

সোমবার ● ২১ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » বিনোদন » নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই !
নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই !
ডেস্ক: বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই। সোমবার (২১ আগস্ট ) বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে হার্ট অ্যাটাকে হলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন) তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো চলচ্চিত্র অঙ্গনে।
নায়করাজ রাজ্জাক বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। মাঝে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তার জীবন প্রদীপ নিভে যায়।
রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের (বর্তমান ভারতের) কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে রাজ্জাক যখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র, তখন স্বরসতী পূজা চলাকালীন মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য তার গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন নায়ক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা নাটক ‘বিদ্রোহী’তে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়করাজের অভিনয়ে সম্পৃক্ততা।
তিনি ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) পাড়ি জমান। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগড় লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক।
পরবর্তীতে ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরী স্টেশন’সহ আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক। এরপরে ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে আত্মপ্রকাশ করেন। প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বাংলা চলচ্চিত্রের একটি ইতিহাস হয়ে রইলেন নায়করাজ। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। তার দুই পুত্র বাপ্পারাজ ও সম্রাটও চলচ্চিত্র অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত।
চিত্রনায়ক রাজ্জাক প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয় করে। এরপর আরও চারবার তিনি জাতীয় সম্মাননা পান। ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কারও পেয়েছেন অসংখ্যবার।
এক নজরে নায়ক আবদুর রাজ্জাক
নাম: আবদুর রাজ্জাক। |
উপাধি: নায়করাজ (উপাধি দিয়েছিলেন চিত্রালি সম্পাদক আহমেদ জামান চৌধুরী) |
জন্ম: ২৩ জানুয়ারি, ১৯৪২ |
জন্মস্থান: নাকতলা, দক্ষিণ কলকাতা, ভারত |
জাতীয়তা: বাংলাদেশি |
বাবা: আকবর হোসেন |
মা: নিসারুননেছা |
স্ত্রী: খাইরুন্নেছা (ভালোবেসে লক্ষ্মী বলে ডাকতেন) |
সন্তান: বাপ্পারাজ (রেজাউল করিম), নাসরিন পাশা শম্পা, রওশন হোসেন বাপ্পি, আফরিন আলম ময়না, খালিদ হোসেইন সম্রাট |
পেশা: অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক |
অভিনয়ের শুরু: কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন স্বরসতী পূজায় মঞ্চ নাটকে। গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। প্রথম অভিনীত নাটক ‘বিদ্রোহী’ |
সিনেমায় প্রবেশ: কলেজজীবনে ‘রতন লাল বাঙালি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। এ ছাড়া কলকাতায় ‘পঙ্কতিলক’ ও ‘শিলালিপি’ নামে আরও দুটি সিনেমায় অভিনয় করেন |
বাংলাদেশে আগমন: ১৯৬৪ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার কারণে পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন |
ঢালিউডে নায়ক হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্র: জহির রায়হানের বেহুলা |
প্রথম নায়িকা: সুচন্দা |
জুটি: কবরী |
নায়ক হিসেবে শেষ ছবি: ১৯৯০ সাল পর্যন্ত নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। শেষ ছবি মালামতি। নায়িকা ছিলেন নূতন |
নায়ক চরিত্রের বাইরে অভিনয়: ১৯৯৫ সাল থেকে |
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: এতটুকু আশা, নীল আকাশের নিচে, জীবন থেকে নেয়া, নাচের পুতুল, পিচঢালা পথ, আবির্ভাব, দ্বীপ নেভে নাই, টাকা আনা পাই, রংবাজ, আলোর মিছিল, অশিক্ষিত, ছুটির ঘণ্টা, চন্দ্রনাথ, শুভদা, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত |
প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র: অনন্ত প্রেম (১৯৭৭), নায়িকা চরিত্রে ছিলেন ববিতা |
সর্বশেষ পরিচালিত চরিত্র: আয়না কাহিনি (২০১৪) |
সর্বশেষ চলচ্চিত্র: কার্তুজ (২০১৪) |
ছবির সংখ্যা: বাংলা ও উর্দু মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক |
পুরস্কার: পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (সেরা অভিনেতা), মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৪ (আজীবন সম্মাননা), বাচচাস পুরস্কার ২০০৯ (আজীবন সম্মাননা) |