সোমবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » সাত খুন মামলার রায়ে নূর হোসেন-তারেক সাঈদসহ ২৬ জনের ফাঁসি
সাত খুন মামলার রায়ে নূর হোসেন-তারেক সাঈদসহ ২৬ জনের ফাঁসি
ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার রায়ে নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ছাব্বিশ আসামীর ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এছাড়া মামলার আরো আট আসামীকে দশ বছরের সাজা ও এক আসামীকে সাত বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। সোমবার সকাল দশটা এগারো মিনিটে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হচ্ছেন র্যাব-১১ এর সাবেক সিও লেঃ কর্নেল (বরখাস্তকৃত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, এনসিসির সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, মেজর (বরখাস্তকৃত) আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (বরখাস্তকৃত) এম এম রানা, মিজানুর রহমান দীপু, মোখলেসুর রহমান, মহিউদ্দিন মুন্সি, ল্যান্স নায়েক হিরা মিয়া, সিপাহী আবু তৈয়ব, সেলিম, সানাউল্লাহ, শাহ জাহান, জালাল উদ্দিন, আসাদুজ্জামান নূর, পূর্নেন্দু বালা, আর ও জি আরিফ হোসেন, আল আমিন, তাজুল ইসলাম, এনামুল, বেলাল হোসেন, শিহাব উদ্দিন, মূর্তজা জামান চার্চিল, আলি মোহাম্মদ, আবুল বাশার, রহম আলী ও এমদাদুল হক। দশ বছরের সাজা প্রাপ্তরা হচ্ছেন রুহুল আমিন, নুরুজ্জামান, এস আই আবুল কালাম আজাদ, কনষ্টেবল বাবুল, এএসআই কামাল, কন্সটেবল হাবিব, এএসআই বজলুর রহমান ও আলিম। সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত হচ্ছেন নাসির।মামলার ৩৫ আসামীর মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছেন ২৩জন। আর পলাতক রয়েছেন ১২জন। গ্রেফতারকৃত তেইশজনের মধ্যে সবাই মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত। পলাতক ১২জনের মধ্যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হয়েছে তিনজন। এরা হচ্ছে সেলিম, শাহ জাহান ও সানাউল্লাহ সানা। রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় এ ঘটনার দুইটি মামলার মধ্যে একটি মামলার বাদি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর সাবেক প্যানেল মেয়র নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, মামলার রায় খুবই ভালো হয়েছে। আমরা আনন্দিত ও সন্তুষ্ট হয়েছি। আশা করি উচ্চ আদালত এই রায় বহাল রাখবেন। তিনি আদালতের রায় মামলার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী জানান। সাত খুনের ঘটনায় অপর মামলার বাদি নিহত এডভোকেট চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল রায় ঘোষণার সময় আদালতে ছিলেন না। যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ব্যাক্তিগত ব্যস্ততার কারনে তিনি আদালতে আসতে পারেননি। তবে রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত নিহত এডভোকেট চন্দন সরকারের মেঝ মেয়ে ডাঃ সুস্মিতা সরকার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমার বাবা এ আদালতের আইনজীবি ছিলেন। সারাজীবন মানুষ যাতে ন্যায় বিচার পায় সেজন্য তিনি কাজ করেছেন। আমরা চাই রায় যাতে দ্রুত কার্যকর করা হয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন আমাদের ন্যায় বিচার দেয়া হবে। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী, পুলিশ, সাংবাদিকদেরসহ সকলের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। মামলার আসামী র্যাবের সাবেক সিও তারেক সাঈদের পক্ষের আইনজীবি সাবেক পিপি এডভোকেট সুলতানুজ্জামান বলেন, এ রায়ে আমার আসামী তারেক সাঈদ সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। তার পরিবারও এ রায়ে সন্তুষ্ট হয়নি। কারন তারেক সাঈদ মনে করছেন মামলায় তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে তিনি ন্যায়বিচার পাননি। এ ব্যাপারে তিনি উচ্চ আাদালতে আপিল করবেন। সেখানে তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আমি মনে করি। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নূর হোসেনের আইনজীবি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা বলেন, আমি মনে করি আমার আসামী মামলায় ন্যায্য বিচার পায়নি। আমরা উচ্চ আাদালতে এ ব্যাপারে আপিল করবো। মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবি এডভাকেট সাখাওয়াৎ হোসেন খান বলেন, সাত খুনের নৃশংস ঘটনার পর বিচারের দাবীতে আমরাসহ সারা দেশের আইনজীবি ও সাধারন মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। আমরা আইনি লড়াই করেছি। সেসব আন্দোলন ও আইনি লড়াই শেষে আজ এ রায়ে আমি ও বাদিপক্ষ সন্তুষ্ট আছেন। রায় যাতে দ্রুত কার্যকর করা হয় সে দাবী জানাচ্ছি। এ মামলাটিতে যে সাক্ষ্য প্রমাণ এসেছে এর মধ্যে ২১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে �ী^কারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এবং ২২ জন প্রতক্ষদর্শী স্বাক্ষিসহ অনেক স্বাক্ষি এ মামলায় স্বাক্ষ্য দিয়েছে। ফলে মামলার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। উচ্চ আদালতে এ মামলা থেকে আসামীরা রেহাই পাবে বলে আমি মনে করিনা। সকাল নয়টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে থাকা আঠারোজন আসামীকে কোর্ট হাজতে আনা হয়। নয়টা চল্লিশ মিনিটে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে লেঃ কর্নেল (বরখাস্তকৃত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, এনসিসির সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, মেজর (বরখাস্তকৃত) আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (বরখাস্তকৃত) এম এম রানাসহ পাঁচ আসামীকে আনা হয়। নয়টা একচল্লিশ মিনিটে সব আসামীকে একত্রে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। সকাল দশটা এগারো মিনিটে আদালত মামলার রায় ঘোষণা শুরু করেন। রায় ঘোষণার পর বেশ কয়েকজন আসামী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তবে নূর হোসেন, তার সহযোগি চার্চিল, র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা ছিলেন নির্বিকার। র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে আদালতে গরাদের বাইরে রাখা হয়।রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত, আশেপাশের এলাকাসহ নারায়ণগঞ্জ শহরে পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়। প্রায় পাঁচশ পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন ছিলেন।