শিরোনাম:
●   ভোলার কর্ণফুলী-৩ লঞ্চে চাঁদপুরের মোহনায় অগ্নিকাণ্ড ●   উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় ●   ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ●   ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ●   চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস ●   ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ●   ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ●   ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ●   ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ●   ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
ভোলা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার সংবাদ
রবিবার ● ২২ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » দুই’শ বছর ধরে চলছে ভোলার মহিষের দধি
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » দুই’শ বছর ধরে চলছে ভোলার মহিষের দধি
৭০২ বার পঠিত
রবিবার ● ২২ অক্টোবর ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দুই’শ বছর ধরে চলছে ভোলার মহিষের দধি

 ---

ডেস্ক: দ্বীপ জেলা ভোলার ব্রান্ড হিসেবে পরিচিত মহিষের দুধের কাঁচা দধি। প্রায় দুই’শ বছরের ঐতিহ্য বহন করা দধি এখানকার অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান উপাদান। এ টক দধি গুড়, মিষ্টি অথবা চিনি দিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া মুড়ি, চিরা ও খৈ দিয়েও খাওয়া যায়। দধি সকল সামাজিক, পারিবারিক ও ঘরোয়া ভোজে থাকতেই হবে। খাবার তালিকায় জনপ্রিয় এই খাদ্যটি না থাকলে সামাজিকতা পরিপূর্ণ হয়ে উঠে না। এছাড়া খাবার হজমে কাঁচা দুধের দধি বাড়তি সহায়তা করায় এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। অনেকেই কুটুম বাড়িসহ দূর-দূরান্তের পছন্দের মানুষদের জন্য দধি কিনে নিয়ে যান। এছাড়া দেশের বাইরেও প্রিয়জনদের কাছে দধি পাঠান অনেকে।

স্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক ও প্রেসক্লাব সভাপতি এম হাবিবুর রহমান বলেন, প্রায় ৪’শ বছর আগে ভোলার উৎপত্তি হলে এখানে ক্রমশই জনবসতি গোড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হলে তারা মহিষ, গরু, ছাগল পালন শুরু করে। ভোলা দ্বীপ হওয়াতে এখানকার ছোট বড় অসংখ্য চরে মহিষ পালনে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। বিশেষ করে অবস্থা সম্পন্ন গৃহস্থ পরিবারগুলোর শত শত মহিষ প্রতিপালন করে। কালের বিবর্তনে যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ২শ’ বছর আগে স্থানীয়রা মহিষের দুধ থেকে কাঁচা দধি উৎপাদন শুরু করে। যা ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হয়ে বর্তমান সময়েও সমান জনপ্রিয়। এখানে এমন কোন বিয়ের অনুষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যাবেনা যেখানে দধি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়নি। এতেই বোঝা যায় এখানে এটা কত জনপ্রিয়।

জানা যায়, জেলায় শতাধিক বিচ্ছিন্ন চর রয়েছে। নদীর মাঝখানে এসব চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এলাকা জুড়ে সবুজ ঘাসের সমারহ। আর এসব চরে লালন করা হয় হাজার হাজার মহিষ। সবুজ ঘাস খেয়ে প্রতিপালিত হয় এসব মহিষ। যুগ যুগ ধরে বংশপরাক্রমায় বহু পরিবার এখানে মহিষ ও দধি বিক্রির পেশায় নিয়জিত রয়েছেন। অনেকে আবার নিজস্ব মহিষের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন করে দধি তৈরি করেন। দধির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন চরে গড়ে উঠেছে শত শত মাহিষ নিয়ে বাথান। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এসব বাথান থেকে মণে মণে দুধ আসতে শুরু করে শহরের বাজারগুলোতে।

আর এ দুধ দিয়েই বানানো হয় মজাদার দধি। এ দধি তৈরিতে কোন প্রকার বীজ বা অন্য উপাদানের প্রয়োজন হয় না। শুধু কাঁচা দুধটা টালি (মাটির বিশেষ পাত্র) তে বসিয়ে দিলেই ১৮-২০ ঘণ্টার মধ্যে দধি হয়ে যায়। জমাটবাধা দধি দেখতে অনেকটা পনিরের মতো মনে হবে। তাই স্বাদে গুণে অনন্য এ খাবারটি বিভিন্ন উৎসব যেমন ঈদ-পূজা, বিয়ে, জন্মদিন, আকিকাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যাপক কদর রয়েছে।

সম্পূর্ণ দুধের বাজারের ওপর নির্ভর করে দধির বাজার। দুধের দাম কমলে দধিরও মূল্যে কমে। জেলা সদরসহ সকল উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে দধির দোকান থাকবেই। গ্রামাঞ্চলে হাটের দিনে দধির টালির পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয় মহিষের দুধের দধি। সদরের বাংলাবাজার এলাকার দধি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, সারা দেশের মধ্যে শুধু এ অঞ্চলেই এক সময় মহিষের দুধের দধির কদর ছিল। অন্যান্য জেলার মানুষ প্রথম প্রথম এর স্বাদ বোঝে না। বার বার যারা এটা খেয়েছে তারাই বোঝে এ দধি কতটা মজাদার। সেই প্রাচীন আমল থেকেই দধির প্রচলন জেলায়। সময়ের সাথে সাথে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে আরো।

দধির কারিগর সুনীল চক্রবর্তী। প্রায় ৪৫ বছর দধি বানানোর কাজ করছেন। তিনি বলেন, মহিষের দুধের দধি তৈরিতে তেমন কোন বাড়তি ঝামেলা নেই। দুধ জ্বাল বা শোধন করতে হয়না। শুধু কাঁচা দুধটা ছেঁকে মাটির পাত্রটি (টালি) পরিষ্কার করে তাতে দুধ ঢেলে বসিয়ে দিলেই দধি হয়ে যায়। পরে সম্পূর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে তা বেঁধে দেওয়া হয়। যাতে সহজেই পরিবহন করা যায় দূর-দূরান্তে। এখনকার দধি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের কাছে পাঠানো হয় প্রতিদিনই।

গাজীপুর রোডের চেয়ারম্যান লেনের আদর্শ দধি ভাণ্ডারের আব্দুল হাই পারিবারিকভাবে দধির ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, সাধারণত দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের দধির (টালির) চাহিদা বেশি। বর্তমানে দেড় কেজি ওজনের দধি দেড়শ’ ও দুই কেজি ২শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দধি থেকে মাখন, ঘি ও ঘোল বানানো হয়। মাখনের কেজি ৮শ’ ও ঘিয়ের কেজি ১২শ’ টাকা বিক্রি হয়। এর ভালো দাম পাওয়ায় তাদের লাভও ভালো হয়। তবে দুধের দাম বৃদ্ধি পেলে দধির দামও বাড়ে বলে জানান তিনি।

মহিষের বাথানের মালিক ও সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. ইউনুছ বলেন, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর চরে তাদের বাথানে প্রায় আড়াইশ’ মহিষ রয়েছে। যা তারা চার পুরুষ ধরে লালন করে আসছেন। দৈনিক এখান থেকে ১শ’ ৩০ থেকে ১৫০ কেজি দুধ হয়। জেলায় অনেকেই ঐতিহ্য ধারণ করে মহিষ পালন করে আসছেন। যা তাদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

-বাসস/এফএইচ





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

© 2024 দ্বীপের সাথে ২৪ ঘণ্টা Bholar Sangbad, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।