শুক্রবার ● ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » পাঠকের মতামত » একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না, জানি কিন্তু মানি না
একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না, জানি কিন্তু মানি না
মো.হুমায়ুন কবীর: একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না এ কথাটি কিন্তু আমরা সবাই জানি। শুধু জানিই না, কাছের বা আশপাশের মানুষদেরও উপদেশ দিয়ে থাকি যেনো যেকোনো দুর্ঘটনা তারা এড়িয়ে চলেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে গিয়ে নিজেরাই তা অনেকে মানি না।
যেমন সড়ক দুর্ঘটনার কথা কে না জানে? কি কি কারণে এটি হয় তাও সবার জানা। এ দুর্ঘটনার ফলাফলও সবারই জানা আছে। এতে অনেকের জীবন যায়। আবার অনেকে আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এসব জানার পরও প্রতিনিয়তই এ দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। সিগন্যাল না দিলে রাস্তা পাড় হওয়া ঠিক না, চলন্ত গাড়িতে উঠার চেষ্টা না বা গাড়ি থেকে নামা ঠিক না, গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী উঠা ঠিক না। এগুলো অবশ্যই মেনে চলা উচিত। এসবই আমরা জানি কিন্তু ক’জন তা মানি?
আমি এসব মানার চেষ্টা করি। কখনো চলন্ত গাড়িতে উঠি না, সিগন্যাল না দিলে রাস্তা পাড় হই না। তারপরও সম্প্রতি নিজেই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হলাম। অথচ সেখানে আমার বিন্দুমাত্র দোষ ছিলো না। আমি যেই গাড়িতে ছিলাম তার সামনে দিয়েই আরেক ভদ্র লোক রাস্তা পাড় হচ্ছিল। তাকে বাঁচাতে আমাদের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে লেগে গেলো। আর এতে আমরা যারা গাড়িতে বসা ছিলাম তারা কমবেশি সবাই আহত হলাম। এসময় নিজের মাথায় হাত দিয়ে যদি কেউ দেখে তার মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে কার না খারাপ লাগবে। কিন্তু আমার অতোটা খারাপ লাগেনি এই ভেবে যে লোকটা ভুল করলেও এ যাত্রায় বেঁচে গেলো। একটা মানুষের জীবনের সাথে শুধু সে নিজেই জড়িত থাকেন না। থাকে গোটা একটা পরিবার।
অনেকেই বলতে পারেন একটু সড়ক দুর্ঘটনায় পরে নিজের ঢোল নিজে পিটাইতেছে। হুম পিটাইতেছি, কারণ আমাদের দেশে প্রবণতা আছে সড়ক দুর্ঘটনা হলেই তার জন্যে আমরা চালকদের দায়ী করি। এ কথা শুনে আবার এটা মনে করবেন না যে, আমি চালকদের সাফাই গাইছি। আমি যেই দুর্ঘটনায় পড়লাম তাতে চালকের যে দোষ ছিল না তা কিন্তু নয়। তার উচিত ছিলো নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে গাড়ি চালানো। কিন্তু যে চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে হঠাৎ দৌড় দিয়ে রাস্তা পাড় হতে চাইলো তারও কি উচিৎ ছিলো না দেখে বুঝে রাস্তা পাড় হওয়া?
দুর্ঘটনায় কারো হাত থাকে না বা কেউ ইচ্ছে করে দুর্ঘটনায় পড়ে না। এটা হয় আমাদের অজ্ঞতা আর অসচেতনতার কারণে। কেবল সচেতনতা বাড়ালেই অনেক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়। তাই এক্ষেত্রে সবার সচেতন হওয়াটা জরুরি।
যেমন সামনে ঈদুল আযহা। আমারতো মনে পড়ে না এমন কোনো ঈদ নেই যেই ঈদের আগে বা পড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এসব দুর্ঘটনায় শুধু প্রাণহানির ঘটনাই ঘটেনি, অনেকে আবার আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। আর এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ উল্লেখ করা হয়েছে যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা, অসচেতন হয়ে রাস্তা পারাপার হওয়াকে। এক্ষেত্রে আমরা কাকে দায়ী করবো, যাত্রী নাকি চালককে? আমি কিন্তু এ ক্ষেত্রে যাত্রীকে এগিয়ে রাখবো। স্বার্থ লোভীরা স্বার্থের জন্য যা খুশি তাই করতে পারে। কিন্তু আমি কেনো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনে উঠবো। এ প্রশ্নটা যতদিন না আমাদের মনে আসবে ততদিন মনে হয় না সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে পারবো। এ সমস্যার সমাধান কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্যে সচেতন হতে হবে সবাইকে।
আমরা এসব খবর আর শুনতে চাই না যে, অমুকের পরিবারের সাথে ঈদ করা হলো না, তমুকের ঈদ শেষে কাজে ফেরা হলো না। আসুন আমরা সবাই সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে নিজেরাই সচেতন হই। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে নিজের জীবন বাঁচাই।
লেখক : সাংবাদিক।