শনিবার ● ৯ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » চাকরির খবর » নয়াদিল্লির ‘কুকুর মাতা’
নয়াদিল্লির ‘কুকুর মাতা’
ডেস্ক, কুকুরের জন্যই যেন নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তিনি। প্রতিমা দেবী, থাকেন একটা ঝুপড়ি ঘরে, সাথে ১২০টি কুকুর। নিজে না খেয়ে হলেও কুকুরদের খাওয়ান তিনি। সন্তান বাৎসল্যে কুকুরগুলোর লালনপালন করছেন তিনি।
৬৫বছর বয়সী প্রতিমা জানান, মানুষের থেকে কুকুরদের সঙ্গই বেশি উপভোগ করেন তিনি। বিবাহিত জীবনে নানা সমস্যায় স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর কুকুরদের সাথেই তার দিন বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছে। বলেন, আমি ওদের সাথে থেকে খুবই খুশি। স্বামীর সাথে যখন ছিলাম খুশি ছিলাম না, আমাকে সারাদিন বাইরে এবং বাড়িতে কাজ করতে হতো। আমার স্বামী কোনো কাজ করতো না।
প্রতিমার ৩টি সন্তান এখন নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তারা গ্রামে থাকে, কিন্তু প্রতিমা সেখানে যেতে চান না। বলেন, আমার ছেলে আমাকে সবসময়ই ফোন করে তাদের বাড়িতে যেতে বলে, কিন্তু আমি এই কুকুরদের কোথাও ছেড়ে যেতে চাই না।
প্রতিমা সারাদিন কুকুরদের খাওয়ানো আর ওদের যত্ন নিয়েই কাটান। বলেন, ওরা আমার সন্তানের মতো। ওদের কেউ হয়তো তার মালিকের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে আবার কেউ রাস্তায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। আমি ওদের আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং দেখাশুনা করি। ওরাও আমাকে ছেড়ে কোথাও যায়না।
কুকুরগুলোর দুপুরের খাবার হিসেবে তিনি প্রতিদিন ১২কেজি চাল আর ৫কেজি মাংস কেনেন। আর সকালের নাস্তার জন্য ১০লিটার দুধ।
প্রতিমার প্রতিবেশী বিবেক নামে একজন তরুন, কুকুরগুলোর দেখাশুনায় তাকে সাহায্য করেন। বিবেক জানান, আমরা প্রতিদিন সকাল ৬টায় উঠে কুকুরগুলোকে দুধ খাওয়ায়। এরপর দুপুর ১২টায় দুপুরের খাবার আর রাত ১১টায় রাতের খাবার খাওয়ায়।
আরও বলেন, আমিও কুকুর ভালোবাসি তাই বেশিরভাগ সময় ওদের সাথে থাকতে আর ওদের যত্ন নেয়ার চেষ্টা করি।
প্রতিমা দেবী ছোট্ট একটি চায়ের দোকান চালান। যেখানেও তিনি তার আশেপাশের কুকুরগুলোকে বিস্কুট খাওয়ান।
তবে কয়েকদিন আগে প্রচন্ড ঝড়ে তার চায়ের দোকানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জানান, গত চারদিন থেকে কিছু খেতে পারিনি, ওদেরও কিছুই খাওয়াতে পারিনি। তবে নিজের থেকে বেশি চিন্তায় আছেন কুকুরদের নিয়ে। তাই সবার থেকে চেয়ে আর আবর্জনা থেকেই কিছু মাংস সংগ্রহ করে তাই খাওয়াচ্ছেন ওদের।
তবে এখন আবার চায়ের দোকানটি খুলেছেন। তবে এখন ভাবনা শুধুই কুকুরগুলোকে নিয়ে। তার মৃত্যুর পরে ওদেরকে দেখবে তাই এখন একজন ভালো মানুষ খুঁজছেন তিনি। বলেন, কিন্তু মানুষ কুকুর দেখলে ভয়ে পালিয়ে যায়।
আরও বললেন, ‘আমি জানি না আমার মৃত্যুর পর ওদের কে দেখবে, কে খাওয়াবে, কেইবা যত্ন নেবে।’
যদি আমি কখনও ওদের সাথে রাতে থাকতে না পারি ওরা সারারাত ঘুমায় না। আমাকে ছাড়া খায় না। ওদের দেখাশুনা করাই এখন আমার প্রধান ধর্ম- বললেন প্রতিমা দেবী। এই কুকুর প্রেমের জন্য সবাই সবাই এখন তাকে চেনে ভারতের নয়াদিল্লির ‘ডগ লেডি’ হিসেবে।
পিএন,জেটআর