রবিবার ● ১০ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে নির্বিচারে চলছে জাটকা নিধন
মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে নির্বিচারে চলছে জাটকা নিধন
এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন: দুয়ারে কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখ। বাঙ্গালীয়ানার পহেলা বৈশাখ মানেই পান্থা ইলিশ। কিন্তুু সাগরে ইলিশের আকাল। তাতে কি! ইলিশ জালে না ভিড়লেও ঝাঁকে ঝাঁকে মিলছে জাটকা ইলিশ। সরকারিভাবে জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে বেপরোয়াভাবে চলছে জাটকা নিধন। এসুযোগ কাজে লাগিয়ে জেলেদের অগ্রিম টাকা দিয়ে অতি মুনাফা লোভি ব্যবসায়ীরাও ব্যাপকহারে মজুদ করছে জাটকা ইলিশ।
সূত্রে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখকে টার্গেট করে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া পাড়ের মৎস্য ব্যবসায়ীরা ব্যাপক হারে মজুদ করছে জাটকা ইলিশ। নদীর তীরে ব্যবসায়ীদের কাছে জাটকার চাহিদা থাকায় জেলেরাও ব্যস্ত জাটকা নিধনে। সরকারের পক্ষ থেকে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা নিধনের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অতিরিক্ত মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা জেলেদের দাদন দিয়ে জাটকা সংগ্রহ করছে। জাটকা সংরক্ষণ সময়ে জেলেদের সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়ার কর্মসূচি থাকলেও উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের ভাগ্যে তা জুটেনি এখনো। এছাড়া জাটকা সংরক্ষণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও এখনো মেঘনা ও তেঁতুলিয়া পাশ্ববর্তী দৃশ্যমান এলাকায় কোন অভিযান হয়নি।একারণে অন্যান্য মাছের চেয়ে জাটকাতে বেশি ঝুঁকছে জেলেরা। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র মতে, স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর ও কোস্টগার্ড সমন্বয়ে টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সদস্য সচিব করে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সরেজমিনে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে গিয়ে দেখা যায়, কূলে ভিড়েই জেলেরা ফিশিং বোট থেকে প্রকাশ্যে খালাস করছে জাটকা ইলিশ। তাতেই দৌড়ঝাঁপ ব্যবসায়ীদের। চড়া দামে ক্রয় করে দ্রুত প্যাকেজিংয়ে দিয়ে দেয়। এভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই বিক্রি ও সংরক্ষণ চলছে জাটকা ইলিশ।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, পহেলা নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস সময়ে জাটকা ইলিশ গুলো পর্যাপ্ত ইলিশে পরিণত হয়। তাই সরকারীভাবে এই ৮ মাস সময়ের মধ্যে বিক্রয়, মজুদ ও পরিবহন আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের শ্রম কারাদ-, পাচঁ হাজার টাকা জরিমানা ও উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান রয়েছে। এছাড়া যে সময়টিতে জেলেরা জাটকা আহরণ থেকে বিরত থাকবে সে সময়ে মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিজন জেলেকে মাসে ৪০ কেজি চাউল দেয়ার কর্মসূচী রয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামন জাটকা নিধনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সেখানে যথাযথ মনিটরিং করা হয়। কিন্তুু মেঘনা, তেঁতুলিয়া বিশাল তীর। স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে এই সীমানায় নিয়মিত তদারকি সহজ নয়। এ কারণে সাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে জেলেরা চুরি করে জাটকা তীরে নিয়ে আসছে। ইতিপূর্বে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে অভিযান চালিয়ে ২৯৬ টি ভিন্নি জাল, ৭০ হাজার কিলোমিটার জাল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে জাল পাতা স্থাপনা ১৯৮টি খুটি, ড্রাম ও শতাধিক মশারী জাল বিনষ্ট করা হচ্ছে। কিন্তুু জেলেরা সাগরে জাটকা না ধরলেও স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য মাছ ধরা পড়ে তাদের জালে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এই মূহুর্তে মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগরে জাল ফেললেই জাটকা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না। কিন্তুু বঙ্গোপসাগর সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, কোস্টগার্ড প্রতিনিয়তই জাটকা নিধনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে। চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচার কোস্টগার্ড প্যাটি অফিসার কামরুজ্জামান বলেন, আমরা এখনও টহলে রয়েছি। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ মিটার জাল ও ২৫ টি ভিন্নি জাল বিনষ্ট করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।