মঙ্গলবার ● ১৭ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » মূল নকশা এলেই সংসদ এলাকা থেকে সরানো হবে জিয়ার কবর: মোশাররফ
মূল নকশা এলেই সংসদ এলাকা থেকে সরানো হবে জিয়ার কবর: মোশাররফ
ঢাকা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে লুই আই কান প্রণীত সংসদ ভবনের মূল নকশা আনা হলেই জিয়ার কবরসহ নকশাবিহীন স্থাপনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সোমবার বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এক প্রশ্নের জবাবে একথা জানান মন্ত্রী।ফজিলাতুন্নেসা তার প্রশ্নে জানতে চান, লুই আই কানের নকশায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন একটি অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন। এই সংসদ ভবন চত্বরে আটটি কবর গড়ে তোলা হয়েছে। লুই আই কানের মূল নকশা পরিবর্তন করে সংসদ চত্বরে কবর স্থাপনের বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অভিমত কি এবং মূল নকশা অনুযায়ী সংসদ ভবনকে টিকিয়ে রাখতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না।গৃহায়নমন্ত্রী জানান, সরকারি নির্দেশনায় বিভিন্ন সময়ে সংসদ ভবন চত্বরে কবর গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় লুই আই কান প্রণীত সকল নকশা পেনসিলভিনিয়া ইউনিভার্সিটি ইউএসএ, আর্কিটেকচারাল আর্কাইভ থেকে সংগ্রহের কাজ প্রক্রিয়াধীন। মর্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে লুই আই কান প্রণীত মূল নকশা আনা হলে তার আলোকে সংসদ ভবনসহ আশেপাশের এলাকার সকল স্থাপনার সুষ্ঠু সংরক্ষণ এবং সমন্বয় করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সরকারের আমলে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় রাষ্ট্রীয়ভাবে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয়। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরসহ এরকম আটটি কবর সংসদ ভবন এলাকায় রয়েছে। এরা হলেন- প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ও আতাউর রহমান খান, প্রাক্তন মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়া, মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার তমিজউদ্দীন খান। এছাড়াও শেরেবাংলা নগরে লুই কানের নকশাবহির্ভূত আরো সাতটি স্থাপনা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি), স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরের চারদিকে থাকা চারটি প্রবেশপথের শুরু বা শেষ প্রান্তে রয়েছে ঝুলন্ত সেতু, সম্মেলন কেন্দ্র ও মসজিদসহ চারটি স্থাপনা।এদিকে সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ মারা গেলে তার ইচ্ছা অনুযায়ী সংসদ ভবনের জাতীয় কবরস্থানে দাফন করার জন্য জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কাছে অনুমতি চেয়ছিল পরিবার। কিন্তু তাতে সম্মতি দেয়া হয়নি। এছাড়াও জাতীয় সংসদ ভবন সীমানার পূর্ব প্রান্তে আসাদগেটের উল্টো দিকের পেট্রলপাম্পটি বর্তমানে তুলে দেয়া হয়েছে। এটি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তখনকার মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের ভাইকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। মূল নকশা অনুযায়ী সংসদ ভবনটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা? প্রশ্নকর্তার এমন প্রশ্নের জবাবে গৃহায়ন মন্ত্রী আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে লুই আই কান প্রণীত মূল নকশা আনা হলে তার আলোকে সংসদ ভবনসহ ওই সংলগ্ন এলাকার সব স্থাপনার সুষ্ঠু সংরক্ষণ এবং সমন্বয় করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।অন্যদিকে, সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর সরানো হবে এমন সংবাদ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তার দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি সরানোর চক্রান্ত �জনগণ রুখে দেবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যেভাবে গণতন্ত্র নির্বাসনে দিয়েছে, একইভাবে সংসদ এলাকার জিয়া উদ্যান (চন্দ্রিমা উদ্যান) থেকে জিয়াউর রহমানের মাজার সরানোরও ষড়যন্ত্র করছে।আহমেদ আজম খান বলেন, সরকার এখন বেসামাল হয়ে গেছে, কী করবে, কী বলবে ঠিক পাচ্ছে না। সরকার জিয়ার মাজার সরিয়ে কোথায় নিয়ে যেতে চায়? সরকার গণতন্ত্রকে যেভাবে নির্বাসনে দিয়েছে মহানায়ককেও (জিয়া) সেইভাবে নির্বাসনে পাঠাতে চায়।তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা ছাড়ার আতঙ্কে ভুগছে। এ আতঙ্ক থেকে বের হয়ে এসে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করতে হবে।ক্ষমতাসীনরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার সমাধি সরানোর চেষ্টা করলে তা সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করা হবে বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম)।হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শহীদ জিয়ার দৃষ্টি নন্দন এ সমাধিটি জনগণের হৃদয়ে স্থান দখল করে আছে। তাই এই মাজার সরানোর মতো দুঃসাহস দেখাবেন না। যদি করেন তাহলে সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার চায় কারাগারে বিএনপি নেতারা ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করুক। এই কারণে একের পর এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠাচ্ছে।