সোমবার ● ৮ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » রাজনীতি » বিএনপি নতুন কমিটিতে নেই উচ্ছ্বাস,পদ ছাড়ছেন নোমানও
বিএনপি নতুন কমিটিতে নেই উচ্ছ্বাস,পদ ছাড়ছেন নোমানও
ঢাকা : বিএনপির কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলেও নেতাদের মধ্যে নেই তেমন কোনো উচ্ছ্বাস। রোববার (৭ আগস্ট) সকাল থেকে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দু-চারজন ছাড়া দেখা যায়নি শীর্ষ কোনো নেতাকে। অথচ রুহুল কবির রিজভী যখন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হন, তখন দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর ছিল দলীয় কার্যালয়। রোববার দলীয় কার্যালয় ছিল একেবারেই ফাকা। কিন্তু সোমবার এসে সেই চিত্র কিছুটা পাল্টেছে ।সোমবার সকাল বিএনপির মাহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সন্মেলনে সাংবাদিক সঙ্গে কথা বলেন। সকাল থেকেই তুণমূল নেতাকর্মীদের ভীড় দেখা যায় । অনেকের সাথে কোলাকুলি করতে দেখা যায় ।এমনকি নতুন নেতাকে ফুল দিয়ে শুভ্চ্ছো জানাতে দেখা যায়। এদিকে,দু-এক দিনের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদ ছাড়ার ঘোষণা দিতে পারেন আবদুল্লাহ আল নোমান। শুধু পদ ছাড়া নয়, বিএনপির রাজনীতি থেকেও তিনি সরে দাঁড়াতে পারেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা ইঙ্গিত দিয়েছেন।বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রের ভাষ্য, নোমান এবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি এই পদ পেতে পারেন বলে দলে জোরালো আলোচনাও ছিল। কিন্তু তাঁকে ফের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এতে তিনি মনঃক্ষুণ� হয়েছেন।জানতে চাইলে রোববার রাতে নোমান বলেন, তিনি ভাইস চেয়ারম্যান পদে আর থাকতে চান না। দু-এক দিনের মধ্যে অবস্থান জানাবেন।বিএনপির রাজনীতি ছাড়বেন কি না�এমন প্রশ্নে নোমান বলেন, দল থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য আমার ওপর চাপ আছে। আমার নেতা-কর্মীরা এই চাপ দিচ্ছেন। তবে পদ আমি ছাড়ছি। আর দল ছাড়ছি কি না, তা দু-এক দিনের মধ্যে জানানো হবে।বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখ হিসেবে জায়গা পেয়েছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাঁরা দুজনই বৃহত্তর চট্টগ্রামের বাসিন্দা। নোমানও চট্টগ্রামের বাসিন্দা।এর আগে ২০০৯ সালেও নোমান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হতে পারেন বলে দলে আলোচনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, পরপর দুবার প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে নোমান বেশ আশাহত হয়েছেন।গত শনিবার বিএনপির নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পরপরই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। একই দিন নিজের নাম প্রত্যাহার করার আবেদন জানিয়ে চিঠি দেন সহপ্রচার সম্পাদকের পদ পাওয়া শামীমুর রহমান।কমিটিতে প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে বিএনপির নেতাদের একটি বড় অংশ হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তাঁদের অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার চিন্তা করছেন। নোমানের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির এই নেতা প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরাও প্রচ- হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাঁদের অনেকে মনে করেন, নোমানের উচিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে না থাকা। শুভাকাঙ্খীদের অনেকে তাঁকে দল ছাড়ার জন্যও চাপ দিচ্ছেন। চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, চট্টগ্রামের প্রায় বড় সব নেতা নোমান ভাইয়ের হাতে গড়া। আজ অনেকেই কেন্দ্রীয় বড় পদ পেয়েছেন। অথচ তাঁকে (নোমান) পরপর দুবার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাই আমরা মনে করি, এই দলে থেকে সম্মান নষ্ট করার আর কোনো প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে,কমিটি ঘোষণার আগেও দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেলেও কমিটি ঘোষণার পরের দিনের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৫৯৪ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির মাত্র ৮ জনকে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে দেখা গেছে। এ ঘটনা হতাশ করেছে গণমাধ্যম কর্মীদের। সরেজমিনে থেকে এমন চিত্র দেখা গেছে।শনিবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৫০২ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি কমিটি ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে ঘোষণা করা হয়, ১৯ সদস্যের জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল।গত ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর তিন দফায় মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, কোষাধ্যক্ষ, সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মোট ৪২ জনের নাম ঘোষণা হয়। কাউন্সিলের ১০ দিন পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব, রুহুল কবির রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মিজানুর রহমান সিনহাকে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আর কাউন্সিলের আগে চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যথাক্রমে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নির্বাচিত হন।ওই সময় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। রুহুল কবির রিজভী তখন নিয়মিত কার্যালয়ে আসতেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কাঙ্খিত পদ পাওয়ার লক্ষ্যে তদবির করতে নেতাকর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই দলীয় কার্যালয়ে আসতেন। শুধু ঢাকা নয়, সমগ্র দেশ থেকেই আসতেন তারা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর একেবারে বিপরীত চিত্র।রোববার সকালে দলীয় কার্যালয়ে আসেন দলের তিন সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন ও বেলাল আহমেদ। তাদেরকে ঘিরে কিছু নেতাকর্মীরও আগমন ঘটে। তারা দাপ্তরিক কিছু কাজকর্মও করেন। এরপর আসেন নির্বাহী সদস্য খালেদা ইয়াসমিন। পরবর্তীতে কার্যালয়ে আসেন নির্বাহী কমিটির নতুন তিন সদস্য ছাত্রদলের সাবেক নেতা ওমর ফারুক সাফিন, আবু বকর সিদ্দিক ও ওবায়দুল হক নাসির। সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীনও আসেন। তবে বিকেলের আগেই তারা সবাই কার্যালয় ত্যাগ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির ইতিহাসে বিশাল কমিটি ঘোষিত হলেও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় অনেকেই ক্ষুব্ধ। পদ পাওয়ার পরও নেতারা যে সন্তুষ্ট না, দলীয় কার্যালয়ে না আসা সেটারই বহিঃপ্রকাশ। ঘোষিত কমিটিতে অনেকের পদোন্নতি হয়েছে, অনেকে আবার একইপদে বহাল রয়েছেন। তবে অবনমনও (ডিমোশন) হয়েছে অনেকের। সদ্য ঘোষিত কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক পদ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার চেয়ে শনিবারই মহাসচিব বরাবর চিঠি দেন বিগত কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম। তার অভিযোগ, ঘোষিত কমিটিতে তার প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে।এদিকে, পদপ্রাপ্তির সাড়ে ৪ ঘণ্টার মাথায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। অবশ্য এজন্য চেয়ারপারসন বরাবর লেখা পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত ও শারীরিক কারণ দেখান তিনি। বিদায়ী কমিটিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন ফালু। জানতে চাইলে নয়াপল্টনে নিয়মিত আসা বিএনপির এক কর্মী বলেন, কমিটির পরের দিনই সবাইকে নয়াপল্টনে আসতে হবে, এমনতো কোনো নিয়ম নাই। আস্তে আস্তে হয়তো নেতারা আসবেন। তবে কমিটি ঘোষণার পর দলীয় কার্যালয়ে কোনো উচ্ছ্বাস নেই বলে স্বীকার করেন তিনি। তিনি এও মনে করেন, এখানে না আসলেও নেতারা হয়তো রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যাবেন। সকল ক্ষমতা তো সেখানেই।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি কার্যালয়ের একজন স্টাফ বলেন, কমিটি ঘোষণার পর নেতারা দলীয় কার্যালয়ে আসেননি, এটাকে সেভাবে বড় করে দেখার কিছু নেই। সকাল থেকে শীর্ষ কোনো নেতাও তো কার্যালয়ে আসেননি। তাহলে অন্য নেতারা কাদেরকে উদ্দেশ্য করে এখানে আসবেন? তিনি আরো বলেন, রুহুল কবির রিজভী স্যার বিএনপি কার্যালয়ের প্রাণ। যখন তিনি ছিলেন তখন দলীয় কার্যালয়ে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এখন তিনিও আসতে পারছেন না, নেতাকর্মীদেরও দেখা মিলছে না।গত ২৫ জুলাই রাজধানীর পল্লবী থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলায় রুহুল কবির রিজভীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে প্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তারপর থেকে আর দলীয় কার্যালয়ে আসতে পারছেন না রিজভী।এদিকে, বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হওয়ায় পরের দিন নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের উৎসবমুখর পরিবেশ থাকবে, এমনটা ভেবে সকাল থেকেই প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সংবাদ কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও কোনো নেতাকর্মী না আসায় দুপুরের মধ্যেই তাদেরকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ৫০২ সদস্যবিশিষ্ট বিএনপির পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হলেও কাক্ষিত পদ না পাওয়ায় অনেকেই সংক্ষুব্ধ। দু�একজন ইতোমধ্যে কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহার চেয়ে আবেদনও করেছেন। পদত্যাগ চেয়ে আবেদন করতে পারেন আরো কয়েকজন। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় যারা পদত্যাগ করছেন না তারা আর সেভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। ঘোষিত কমিটিতে অনেকের পদোন্নতি হয়েছে, অনেকে আবার একইপদে বহাল রয়েছেন। তবে অবনমনও (ডিমোশন) হয়েছে অনেকের। তবে অবনমনের জন্য বিএনপির বিগত আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তা, দলে বিতর্কিত ভূমিকা ও কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে দায়ী করা হচ্ছে।ঘোষিত কমিটিতে নূন্যতম ৭ জনের অবনমন ঘটেছে। তারা হলেন : বেগম সারোয়ারি রহমান, নাদিম মোস্তফা, নাজিমউদ্দিন আলম, ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন, আব্দুল লতিফ জনি, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম ও আসাদুল করিম শাহীন।সারোয়ারি রহমান বিদায়ী স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার কারণে সাংগঠনিক কাজে অংশ নিতে না পারায় তাকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে রাখা হয়েছে। বিদায়ী কমিটিতে নাদিম মোস্তফা বিশেষ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকলেও নতুন কমিটিতে তাকে নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে। তিনি ভাইস চেয়ারম্যান পদের আলোচনায় ছিলেন।নাজিমউদ্দিন আলম বিদায়ী কমিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। নতুন কমিটিতে তাকে নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিএনপির সরকার বিরোধী বিগত আন্দোলনে চরম নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নতুন কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক কিংবা আরো বড় পদের প্রত্যাশী ছিলেন।জানতে চাইলে নাজিম উদ্দিন আলম বলেন, আমি দলের জন্য কাজ করেছি, এখনো করছি, ভবিষ্যতেও করব। কমিটিতে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আমাকে যেখানে উপযুক্ত মনে করেছেন সেখানেই রেখেছেন। এ নিয়ে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমাকে নির্বাহী সদস্য পদ দিয়ে ম্যাডাম খুশি থাকলে আমিও খুশি। আমি শুধু বিএনপির জন্য কাজ করে যেতে চাই।ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন বিদায়ী কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাকেও নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। জানা যায়, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার ভাল সম্পর্ক থাকলেও বিগত কমিটির পর থেকেই সে সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ত হতে থাকে। এক পর্যায়ে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এছাড়া দলে তার বিতর্কিত ভূমিকা রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিএনপিপন্থী ডাক্তারদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতৃত্ব নিয়ে সংগঠনটির বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সঙ্গে ডা. দোলনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ডাক্তারদের বিভক্ত করে তিনি সংগঠনটির নেতৃত্বে যেতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনাটিকে ভালভাবে নেয়নি বিএনপি। এরপর থেকেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে ডা. দোলনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। নতুন কমিটিতে তার অবনমনের ক্ষেত্রে এটিও অন্যতম কারণ বলে মনে করেন কেউ কেউ। তাছাড়া বিএনপিতে ডা. জাহিদের একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানও রয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা থেকে নতুন কমিটিতে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। কিন্তু তারপরেও নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদের প্রত্যাশী ছিলেন ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন।বিদায়ী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি নতুন কমিটির নির্বাহী সদস্য হয়েছেন। দপ্তর সম্পাদকের আলোচনায় তার নাম শোনা গেছে। তিনি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনীতির শিকার বলে মত অনেকের। বিশেষ করে তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ একজনের রোষানলের শিকার বলে জানা যায়। তবে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম বিগত কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। নতুন কমিটিতে তাকে সহ-প্রচার সম্পাদক ছিলেন। তিনি প্রচার সম্পাদকের আলোচনায় ছিলেন।তবে সদ্য ঘোষিত কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক পদ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার চেয়েছেন শামীমুর রহমান শামীম। জানতে চাইলে হতাশার সুরে তিনি বলেন, রাজনীতি করতে গিয়ে আমি পাঁচ মাস কারাগারে ছিলাম। অসংখ্য মামলায় জর্জরিত। আন্দোলনের সময় দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু নতুন কমিটিতে আমাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। আগে আমি সহ-দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। এখন আমাকে ডিমোশন দিয়ে ৩ নং সহ-প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। আমার প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে। সেজন্য কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহার চেয়ে মহাসচিব বরাবর চিঠি দিয়েছি। বিদায়ী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীনকে নতুন কমিটিতে সহ-প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। তিনি পূর্বের পদে বহাল থাকা কিংবা কোনো সম্পাদকীয় পদের প্রত্যাশী ছিলেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়।এছাড়া বিদায়ী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান ও মিজানুর রহমান মিনুকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে নেয়া হয়েছে। তারা ভাইস চেয়ারম্যান পদের আলোচনায় ছিলেন। বিদায়ী কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব আব্দুস সালামকেও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যানের আলোচনায় তার নামও জোরোশোরে উচ্চারিত হচ্ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, এই নেতারা বিএনপির সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনে চরম নিষ্ক্রিয়তার পরিচয় দিয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, শুধু এরা নয়, বিএনপির বিদায়ী কমিটির কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। কিন্তু দেখা গেল, নতুন কমিটিতে তারা ভাল পদে গেছেন। সেদিক থেকে বলতে গেলে এদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।এই সাতজনের অবনমনের জন্য কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও দায়ী করছেন বিএনপির আরেক নেতা। তার মতে, কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত এই সাতজন তাদের আক্রোশের শিকার হয়েছেন। বলতে গেলে, আন্দোলনে বিগত কমিটির অধিকাংশ নেতাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দিলেও ঢাকার রাজপথে কোনো নেতাকেই দেখা যায়নি। তাহলে শুধু এরা কেন বলি হবেন। এদিকে, পদপ্রাপ্তির সাড়ে ৪ ঘণ্টার মাথায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। বিদায়ী কমিটিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবর লেখা এ পদত্যাগপত্রটি শনিবার (৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।পদত্যাগপত্রে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করায় খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফালু লেখেন, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও শারীরিক কারণে আমার পক্ষে ওইপদে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন মোসাদ্দেক আলী ফালু।