শনিবার ● ১ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে মাদ্রাসার টাকা আত্মসাৎ করেন সুপার আবু জাফর: পর্ব ৩
ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে মাদ্রাসার টাকা আত্মসাৎ করেন সুপার আবু জাফর: পর্ব ৩
বিশেষ প্রতিনিধি: ভোলার লালমোহনের হাজির হাট টিএ দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওঃ আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী আমানতের টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসা না এসেই হাজিরা খাতায় একসাথে একাধিক স্বাক্ষর করণ, জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষার ফরম ফিলাপের অতিরিক্ত ফি আদায়, মোট অংকের টাকার বিনিময় ভুয়া পরীক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা প্রদান, মাদ্রাসার মেরামত ও ক্ষুদ্র মেরামতের নামে প্রতিষ্ঠানের আত্মসাৎ, জমিয়াতুল মুদারেসিনের টাকা আত্মসাৎ ও নারী কেলেঙ্কারীসহ ব্যাপক অনিয়ন ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিবাভক ও উপজেলার শিক্ষক মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাজির হাট টিএ দাখিল মাদ্রাসার বিতর্কিত সুপার সাবেক শিবির নেতা মাওঃ আবু জাফর নিয়মিত মাদ্রাসায় না এসে প্রায় সময় প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল কাজ ও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে উপজেলা সদরে এসে অন্যপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য, বিভিন্ন মাদ্রাসার এমপিও ভুক্ত করার দালালিসহ ব্যাক্তিগত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন অধিকাংশ সময়। মাঝে মধ্যে মাদ্রাসায় এসে হাজিরা খাতায় এক সাথে একধিক স্বাক্ষর করেন সুপার। আবার কোন সময় মাদ্রাসায় আসলেও ১০ টার পরে এসে প্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ার আগেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে চলেন যান আবু জাফর। চর্তুর সুপার কারণে অকারণে চাপ ও দুব্যবহারের কারণে সব সময় ভিতস্ত রাখেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীদের।
জানা গেছে, বিগত ২০১৮ সালে জেডিসি পরীক্ষায় সরকার কর্তৃক নির্ধারীত ফরম ফিলাপের ফি ১৭৫ হলেও তিনি মনগড়া অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা করে ফি আদায় করেছেন। এছাড়া বিগত ২০১৯ সালের দাখিল পরীক্ষার সরকার কর্তৃক নির্ধারীত ফরম ফিলাপ ফি সাধারণ গ্রুপ ১৪৭৫ ও বিজ্ঞান গ্রুপ ১৬৪৫ টাকা হলে তিনি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ফ্রি ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা ফি আদায় করেছেন সুপার আবু জাফর এমটাই অভিযোগ করেন একধিক অভিবাভক।
আরো জানা গেছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অনিয়মিত ও বহিরাগত শিক্ষার্থীদের তার মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রী দেখিয়ে জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় ভুয়া পরীক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেন আবু জাফর।
সুত্র আরো জানায়, মাদ্রাসার ভবন মেরামত ও ক্ষুদ্্র মেরামতের জন্য প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে শিক্ষা অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে টাকা উঠিয়ে নামে মাত্র কাজ দেখিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ২০০২ সালে সুপার আবু জাফর তার মাদ্রাসার তৎকালীন সভাপতির দায়েত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাবাশ চন্দ্র মন্ডলের স্বাক্ষর জাল করে মাদ্রাসার ফান্ডে থাকা স্থায়ী আমানতের এফডিআর এর ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিজেই আত্মসাৎ করেন। পরে বিষয়টি জানাযানি হলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ক্ষমা চেয়ে ভবিষৎতে আর এমন অপরাধ করবে না মুচলেকা দিয়ে পুনায়রায় এফডিআর ফান্ডে আত্মসাৎ করা টাকা পুনরায় জমা রাখতে বাধ্য হয় সুপার আবু জাফর।
চর্তুর সুপার আবু জাফর যে দল ক্ষমতায় আসেন তাদের কাঁধে ভর করে একের পর এক অনিয়ম করে যাচ্ছেন। তার দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের ফলে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছেন এমটাই অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী।
অভিযুক্ত হাজির হাট টিএ দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওঃ আবু জাফর মাঈনুদ্দীনের সাথে তার ব্যবহিত মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন রিসিভড না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফরিদ তালুকদারের সেল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। চলবে…
-এফএইচ