রবিবার ● ১ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় » তজুমদ্দিনে গৃহবধুকে শালিশে জুতাপেটা, অবশেষে বিষপান
তজুমদ্দিনে গৃহবধুকে শালিশে জুতাপেটা, অবশেষে বিষপান
ডেস্ক: ভোলার তজুমদ্দিনে স্বামীর মিথ্যা অপবাদের দায়ে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা বেগম সাজুর নেতৃত্বে শালিশের মধ্যে জনসম্মুখে সাথী (২০) নামের এক গৃহবধুকে জুতাপেটা করেছে। সে অপমান সহ্য করতে না পেরেগৃহবধু বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে এমনঅভিযোগ করে তার পরিবারের।
শনিবার উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের মাওলানা কান্দি গ্রামের হানিফ দালাল বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে গৃহবধু সাথী বেগম ভোলা সদর হাসপাতালের মহিলা মেডিসেন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সাথীর বড় ভাই মনু মিয়া ও মা বিবি ফাতেমা অভিযোগ করে বলেন, গত চার বছর আগে সাথী বেগমের সাথে একই এলাকার রবিউল হকের ছেলে মো. রিয়াজের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী রিয়াজ সাথীকে কারনে অকারনে সন্দেহ করত।
সর্বশেষ গত ২৪ মার্চ শনিবার রাতে সাথী বেগম টয়লেটে গেলে এই সুজোগে রিয়াজের চাচাতো ভাই ফরিদ তাদের ঘরে ঢুকে। সাথী বেগম ঘরে ঢুকে ফরিদকে দেখতে পেয়ে ডাক চিৎকার দেয়।
এসময় আশাপাশের লোকজন আসলে একই বাড়ির হানিফ দালাল ফরিদকে সাথীর ঘরে ঢোকার কারনে রাগারাগি করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরে সাথীর স্বামী রিয়াজ নদী থেকে এসে এঘটনা শুনতে পেয়ে পর দিন সকালে স্ত্রী সাথীকে নিয়ে থানায় মামলা করতে যায়। কিন্তু ওই দিন থানায় মিটিং থাকায় ওসি ফারুক আহমেদ তাদেরকে পরে আসতে বলে। পরবর্তীতে ঘটনাটি তজুমদ্দিন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা বেগম সাজু থানায় ফোন করে মামলা না নেওয়ার জন্য বলে এবয় বিষয়টি তিনি মিমাংশা করে দিবেন বলে আশ্বাস দেয়। এরই মধ্যে এঘটনা নিয়ে সাথীর স্বামী রিয়াজ কয়েক দফায় তাকে মারধরও করেছে বলে অভিযোগ করেন সাথীর পরিবার।
এ ঘটনার মিমাংশার জন্য শনিবার বিকেল ৪টায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্থানীয় হানিফ দালাল বাড়িতে সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজ মেম্বার, হানিফ দালাল ও মাওলানা বাড়ির জসিম উদ্দিনসহ স্থানীয়ভাবে শালিশে বসেন। প্রায় দুই ঘন্টা শালিশ বৈঠকের পর শালিশদারদের রায় অনুযায়ী সাথী বেগমকে ২০ঘা জুতাপেটা করার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক শালিশে উপস্থিত প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের সামনে স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য প্রার্থী রেহানা বেগম তাকে ১২ঘা জুতাপেটা করে। এবং শালিশদার সাবাই তার স্বামীর ঘরে তাকে উঠিয়ে দিয়ে যায়। পরবর্তীতে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাথী বেগম এ অপমান সইতে না পেরে বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বিষপান করার পর প্রাথমে তাকে তজুমদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে আসলে অবস্থা অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে তাকে ভোলা সদর পাঠানো হয়।
এব্যাপারে সাথী বেগমের স্বামী রিয়াজ বলেন, তাকে জুতাপেটা করা হয়নি। শালিশদাররা তাকে চড় থাপ্পর দিয়ে আমার ঘরে উঠিয়ে দিয়ে গেছে। এরপর হয়তো মা তাকে রাগ করায় সে রাত ৭টায় দিকে বিষপান করে।
এব্যাপারে তজুমদ্দিন উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা বেগম সাজু অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, সাথীর স্বামী রিয়াজ শালিশের মধ্যে সাথীকে জুতাপেটা না করলে তাকে রাখবেনা বলায় জুতাপেটা করা হয়েছে। এসময় আমি জুতাপেটা করতে নিষেধ করেছি। এছাড়াও রিয়াজের মা আনোয়ারা বেগম ফরিদকে পরিকল্পিতভাবে সাথীর ঘরে ঢুকিয়েছে বলে শালিশে ফরিদ স্বিকার করেছে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শালিশে প্রাথমে গৃহবধুকে চর থাপ্পর দেয়ার পর স্বামী পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে জুতাপেটা করা হয়েছে। এছাড়া শালিশের বিরুদ্ধে কেউ থানায় অফিযোগ করলে আমরা তা গ্রহন করবো।
-পিপি/এফএইচ