শনিবার ● ২২ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অপরুপ মনপুরার জনপদ
মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অপরুপ মনপুরার জনপদ
মো.ছালাউদ্দিন, মনপুরা প্রতিনিধি: মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে ছোট হয়ে আসছে প্রাকৃতিক অপরুপ সৌন্দর্যের দ্বীপ মনপুরা উপজেলার জনপদ। মেঘনার তীব্র ¯্রােতে চর্তুদিক থেকে ভেঙ্গে কেবলই ছোট হয়ে আসছে। গত ৫ বছরে মেঘনার ভাঙ্গনে হাজার হাজার একর ফসলী জমি, ঘর বাড়ি হারিয়ে মানুষ এখন নিঃস্ব। সহায় সম্বল ভিটে মাটি হারিয়ে মানুষ বেড়ির ঢালে কিংবা নতুন জেগে উঠা চরে মাথা গোঁজার ঠাই নিয়েছে। মেঘনার ভাঙ্গনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান,গুরুত্বপুর্ন স্থাপনা, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন,মসজিদ,মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে ১নং মনপুরা ইউনিয়নের উত্তর মাথা দিয়ে ভেঙ্গে কেবলই ভিতরে ঢুকছে। ইতি মধ্যে মনপুরার সবচেয়ে বড় বাজার রামনেওয়াজ বাজারটি সম্পুর্ন ভেঙ্গে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি এখন নদীর গর্ভে বিলীন হতে যাচ্ছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিটে মাটি হারিয়ে পথে বসতে শুরু করেছে। মনপুরা ইউনিয়নের আন্দিড়পাড়, মাছুয়াখালি, কাচারির ডগিসহ ৫টি ওয়ার্ড সম্পুর্ন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং কাউয়ারটেক,সীতাকুন্ড, ঈশ্বরগঞ্জ মৌজার অধিকাংশ গ্রাম নদীর গর্ভে চলে গেছে। মনপুরা ইউনিয়নের ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।
হাজীর হাট ইউনিয়নেও ভাঙ্গনের কবলে। হাজির হাট ইউনিয়নের নাইবের হাট বাজার সম্পুর্ন নদীর গর্ভে চলে গেছে । এছাড়া সোনারচর অর্ধাংশ, চরজ্ঞান, দাসের হাট প্রায় সম্পুর্ন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একইভাবে উত্তর সাকুচিয়া ও দক্ষিণ সাকুচিয়া মেঘনার ভাঙ্গনে কেবলই ছোট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে মনপুরা সম্পুর্ন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে মূল ভুখন্ড থেকে মনপুরার মানচিত্র। দ্রুত নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ্উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগীতা কামনা করছেন ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ।
মনপুরা ইউনিয়নের আন্দিড়পাড়ের আকবর মিয়া বলেন, ঘর বাড়ি সব নদী নিয়া গেছে। নিজেদের জমি জমা নেই। তাই বেড়ীর উপর ঘর তুইল্লা পরিবার পরিজন নিয়া বসবাস করি।
রামনেওয়াজ বাজার বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মো. কামরুল,অরুন বলেন, ইতি পূর্বে বাজারটি কয়েকবার স্থানান্তর করা হয়েছে। ব্যাবসায়ীদের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্যাবসায়ী দেনার দায়ে পথে বসেছে। এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে ব্যাবসায়ীরা কোথায় যাবে। দ্রত মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বলেন ব্যাবসায়ীরা।
এসব ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের দাবী সরকার যদি কলাতলী টু মনপুরা কোরেজডেম করে বাধঁ নির্মাণ করে তাহলে স্থায়ীভাবে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে। ৫০ হাজার একর জমি জেগে উঠবে। পূর্নবাসন হবে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের।
এব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মিসেস শেলিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, মনপুরা পর্যটনের অপার সম্ভবনায় স্থান। প্রতিদিন মেঘনার ভাঙ্গনে মানুষ সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে শুরু করেছে। মেঘনার ভাঙ্গন রোধে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি মনপুরার রামনেওয়াজ লঞ্চঘাট এলাকা ও চরফ্যাশন উপজেলার ঘোষেরহাট লঞ্চঘাট এলাকা ভাঙ্গন রোধে ডিপিপির প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ২ শত ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনার ভাঙ্গন রোধে প্রকল্পটি প্লানিং কমিশনে পাশ হয়ে একনেকে উঠবে। ভাঙ্গন রোধে উপমন্ত্রী প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে তিনি জানান।
এফএইচ