বৃহস্পতিবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ৯ ডিসেম্বর লালমোহন হানাদার মুক্ত দিবস
৯ ডিসেম্বর লালমোহন হানাদার মুক্ত দিবস
বিশেষ প্রতিনিধি: আজ ৯ ডিসেম্বর ভোলার লালমোহন পাক হানাদার মুক্ত দিবস। এই দিনে লালমোহন থেকে পাক বাহিনী মুক্তিযুদ্ধারে চাপে পরে পালিয়ে যায়। পরে মুক্তিযোদ্ধার গিয়ে থানা দখল করে জেলায় প্রথম পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা উত্তলন করেন।
মক্তিযুদ্ধাদের সাথে আপলকালে জানা যায়, দ্বীপ জেলার মধ্যেমণি হল লালমোহন উপজেলা। ১৯৭১ সালের ৮ মে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এখানে পাক বাহিনী এস অবস্থান নেয়। তাদের অস্থায়ী ক্যাম্প ছিল লাঙ্গলখালীর সিও অফিসে। তখন লালমোহন থানা ছিল আলবদর, আল সামস, রাজাকারও তাদের দোসরদের দখলে। নভেম্বর মাসের শেষর দিকে লালমোহনের মুক্তিযোদ্ধারা থানা আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ ও যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করেন। পহেলা রমজান বৃহস্পতিবার রাতে সেহরী খাবার পর ভোলার সর্বত্রই যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী ছিদ্দিক কমান্ডার (বাঘা ছিদ্দিক) এর নেতৃত্বে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত প্রায় এক থেকে দেড়শ জনের এক দল মুক্তিবাহিনী বোরহানউদ্দিনের দেউলা হাজী বাড়ি ক্যাম্প থেকে লালমোহন থানা দখলের উদ্দেশ্যে যাত্র শুরু করেন। তারা দেউলা শান্তিহাট হয়ে সোজা লালমোহনের সড়ক ধরে শাহবাজ পুর কলেজের কাছাকাছি আসতেই কমান্ডার বাঘা ছিদ্দিক তার দলকে ৪ ভাগে বিভক্ত কওে দেন। থানার পশ্চিম দিকে সামছল হক ও তার বাহিনী, উত্তর দিকে মোচু সিদ্দিক, দক্ষিণ দিকে হাবিলদার সিরাজ উদ্দিন ও পূর্বদিকে হাবিলদার শানুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। যোদ্ধারা খুব দ্রুত যে যার জায়গাই গিয়ে লালমোহন থানা ঘিরে ফেলেন। ভোর ৫ টার দিকে হাইকমান্ডার ছিদ্দিক ৮/১০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে থানার পশ্চিম দিকের আরসিও অফিসের সম্মুখে রাইফেল ঠেকিয়ে ওই স্থান থেকে তিনি নিজেই থ্রী নট থ্রী রাইফেল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সর্ব প্রথম শত্রুদের লক্ষ করে গুলি ছুড়েন। তখন থানা থেকেও শত্রু পক্ষ এলোপাথাড়িভাবে গুলি ছুড়তে থাকেন। তখনকার থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুক্তিবাহিনীদের পক্ষে ছিলেন বলে জানা যায়। এই ভাবে সকাল থেকে উভয়ের মাঝে গুলি পাল্ট গুলি চলতে থাকে। ভেতর থেকে ১০ গুলি হলে বাহির থেকে ১টি গুলি ছোড়া হয়। থানার ভেতরে অবস্থান রত রাজাকার ও পুলিশকে বোঝানো হয়েছে তোমাদের চারদিকে মুক্তিযোদ্ধারা ঘিরে আছে, তোমরা আত্মসমর্পণ ব্যতিত কোন উপায় নেই।এদিকে মুক্তিবাহিনীরা মাইকিংয়ের মাধ্যেমে থানায় অবস্থানকারী শত্রু পক্ষকে সাড়ে-ার করার অনুরোধ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া ওয়ের্স্টান পাড়ার মহাদ্দেস সাহেবের বাড়ির শফিকুল ইসলামের মা লালমোহন বাজারে এসে মাইক দিয়ে তার ছেলে সহ রাজাকার, আলবদর বাহিনীর সকল সদস্যকে সাড়ে-ার করার অনুরোধ করেন। একই সময়ে লালমোহনের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মোহাদ্দেস সাসেবও শত্রু পক্ষকে সাড়ে-ার করার জন্য অনুরোধ করেন। বিন্তু কিছুতেই শত্রু পক্ষ আত্মসমর্পণ করতে রাজী হচ্ছে না। দুপুরের দিকে গুলি ও পাল্টা গুলির মাত্র আরো বেড়েই যায়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে থানা থেকে ধেয়ে আসা রাজাকার বাহিনীর গুলিতে ২নং ওয়ার্ড বাগান বাড়িতে মনা পাল গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ ঘণ্টা মৃত্যুর সাথে লড়াই করে মারা যান। দুপুর শেষে উত্তর বাজার জামে মসজিদের পাশে গুলিবিদ্ধ হন চরভূতা ইউনিয়নের মকবুল খনকার। একই রকম ঘটনায় ডাকবাংলো ব্রীজের ওপর গুলিদ্ধি হণ রাধা- রমণ কু-। ৩ ঘণ্টা লড়াই করে তারাও মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শোকের ছাঁয়া নেমে আসে। দুপুরের পর থেকে মুক্তিবাহিনীরা বৃষ্টির মতো চারদিক থেকে গুলি ছুড়তে থাকে। মুক্তিবাহিনীর গুলিতে রাজাকার বাহিনী থানার মধ্যে অবদ্ধ ও দিশেহারা হয়ে পড়ে। এ সময় থানার খেদমতে থাকা ছেলেটি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ফলে জারাকার বাহিনী আরো ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থানা থেকে পলিয়ে যায়। পরে মুক্তিযোদ্ধার গিয়ে থানা দখল করে জেলা প্রথম পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তন করেন। তার পর আস্তে আস্ত জেলার বাকি থানাগুলো দখল করে মুক্তিযোদ্ধারা।
-এফএইচ