মঙ্গলবার ● ১৩ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » বৃষ্টিতে পাহাড়ে বিপর্যয়, নিহত ২৩
বৃষ্টিতে পাহাড়ে বিপর্যয়, নিহত ২৩
ডেস্ক: টানা বর্ষণের ফলে পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধসে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে নারী-শিশুসহ অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চট্টগ্রামে ৪, রাঙামাটিতে ১৩ জন ও বান্দরবানে ৬ জন রয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠনো তথ্যে পাহাড় বিপর্যয়ের চিত্র তুল ধরা হলো,
রাঙামাটি
টানা বর্ষণে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শহরে ৯ জন ও কাপ্তাই উপজেলায় তিনজন রয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৯টি লাশ উদ্ধার করে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বলে জানান হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার।
নিহতরা হলেন- রুমা আক্তার, নুরি আক্তার, জোহরা বেগম, সোনালি চাকমা, অমিত চাকমা, আয়ুস মল্লিক, লিটন মল্লিক, চুমকি দাস। অপরজনের নাম জানা যায়নি।
জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের কারিগরপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে অনুচিং মারমা (৩০) ও নিকি মারমাসহ তিনজন মারা গেছেন বলে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছায়া মং মারমা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এদিকে ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জগদীশ চাকমা জানান, এই ইউনিয়নে পাহাড় ধসে মৃত একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার থেকে রাঙামাটিতে টানা বর্ষণ শুরু হয়। এতে রাঙামাটি শহর এবং আশেপাশের এলাকায় পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে ধসে পড়ে।
ধসে পড়া মাটির নিচে এখনো অনেকে চাপা পড়ে আছে। ফলে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাটির নিচে চাপা পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে বৃষ্টি কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বান্দরবান
বান্দরবানে প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে পৃথক ঘটনায় মা-মেয়েসহ অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার ভোরে শহরের কালাঘাটা ও লেমু ঝিড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, শহরের লেমু ঝিড়ি জেলেপাড়া এলাকার আবদুল আজিজের স্ত্রী কামরুন্নাহার বেগম (৪০), তার মেয়ে সুখিয়া বেগম (৮), কালাঘাটা এলাকার রেবা ত্রিপুরা (২২), লেমু ঝিড়ি আগাপাড়া এলাকার তিন শিশু- শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৫)।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানায়, টানা বর্ষণের ফলে রাত সাড়ে তিনটার দিকে শহরের লেমু ঝিড়ি জেলেপাড়া এলাকায় পাহাড়ের মাটি ধসে ঘরের ওপর পড়লে মা কামরুন্নাহার বেগম ও মেয়ে সুখিয়া বেগম মারা যায়। এ সময় কামরুন্নাহারের স্বামী আবদুল আজিজও গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রায় একই সময়ে লেমু ঝিড়ি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে লাল মোহন বড়ুয়া নামে এক ব্যক্তির ঘরের ওপর পড়লে তার তিন শিশু সন্তান- মিতু, শুভ ও লতার মৃত্যু হয়।
এ ছাড়া রাতে প্রবল বর্ষণের সময় শহরের কালাঘাটা এলাকার কবরস্থানের পাশে ঘরের ওপর মাটি চাপা পড়লে রেবা ত্রিপুরা নামে বান্দরবান সরকারি কলেজের ছাত্র নিহত হন।
এ সময় আরো চার কলেজ ছাত্র আহত হন। এরা হলেন, বীর বাহাদুর ত্রিপুরা, সূর্য চাকমা ও প্রশেন ত্রিপুরা। পরে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, আহতরা সবাই ওই এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। নিহত রেবা ত্রিপুরা রাতে তাদের কাছে বেড়াতে এসেছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী স্টেশন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ঘোষ জানান, খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। তবে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে পড়া মাটির গভীরতা বেশি হওয়ায় মা-মেয়ের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মাটি খুঁড়ে তাদের লাশ বের করার চেষ্টা চলছে।
জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
এদিকে, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সাংঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাহাড়ি ঢলে জেলা শহর, লামা ও আলীকদম উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার দুই সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সড়কের ওপর পাহাড় ধসে পড়ায় এবং পানি জমে যাওয়ায় বান্দরবানের থানছি, রুমা, লামা ও আলীকদম উপজেলার সড়ক যোগযোগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বান্দরবানের সঙ্গে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
দুর্গতদের অনেকে পরিবার নিয়ে উঁচু স্থান ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম
পাহাড় ধসে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় তিন শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দু’জন।
সোমবার রাতে উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, ছনবুনিয়া উপজাতিপাড়ার গৃহবধূ মোকাইং কেয়াং (৫০), একই পরিবারের দুই শিশু কেউচা কেয়াং (১০), মেমাউ কেয়াং (১৩) ও ধোপাছড়ি ইউনিয়নে আসগর আলীর শিশুকন্যা মাহিয়া।
ধোপাছড়ি ইউনিয়নে পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ইউছুপ চৌধুরী জানান, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আসগর আলীর কাঁচা ঘরের ওপর মাটি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় তার শিশুকন্যা মাহিয়া মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।
এ ছাড়া ছনবুনিয়া উপজাতিপাড়ায় একটি ঘরের ওপর পাহাড় ধসে একই পরিবারের দুই শিশু কেউচা কেয়াং, মেমাউ কেয়াং (১৩) ও গৃহবধূ মোকাইং কেয়াং নিহত হন।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় ওই পরিবারের সানুউ কেয়াং (২১) ও বেলাউ কেয়াং (২৮) নামের আরো দু’জন আহত হয়েছেন। তাদের বান্দরবান হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।