্গারিটার স্বজন, বিশিষ্টজন ও রাজশাহীর ক্রীড়া সংগঠকরা মনে করছেন এমনটাই। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত ২১ আগস্ট তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ইউরোপিয়ান চ্যম্পিয়ানশিপ জেতার দু’দিন পরে গত বছর এই সময়ে তাদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলাম মস্কোর অদূরে। মামুন ভাই কথা দিয়েছেন অলিম্পিকের পরে মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। তখন ‘বাংলার বাঘীনি’র জন্য ফুলের তোড়াটা নিশ্চয়ই আরও অনেক বড় হবে। তার স্ট্যাটাস থেকে খুব সহজেই অনুমান করা যায়, যেভাবেই হোক মার্গারিটাকে দেশে আনার প্রাথমিক উদ্যোগ তিনি নিয়েই ফেলেছিলেন। কিন্তু রিটার বাবা অসুস্থ থাকায় আপাতত তা সম্ভব হয়নি। রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, স্বর্ণকন্যা মার্গারিটা মামুন আমাদের রাজশাহীর মেয়ে। ২০০৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষা ও খেলাধুলায় এই সরকার যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি আন্তরিক। যেহেতু মার্গারিটার দু’দেশেরই নাগরিকত্ব আছে সেহেতু তাকে ফিরিয়ে আনা যেতেই পারে। আর তা করা গেলে আগামী অলিম্পিক আসরে সবার মুখ উজ্জ্বল করে বাংলাদেশের জন্যও গৌরব বয়ে আনতে পারে মার্গারিটা। বাংলার বাঘিনীকে ঘিরে এমনই প্রত্যাশা রাজশাহীর এই ক্রীড়া সংগঠকের। একই মত প্রকাশ করে রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ জামান বলেন, বাবা বাংলাদেশি। সেই সূত্রে মেয়ে মার্গারিটাও বাংলাদেশি। তাকে যদি দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, তা হবে সবার অহংকারের। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকেই প্রথম উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি। মার্গারিটার ফুফাতো ভাই কলেজ শিক্ষক শামসুজ্জোহা বলেন, ‘মামাকে আমি চিনি। অতীতে যা-ই হোক সরকারের পক্ষ থেকে আগ্রহ দেখালে রিটাকে দেশের হয়ে খেলাতে তিনি আপত্তি করবেন না বলেই বিশ্বাস করি। তবে এজন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’ এর আগে ২০০৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ১৩ বছরের কিশোরী মার্গারিটাকে নিয়ে ঢাকায় জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনে ধরনা দিয়েছিলেন বাবা আবদুল্লাহ আল মামুন। তার স্বপ্ন ছিল মেয়ে বাংলাদেশের ঘরোয়া এবং দেশের হয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। কিন্তু সে সময় রিটার ভেতরকার আগুনের আঁচ পায়নি ফেডারেশনের তৎকালীন কমিটির কর্তা-ব্যক্তিরা। ব্রাজিলের রিওতে শেষ হওয়া অলিম্পিক আসরে মায়ের দেশ রাশিয়ার হয়েই ব্যক্তিগত অল-অ্যারাউন্ড ইভেন্টে অংশ নেন মার্গারিটা। রিদমিক জিমন্যাস্টিক ইভেন্টে চোখ ধাঁধানো ক্রীড়া শৈলী দেখিয়ে সোনা জিতে বাজিমাত করেন তিনি। জয়ের পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তার এই জয় রাশিয়া ও বাংলাদেশের জন্য। কারণ তিনি দু’দেশেরই নাগরিক।’ তাই অলিম্পিক অ্যারেনায় রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে অংশ নেওয়া মার্গারিটার শিকড়টা গেঁথে আছে এই বাংলাতেই। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্যপদক জেতেন মার্গারিটা।