বৃহস্পতিবার ● ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » রায় ফাঁস: সাকার স্ত্রী-পুত্র খালাস,আইনজীবীসহ পাঁচজনের দণ্ড
রায় ফাঁস: সাকার স্ত্রী-পুত্র খালাস,আইনজীবীসহ পাঁচজনের দণ্ড
ঢাকা : সালাউদ্দিন কাদের (সাকা)চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের খসড়া ফাঁসের মামলায় তাঁর আইনজীবীসহ পাঁচ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা হয়েছে। অন্য দুই আসামি সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলে খালাস পেয়েছেন। বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম বৃহস্পতিবার এই রায় দেন।পরে ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম বলেন, মামলায় সাত আসামির মধ্যে পাঁচজনের জেল-জরিমানা হয়েছে। সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলে খালাস পেয়েছেন।আদালত সূত্র জানায়, দন্ড পাওয়া পাঁচ আসামির মধ্যে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলামের ১০ বছর কারাদন্ড হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।দন্ড পাওয়া বাকি চার আসামির প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই চারজন হলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অফিস সহকারী (সাঁটলিপিকার) ফারুক হোসেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী নয়ন আলী, সাকা চৌধুরীর ম্যানেজার এ কে এম মাহবুবুল হাসান ও আইনজীবী ফখরুলের সহকারী মেহেদী হাসান। তাঁদের মধ্যে মেহেদী হাসান পলাতক রয়েছেন। অন্যরা কারাগারে।খালাস পেয়েছেন সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। দুই দফা পেছানোর পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।জামিনে থাকা সাকাপত�ী ফারহাত কাদের চৌধুরী রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত হন। আর তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে পলাতক দেখিয়েই আদালত রায় ঘোষণা করে, যদিও পরিবারের দাবি, তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গত অগাস্টের শুরুতে তুলে নিয়ে গেছে। ফারহাত ও হুম্মামের আইনজীবী এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বাকি আসামিদের আইনজীবীরা আপিল করার কথা বলেছেন। অন্যদিকে পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে তারপর আপিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। প্রতিক্রিয়া: এ মামলায় যে অভিযোগ, তার সঙ্গে ফারহাত বা হুম্মাম জড়িত ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। যে শুনানি হয়েছে, তাতে খালাস পাওয়ারই কথা।ফারহাত ও হুম্মামের কাদের চৌধুরীর আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো।আমরা সংক্ষুব্ধ, এ রকম রায় হওয়া উচিত হয়নি। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আসামি ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, নয়ন আলী ও ফারুক হোসেনের আইনজীবী এম এ বি এম খায়রুল ইসলাম লিটন।এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না। রায়ের পুরো কপি এখনো পাইনি। কপি হাতে পাওয়ার পর তা পর্যবেক্ষণ করে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম।সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদন্ড বহাল থাকায় গতবছর নভেম্বরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সালাউদ্দিন কাদেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার রায় হয়েছিল ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর।ওই রায়ের দিন সকালেই তার স্ত্রী, পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন। তারা রায়ের খসড়া কপিও সংবাদকর্মীদেরও দেখান। তারা আদালতের রায় নিয়ে কটাক্ষও করেন। রায় ঘোষণার পরদিন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) এ কে এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন। পরে ৪ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান শাহবাগ থানায় মামলা করেন।২০১৪ সালের ২৮ অগাস্ট ডিবির পরিদর্শক মো. শাহজাহান এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন, যাতে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়।সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত ১৫ ফেব্র�য়ারি সাইবার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার শুরু হয়; সাক্ষ্য শুরু হয় ২৮ মার্চ।তদন্তের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সালাউদ্দিন কাদেরের আইনজীবীর সহকারী মেহেদী বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখিয়ে ট্রাইবুনালের দুই কর্মীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের খসড়ার অংশবিশেষ বের করেন। ওই অংশটিই রায়ের দিন আদালতে সাংবাদিকদের দেখানো হয়।আসামি নয়ন ও ফারুক এ মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলেও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান।তথ্য-প্রযুক্তি আইনের এ মামলায় দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হয় গত ৪ অগাস্ট। সেদিন শুনানিতে হাজির না থাকায় যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদেরের ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ হয়। হুম্মামের আইনজীবী আমিনুল গণী টিটোর অভিযোগ, সেদিন শুনানিতে উপস্থিত হতে আদালত প্রাঙ্গণে নামার পরপরই ডিবি পরিচয়ে তাকে তুলে নেওয়া হয়।তবে আটকের খবর অস্বীকার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান সেদিন বলেন, হুম্মাম তাদের হেফাজতে নেই।মামলার আসামিদের মধ্যে ফারহাত কাদের চৌধুরী ছাড়া জামিনে থাকা বাকি চার আসামি ফখরুল, মাহবুবুল, নয়ন ও ফারুকের জামিন বাতিল করে তাদেরও সেদিন কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। আরেক আসামি মেহেদী শুরু থেকেই পলাতক।এর আগে ১৪ ও ২৮ অগাস্ট দুই দফা তারিখ রাখা হলেও লেখা শেষ না হওয়ায় আলোচিত এ মামলার রায় পিছিয়ে দেন বিচারক।