সোমবার ● ১৩ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » মনপুরায় কর্মকর্তার যোগসাজশে বন কেটে বসতি নির্মাণ, হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা পর্ব-১
মনপুরায় কর্মকর্তার যোগসাজশে বন কেটে বসতি নির্মাণ, হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা পর্ব-১
ফরহাদ হোসেন, চর নিজাম থেকে ফিরে: ভোলার মনপুরার চর নিজামে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রায় ৬০ একর সরকারি জমির বন কেটে বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। নদী ভাঙনের ফলে বসত-বাড়ি বিলীন হওয়া পরিবারগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাই খুঁজছেন ওই চরে। এ সুযোগে কাজে লাগিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন অসাধু কিছু বন কর্মকর্তা। এমনকি ‘টাকা খেয়ে’ অনেককে মৌখিকভাবে জমি বন্দোবস্ত দিয়েছেন বনের বিট অফিসার আক্তারুজ্জামান।
স্থানীয়রা জানান, চর নিজামের দায়িত্বে থাকা বিট অফিসার আক্তারুজ্জামান দালাল চক্রের মাধ্যমে সংরক্ষিত বনের গাছ-পালা কাটিয়ে সেখানে টাকার বিনিময়ে অনেক ভূমিহীন পরিবারকে জমি বন্দোবস্ত দেন। তবে কেউ কেউ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও জমি বন্দোবস্ত পাননি। তাদের জমি দেওয়ার কথা বলে ঘোরাচ্ছেন বিট অফিসার। এ অবস্থায় যারা জমি পাননি তারা তাদের টাকা ফেরত চাইলে বিট কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন।
সরেজমিনে চর নিজামে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মনপুরার চর নিজামের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী তারেক, মো. শহীদ, আনিছ, রাসেল, রজব আলী ও সাদ্দামের মাধ্যমে বনের জমি দখল দেওয়ার নামে ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকা করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আক্তারুজ্জামান।
আক্তারুজ্জামানের অর্থ বাণিজ্যের কারণে ওই চরের প্রায় ৬০ একর সরকারি জমির উপর ঘনবসতি গড়ে উঠেছে। আবার অনেক ভূমিহীন টাকা দিয়েও বসত-ভিটা না পেয়ে উল্টো বন বিভাগের মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী মো. মঞ্জু ফরাজী অভিযোগ করেন, ‘নদী ভাঙনের কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘর করে থাকার জন্যে জমি দিবে বলে আমার ও আমার বড় ভাই জসিম ফরাজীর কাছ থেকে দুই কিস্তিতে বনরক্ষী শহিদ, আনিছ ও তারেকের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা নেয় বিট অফিসার আক্তারুজ্জামান। টাকা নেওয়ার পর এখন জমি না দিয়ে উল্টো আমাদেরকে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়েছে।’
একই চরের ভুক্তভোগী আংকুরা বেগম বলেন, ‘আমার আগের বাসস্থান নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ায় আমি অন্যান্য ভূমিহীনদের মত কয়েক কিস্তিতে ৩০ হাজার টাকা দিলে আমাদের জায়গা দেখিয়ে দেয় বন বিভাগের লোকজন। ঘর তোলার পর আরো ৩০ হাজার টাকা দাবি করে বন প্রহরীরা। টাকা না দেওয়ায় আমার স্বামী ও ছেলেকে গাছকাটা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।’
একই রকম অভিযোগ করেন, চরের বাসিন্দা খোকন। তার কাছ থেকে ২২ হাজার, মো. রিপন ৪৪ হাজার, আকলিমা বেগম ৩৫ হাজার, রানু বিবি ১৪ হাজার, দুলাল ১৩ হাজার, বিনু বেগম ৩০ হাজার, মো. জামাল ৪৮ হাজার, বাচ্ছু ২০ হাজার, মো.হাফেজ ৪৫ হাজার, হাসনা বেগম ১৬ হাজার, জাহেদা ৪০ হাজার, আয়েশা ১৬ হাজার, বিবি কুলসুম ২০ হাজার, মোস্তফা ৫০ হাজার, সাহেনুর ১৭ হাজার, ইয়ানুর ২৮ হাজার, কামাল ৭০ হাজার, রিয়াজ ২০ হাজার, মালেক ২০ হাজার, জসিম ফরাজী ২৫ হাজার, মোবারক ৮ হাজার, হাবিব উল্যাহ ৩০ হাজার, সিরাজ ২৬ হাজার, মো.বাচ্ছু ৪ হাজার, মনোয়ারা ১২ হাজার, মিন্জু বেগম ২৫ হাজার, মো. ইউসুফ ৩৫ হাজার, মো. সুমনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা তার দালাল চক্রের মাধ্যেমে বন বিভাগের কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা ।
এ ঘটনায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগীরা বিচার চেয়ে পরিবেশ ও বনউপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তিনি জেলা ডিএফওকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে নির্দেশ দেন।
তবে অভিযুক্ত বিট অফিসার আক্তারুজ্জামান অর্থ বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি বনের গাছ কেটে বসত-বাড়ি নির্মাণের দায়ে কিছু লোকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আরো কিছু মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
অর্থ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় ।’
এ ব্যাপারে ভোলা অঞ্চলের ডেপুটি বন কর্মকর্তা মো. রুহল আমিন বলেন, ‘যারা বন কেটে ঘর তুলেছে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে। ভূমিহীদের সাথে বন বিভাগের কর্মকর্তার অর্থ বাণিজ্যের বিষয়ে যে অভিযোগ এসেছে সেগুলো আমরা তদন্ত করব।’
-বিএস