মঙ্গলবার ● ৫ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » খেলা » ভোলায় ক্রীড়াঙ্গঁনের অনন্য নাম পবিত্র মজুমদার
ভোলায় ক্রীড়াঙ্গঁনের অনন্য নাম পবিত্র মজুমদার
মোকাম্মেল হক মিলন: ছোট বেলা থেকে ফুটবল খেলার প্রতি প্রচন্ড ঝোক ছিল, পবিত্রের। মাঠের পাশে বসে পলকহীন দৃৃষ্টিতে বড়দের খেলা দেখতেন এবং ভাবতেন কবে একজন সম্ভাবনাময় ফুটবল খেলোয়াড় হবেন। বড় ধরনের কোন খেলার কথা শুনলেই বই খাতা রেখে ছুটে যেতেন খেলার মাঠে। সেই আগ্রহ থেকেই প্রকৃত খেলোয়াড় আর রেফারীর মর্যাদা কুড়িয়ে যাচ্ছেন পবিত্র। তেমনি ভোলা জেলার খেলার জগতে কিছু সুনামখ্যাত খেলোয়াড় আছেন যাদের অবদান ভোলার ক্রীড়াঙ্গঁনে অপরিসীম। যাদেরকে ভোলার দর্শক কোন প্রচার ছাড়াই মনে রাখবে। দিতে হবে তাদের কে সম্মান। উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন খেলোয়াড়দেরকে যোগ্যতা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন করা হয় এবং জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়। বর্তমানে সরকার তথা জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলোও খেলোয়াড় এবং রেফারীদের সম্মানের সাথে মূল্যায়ন করিতেছে। তাদেরকে সম্মান দেখালে ভবিষ্যৎত প্রজন্মে অনেক খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে। এজন্য বেশী বেশী বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক লীগ/টুর্নামেন্ট আয়োজন আবশ্যক। এ বিশ্বাস ক্রীড়ামোদী দর্শকদের। পবিত্র কুমার মজুমদার ভোলা জেলা ক্রীড়াঙ্গঁনে এক অনন্য নাম ভোলা জেলার শহরতলী বাপ্তা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। পিতা ডাঃ নিবারন চন্দ্র মজুমদার খ্যাতনামা পল্লী চিকিৎসক। ৫ ভাইয়ের মধ্যে পবিত্র কুমার মজুমদার তৃতীয়। বড় ভাই প্রতিষ্ঠিত পল্লী চিকিৎসক। দ্বিতীয় ভাই ভোলায় সিনিয়র আইনজীবি। মাঠ এর পাশে বসে যাদের খেলা দেখে তার বড় মাপের খেলোয়ার হওয়ার নেশায় পড়েন তারা হলেন মোঃ হোসেন স্যার, গজনবী মিয়া, আবু তাহের আবু, ছোট আবু, ছিদ্দিক মিয়া, ছালে আহাম্মদ, নিমাই, হাবিবুর রহমান, শামস উদ্দিন মিয়া, রতন চৌধুরী মাকছুদ মিয়া মিল্টন মিয়া আরো অনেকের। দেখতে দেখতে একদিন খেলার মাঠে পবিত্রের পদচারন আরম্ভ হল। স্কুল জীবন সুমামের সাথে খেলা শেষ করে কলেজ জীবনে এসে জিলা ক্রীড়াঙ্গঁনের পূর্নতা লাভ করে। ভোলা মহকুমা থাকাকালীন দলের নিয়মিত খেলোয়াড়, পরে জেলা দলেরও নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন পবিত্র মজুমদার। ১৯৮২ সালে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ফুটবললীগ খেলতে গিয়ে বাম পায়ের হাঁটুতে মারাতœক আঘাত পাইয়া ঢাকা পঙ্গুঁ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করান। কিন্তুু আঘাত প্রাপ্ত পা ভাল না হওয়ায় ভারতের কোলকাতায় দীর্ঘ ৬ মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ্য হয়ে আবার খেলার মাঠে নিজেকে সপেঁ দেন। কিন্তুু বিধিবাম ১৯৮৫ সালে বরহান উদ্দিনের খায়ের হাটে মোবিলাইজেশনের ট্রেনিং ক্যাম্পের সমাপনি অনুষ্ঠানের ভোলা জেলা পুলিশ দলের পক্ষে খেলতে গিয়ে ডান পায়ের টিবিয়া হাড় ভেঙ্গেঁ যায়। আবার পঙ্গুঁ হাসপাতালে আরম্ভ হয় কঠিন চিকিৎসা।
ভাল হয়ে আবার খেলতে আরম্ভ করেন। দূর্ভোগ যেন পিছু ছাড়লনা। ২০০৩ সালে জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত ফুটবল লীগে খেলা পরিচালনা করতে গিয়ে পিছলে পড়ে ডান পায়ের হাঁটুতে আঘাত পাইয়া আবার ডান পায়ের হাঁটুর অস্ত্রোপচার করান। পরপর ৩ বার আঘাতের পরও ঝিমিয়ে পড়েন নি পবিত্র। আগুন কখনও চাপা থাকেনা। আবার জ্বলে উঠলেন। ১৯৮৭ সাল ফিফা ঋওঋঅ কোকা-কোলা যুব ফুটবল প্রশিক্ষকের প্রশিক্ষন পার্ট ৩ এর কোচিং সুনামের সাথে সমাপ্ত করেন। ইহা ছাড়া ১৯৮৮ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন রেফারীজ বোর্ডের অধীনে ৩য় শ্রেনীর রেফারী কোর্স এবং ১৯৯৮ এ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন রেফারীজ বোর্ডের অধীনে ২য় শ্রেনীর রেফারীর কোর্স সম্মানের সাথে সমাপ্ত করেন এবং ভোলা ও ইহার বাহিরের জেলা গুলোতে সম্মানের সাথে খেলা পরিচালনা করে আসিতেছেন। এ ছাড়া ১৯৯০ সন থেকে কয়েকধাপ এর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ও জেলা রেফারী সমিতির সহ-সভাপতি। ১৯৮৬ সন থেকে ভোলা জেলা মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব এর ফুটবল সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ভোলা মর্নিং ক্লাবের দীর্ঘ ৬ বছর যাবত সম্পাদক ও বাপ্তা পল্লী উন্নয়ন জন কল্যান সমিতির রেজি: ২৭৪৫ সম্পাদক ও বর্তমানে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করিতেছেন। ইহা ছাড়া ছোট খাট বহুবিধ সংস্থার সাথে জড়িত আছেন পবিত্র মজুমদার। তিনি বলেন রেফারীর দায়িত্ব পালন করতে অনেক সময় বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়। কারন অধুনা ফুটবলে এমন সব নূতন আইন সংযুক্ত হয়েছে যাহা খেলোয়াড় বা ক্লাব কর্মকর্তাগন জানেন না। ফলে মাঠে অনেক সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। খেলার নিয়ম কানুনগুলো তাদের জানা থাকলে মাঠের বিশৃঙ্খলা অনেকাংশে কমে যেত। খেলার মানকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে তিনি বলেন প্রাইমারী লেবেল থেকে বেশী বেশী লীগ/টুর্নামেন্টের আয়োজন হলে সেখান থেকেই খেলোয়াড় তৈরী হওয়া সম্ভব। একজন খেলোয়াড় বা ক্রীড়াবিদ খুব সহজেই বিশ্বে একটি দেশের পরিচিতি এনে দিতে পারে। তিনি আরও বলেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় একটি মামলার রায় প্রদান করেন অনেক সময় নিয়ে কিন্তুু একজন রেফারী তার বাশীঁটি কেন বাজালেন তাৎক্ষনিকভাবে তার সিদ্ধান্ত দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে কিছুটা ভূলভ্রান্তি হওয়া স্বাভাবিক। পবিত্র কুমার আরও বলেন নূতন প্রজন্মকে নিয়মিত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে খেলোয়াড় তৈরী, ফুটবল খেলা সহ অন্যান্য খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মহিলা ক্রীড়াবিদ তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল পর্যায়ের খেলাগুলি জেলা ক্রীড়া সংস্থার রেফারী ও স্কুলের শরীরচর্চা শিক্ষকদের সমন্বয়ে পরিচালিত হলে ফুটবলের নূতন যে নিয়মগুলি সংযুক্ত হয় শরীরচর্চা শিক্ষকগণ তাহা অবহিত হবেন। তাই তাদেরকেও ফুটবল খেলা সহ সকল খেলাধুলার নিয়ম কানুন সম্পর্কে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।