সোমবার ● ১৫ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » দেশের ক্রান্তিকালেও পিছপা হবে না বিচার বিভাগ: প্রধান বিচারপতি
দেশের ক্রান্তিকালেও পিছপা হবে না বিচার বিভাগ: প্রধান বিচারপতি
ঢাকা : বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার করেছেন আদালত।ক্রান্তিকালে পিছপা হয়নি বিচার বিভাগ,ভবিষ্যতেও হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সোমবার সকালে প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি।সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতাসহ সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে এই দিনে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিন্তু তৎকালীন সরকার হত্যাকারীদের বিচারের পথ বন্ধ করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি ও খুনিদের পুরস্কৃত করেন। তিনি আরো বলেন, দেশের বিচার বিভাগ এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচারের পথ প্রশস্ত করে। শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাই নয়; জেলহত্যা মামলার জন্য সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী, অষ্টম সংশোধনী এবং ত্রয়োদশ সংশোধনী সুপ্রিম কোর্ট বাতিল ঘোষণা করে। সুপ্রিম কোর্টের দেয়া এসব রায়ই প্রমাণ করে, বিচার বিভাগ দেশের ক্রান্তিলগ্নে কখনই পিছপা হয়নি। যখনই কোন অন্যায় দেখেছে সেখানেই হস্তক্ষেপ করেছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগকে যথাযথ মর্যাদা ও স্বীকৃতি দিতে অনেকেই পিছপা হতেন। নির্বাহী বিভাগ ও জাতীয় সংসদের পাশাপাশি বিচার বিভাগও যে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সেটি প্রকাশ করা আমাদের (বিচারপতিদের) কর্তব্য।এস কে সিনহা বলেন, সিনিয়র বিচারপতিরা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের পথ সুগম হয়েছিল। একজন জেলা জজ রক্তচক্ষুু উপেক্ষা করে নিম্ন আদালতে এই মামলার রায় দিয়েছিলেন। এরপর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি করতে নানা প্রতিকূলতা ছিল। মামলাটি কার্যতালিকায় আনা ও বেঞ্চ গঠন নিয়ে নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটে। এ ধরনের একটি ঘটনা নিয়ে বিচারকরা জাজেজ লাউঞ্জে কনফাইন্ড (বন্দি) ছিলেন। এরপর হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি করে এবং মামলাটি আপিল বিভাগে আসে। এরপর আপিল বিভাগ মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন। আপিল বিভাগের ওই বেঞ্চের একজন বিচারক হিসেবে এই মামলায় অংশ নিতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, জেল জুলুম, ছেলে-মেয়ে, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ছেড়ে এতো আত্মত্যাগের পরও তাকে কিছু বিপথগামী সৈন্য এ রকম হত্যা করতে পারে! যাই হোক, শুধু তাকেই হত্যা করা হলো না, হত্যাকারী যারা তাদেরকে রক্ষার জন্য তৎকালীন সরকার ইনডেমিনিটি অর্ডিনেন্স জারি করেছিলো। এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছিলো। এরপরে এই বিচার বিভাগ-তখনকার বিচার বিভাগকে অনেকে সমালোচনা করে। যে স্বৈরশাসক সরকার ইয়ে (নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা) করেছিলো, আমাদের সিনিয়র জাজেস ছিলেন, তারা কিন্তু পিছপা হননি, এই কালো আইন বাতিল করলেন। সরকার যখন (ইনডেমিনিট)বাতিল করলো, তখন উচ্চ আদালত পর্যন্ত এটা বহাল করলেন।বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ইনডেমিনিট অধ্যাদেশ বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে যাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলো, সেই ঘটনায় বিচারের পথ খুলে গেলো। এখানে খেয়াল করবেন, সাক্ষী ছিলেন না, কতো কষ্ট করে আমাদের একজন জেলা জজ মরহুম কাজী গোলাম রসুল এই তখনকার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রায় দিলেন। এরপরে হাইকোর্টে ডেথ কনফারমেশনের জন্য প্রতিকূলতা ছিলো।এটা আমি আর বলতে চাচ্ছি না। এটার ডেট ফিক্সড করা, বেঞ্চ গঠন করা এটা একটা নাটক ছিলো। একটা ঘটনা নিয়ে জাজেস লাউঞ্জে কনফাইন ছিলাম, আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি উনি এদিকে কর্ণপাত করেননি। উনি জাজেস লাউঞ্জের পেছনের দরজা দিয়ে আমাদের ব্রাদার জাজেস একজন একজন করে মতামত নিচ্ছেন। কেউ রাজি ছিলেন, কেউ রাজি ছিলেন না, এটা নাটকের ইয়ে ছিলো। বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা এ ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। এরপর বিচার সম্পন্ন হলো। আমি সৌভাগ্যবান, বিচার প্রক্রিয়ার আমি একজন মেম্বার ছিলাম।রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগ রাষ্ট্রীয় যে একটা অঙ্গ হিসেবে অনেকে স্বীকৃতি দিতে পিছপা হতেন। আমরা কোনো দিনই এটা প্রকাশ করিনি। আমি মনে করি, প্রশাসন, জাতীয় সংসদ তার পাশাপাশি বিচার বিভাগ যে একটা অঙ্গ সেটাকে প্রকাশ করার আমরা কি করেছি সেটা আমাদের প্রকাশ করা কর্তব্য।আজকে আপনারা খেয়াল করবেন, বিচার বিভাগ শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা না, আমরা জেল হত্যা মামলারও রায় দিয়েছি। ৮ম, ৫ম, ১৩তম সংশোধনী বাতিল করে রায় দিয়েছি। শেষ পযন্ত ১৬তম সংশোধনী যেটা বিচারাধীন আছে সেটা নিয়ে কথা বলবো না। রক্তদান কর্মসূচি শেষে বৃক্ষরোপন করেন প্রধান বিচারপতি। রক্তদান কর্মসূচিতে সহায়তা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন, হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার সৈয়দ আবু দিলজার হোসেন, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) সাব্বির ফয়েজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ,হাইকোর্ট বিভাগ ও রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।