সোমবার ● ১১ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » রাজনীতি » খালেদার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা:পরবর্তী শুনানি ১০ আগস্ট
খালেদার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা:পরবর্তী শুনানি ১০ আগস্ট
ঢাকা : বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি ফের পিছিয়ে আগামী ১০ আগস্ট ধার্য করা হয়েছে।ঢাকার বিশেষ জজ-৯ এর বিচারক আমিনুল ইসলামের আদালতে সোমবার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য ছিল। এ মামলায় আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন জানান খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার আইনজীবী এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, আবেদন মঞ্জুর করে পরবর্তী দিন ধার্য করে আদেশ দেয় আদালত।আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। সোমবার এ নিয়ে দুই পক্ষের তুমুল বাক বিতস্ডার মধ্যে ঢাকার নবম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আমিনুল ইসলাম বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদাসহ মামলার ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১০ অগাস্ট নতুন তারিখ রেখেছেন।খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতে �নিরাপত্তাহীনতা� ও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানোর আবেদন করেন। খালেদার পক্ষে সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাক খান সময়ের আবেদনের শুনানিতে বলেন, নাইকো দুর্নীতি মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে তাদের একটি লিভ টু আপিল ৩১ জুলাই শুনবে আপিল বিভাগ। আর খালেদা জিয়া যেহেতু আদালতে আসতে পারেননি, সেহেতু শুনানি পেছানো হোক।বিচারক বলেন, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টি রাষ্ট্র দেখবে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে। তার নিরাপত্তাহীনতার যুক্তি দেখিয়ে শুনানি পেছানো যাবে না।কিন্তু যেহেতু বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে, সেহেতু এখন অভিযোগ গঠন করা হলে তালগোল পাকিয়ে যাবে মন্তব্য করে বিচারক দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের মতামত জানতে চান।এ বিষয়ে কাজল নিরুত্তর থাকলেও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন রেজাক খান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের মত নেওয়ার কোনো সুযোগ এক্ষেত্রে নেই। কোনো বিষয় উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় থাকলে নিম্ন আদালত আইন ও সংবিধান অনুযায়ী তা মানতে বাধ্য।এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাক বিতন্ডায় আদালতে শোরগোলের সৃষ্টি হয়।এক পর্যায়ে বিচারক সময় দিতে না চাইলে খালেদার অপর আইনজীবী জাকির হোসেন ভূইয়া বিচারকের প্রতি অনাস্থার কথা বলেন। বিচারক প্রথমে খালেদার সময়ের আবেদন খারিজ করে দিলেও পরে পুনঃবিবেচনার আবেদন করা হলে তা মঞ্জুর করে আদালত।অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১০ অগাস্ট নতুন তারিখ ঠিক করে দেন তিনি। এর আগে ৭ জুন বিচারক এম আমিনুল ইসলাম ছুটিতে থাকায় ১১ জুলাই অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন রেখেছিলেন ভারপ্রাপ্ত বিচারক জালাল উদ্দিন আহম্মদ।প্রায় সাত বছর আটকে থাকার পর গত বছর জুনে মামলাটি পুনরায় সচল হয়। এরপর গতবছরের ২৮ ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ও ১২ এপ্রিল আরও তিন দফা এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছায়। সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এই মামলা করে দুদক। পরের বছর ৫ মে খালেদাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতে অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে �তুলে দেওয়ার� মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।মামলা হওয়ার পর খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে গেলে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই দুর্নীতির এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাই কোর্ট, সেই সঙ্গে দেওয়া হয় রুল।মামলা দায়ের কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। ২০০৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এ মামলায় জামিন পান খালেদা। প্রায় সাত বছর পর গত বছরের শুরুতে রুল নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নেয় দুদক। খালেদার আবেদনে রুলের ওপর শুনানি করে গত বছর ১৮ জুন রায় দেয় হাই কোর্ট।খালেদার করা আবেদন খারিজ করে মামলার ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হয় ওই রায়ে। সেই সঙ্গে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত বছর ৩০ নভেম্বর জজ আদালতে খালেদা আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন এবং তা মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ২৮ ডিসেম্বর প্রথম দিন রেখেছিল আদালত।অন্যদিকে হাই কোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর গত বছর নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল দায়ের করেন খালেদা জিয়া, যা রোববার শুনানির দিন ধার্যের জন্য উঠলে ৩১ জুলাই শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার বাকি আসামিরা হলেন- চার দলীয় জোট সরকারের আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তখনকার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া (সিলভার সেলিম) এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ ।