

শুক্রবার ● ৩১ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » বিনোদন » মৃত্যুর আগে শেষ যে কথাগুলো বলে গেছেন মিজু আহমেদ
মৃত্যুর আগে শেষ যে কথাগুলো বলে গেছেন মিজু আহমেদ
ডেস্ক: শক্তিশালী খল অভিনেতা মিজু আহমেদের প্রকৃত নাম মিজানুর রহমান। স্ত্রী পারভীন আহমেদ, দুই মেয়ে কেয়া ও মৌ এবং একমাত্র ছোট সন্তান হারসাতকে নিয়েই ছিল তার সুখি পরিবার। অবসরে ক্রিকেট খেলা দেখতে পছন্দ করতেন তিনি। নিয়মিত পাঁচওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন এই অভিনেতা। সারাক্ষন সবাইকে হাঁসি ঠাট্টায় মাতিয়ে রাখতেন মিজু আহমেদ
এদিকে মিজু আহমেদের আকস্মিক মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গন সহ প্রায় সবখানেই নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া । ফেসবুকের দেয়াল জুড়ে তারকাসহ হাজারো ভক্তের শোকের স্ট্যাটাস আর স্মৃতিচারন ।
মিজু আহমেদের সহকর্মিদের স্মৃতিচারনে উঠে আশা মৃত্যুর আগে শেষ যে কথাগুলো বলে গেছেন মিজু আহমেদ সেই সব কথা আজ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য:
সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল থেকে শাহাদাৎ হোসেন লিটনের ‘অহংকার’ সিনেমার শুটিং করছিলেন। দুপুরের দিকে তিনি শুটিং শেষ করেন। এটিই ছিল তার জীবনের শেষ শুটিং। শুটিং শেষে পরিচালক যখন তাকে জানালেন তার অংশের শুটিং শেষ তখন তিনি বললেন, ‘দেখ কোনো কিছু বাকি আছে কি না? বাকি থাকলে এখনই করে নাও। আমাকে কিন্তু আর পাবা না।’ এটিই ছিল পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন লিটনের সঙ্গে সদ্যপ্রয়াত চলচ্চিত্র অভিনেতা মিজু আহমেদের শেষ কথা।
সোমবার রাতে বিএফডিসিতে এ সিনেমার শুটিং চলাকালে এমনটিই জানান লিটন। লিটন বলেন, ‘মিজু ভাইয়ের সঙ্গে অনেক সিনেমায় কাজ করেছি। আমার প্রায় সব সিনেমায় তিনি কাজ করেছেন। আজ শুটিং শেষে আমি তাকে বলি- ভাই, দুপুরের খাবার খাবেন, নাকি বাসায় গিয়ে খাবেন? তখন তিনি মজা করেই বললেন, তুমিতো দেখছি কোন দেশের লোকের মত বলছ। এখন খাবেন নাকি অন্য সময় এসে খাবেন। কথাগুলো এখনো কানে বাজে।’
এদিকে একই সিনেমায় সোমবার শুটিং করেছেন খলনায়ক কমল পাটকের। মিজু আহমেদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে দিয়ে তিনি অঝোরে কাঁদলেন। বললেন, ‘মিজু ভাই আমাকে খুব পছন্দ করতেন ছোট ভাই হিসেবে। শুটিং করে আসরের নামাজ পড়েছেন শিল্পী সমিতিতে। এটিই হয়ত তার জীবনের শেষ নামাজ। শুটিংয়ের পরে আমি তাকে বলি- ভাই, চা খান। তখন তিনি বলেন, যাচ্ছি যখন দাও চা-টা খাওয়াই দাও। আমি তাকে চা দিলে তিনি চা খেয়েছেন। এটা তার সঙ্গে আমার শেষ কথা ও শেষ দেখা। পরে আমি শুটিং করে সন্ধ্যায় বাসায় গেলাম মাত্র। এর পরই ফোন আসে মিজু ভাই এয়ারপোর্টে মারা গেছে। আমি শুনেই তাড়াতাড়ি এফডিসিতে চলে আসি। আমাকে খুব ভালোবাসতেন। চলচ্চিত্রে আমি ৩৯ বছর কাজ করছি। মিজু ভাইতো আর আসবেন না। জীবনে বেঁচে থাকলে অনেক সিনেমা করতে পারব। কিন্তু মিজু আহমেদকে ইন্ডাস্ট্রিতে আর পাব না।’
শিল্পী সমিতির বয় রাকিব জানালেন তার প্রিয় স্যারের কথা। আবেগাপ্লুত হয়ে রাকিব বলেন, ‘আমি দুই বছর ধরে এ সমিতিতে কাজ করি। স্যার সব সময় ওই সোফাটায় বসতেন এবং ওখানে বসেই নামাজ পড়তেন। আজও তিনি ওখানে বসেছেন। ওখানেই ভাত খেয়েছেন। আজ এসে আমাকে বলেন, রাকিব আমার স্যান্ডেল জোড়া দে। আমি তাকে স্যান্ডেল দিলে তিনি ওজু করে নামাজ পড়েন। এখনো সোফার ভাঁজ যায়নি।’
কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে থেমে যান তিনি। এর পরে আবার বলেন, ‘স্যার বেশিরভাগ সময় আমার সঙ্গে খেলা নিয়ে আলাপ করতেন। স্যার অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।’
চলচ্চিত্র পরিচালক ইলিয়াস ভূইয়া জানান, গতমাসে শুরু হওয়া মানুষ কেন অমানুষ ছবির শ্যুটিংয়ে অংশ নিতে ঢাকার কমলাপুর থেকে সপ্নপুরী যাচ্ছিলেন মিজু আহমেদ। আহমেদ ইলিয়াস ভূইয়া নিজেই ওই ছবি পরিচালনা করছেন। ভুইয়া জানান, আগে থেকে মোটেও অসুস্থ্য ছিলেননা। হাঁসি খুশি মেজাজেই উঠেছিলেন ট্রেনে । রাত ৮টার পরে ট্রেনটি বিমানবন্দর রেলস্টেশনে পৌঁছলে আকস্মিক মিজু আহমেদ বুকে ব্যাথা অনুভব করেন। পরে ট্রেন থামার পর কাছের একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মিজু আহমেদ মারা গেছেন।
অভিনেতা মিশা শওদাগার বলেন, আমি প্রথমে কাজী হায়াত ভাইয়ের কাছে খবর পাই যে মিজু আহমেদ ভাই স্ট্রোক করেছেন। আমরা পথিমধ্যে মৃত্যুর খবর পাই।
গত সোমবার দিনাজপুরের স্বপ্নপুরীতে নতুন একটি ছবির শুটিং এর জন্য ট্রেনে রওয়ানা দেন এই অভিনেতা । বিমানবন্দর স্টেশনের নিকট ট্রেন পৌঁছলে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। জানা গেছে, ট্রেনেই মিজু আহমেদ হার্ট অ্যাটাক হয় তার। এসময় ট্রেনে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার পালস পরীক্ষা করে তার হার্টবিট পাননি।