বৃহস্পতিবার ● ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » আদালত অবমাননা করে শপথ ভেঙেছেন কামরুল-মোজাম্মেল
আদালত অবমাননা করে শপথ ভেঙেছেন কামরুল-মোজাম্মেল
ঢাকা : আদালত নিয়ে মন্তব্য করে অবমাননার দায়ে দন্ডিত দুই মন্ত্রী তাদের সংবিধান রক্ষার শপথ ভেঙেছেন বলে জানিয়েছে আপিল বিভাগ। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করে ছয় মাস আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে সাজা দিয়েছিল, সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে এর উল্লেখ করেছে সর্বোচ্চ আদালত। আদালত অবমাননায় দুই মন্ত্রীকে জরিমানা করে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৫৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়।রায়ে বলা হয়, সংবিধান অনুসারে আইনের শাসন সুরক্ষায় বিবাদীরা (দুই মন্ত্রী) অবহেলা করেছেন। আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে বিবাদীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বক্তব্য রেখেছেন। তাঁরা দোষও স্বীকার করেছেন। তাঁরা আইনভঙ্গের মতো কাজ করেছেন। সংবিধান সমুন্নত রাখার দায়িত্ব পালনে শপথ ভঙ্গ করেছেন। বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই প্রতিষ্ঠানকে খাটো করেছেন।আদালত অবমাননার দায়ে গত ২৭ মার্চ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে দোষী সাব্যস্ত করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তাঁদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে সাত দিনের কারাদন্ডের নির্দেশও দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের আট সদস্যের বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।রায় লিখেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আদালত অবমাননায় দুই মন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করে জরিমানার ব্যাপারে আট বিচারপতি একমত প্রকাশ করলেও শপথ ভঙ্গের ব্যাপারে তাঁরা ভিন্নমত প্রকাশ করেন। এর মধ্যে শপথ ভঙ্গের বিষয়ে বিচারপতি ইমান আলীর লেখা রায়ে একমত পোষণ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। অন্যদিকে এ বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর দেওয়া রায়ে একমত পোষণ করেছেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি নিজামুল হক। এ বিষয়ে রায়ে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বিবাদীরা শপথ ভঙ্গ করেছেন এ মতের সঙ্গে আমরা একমত পোষণ করতে অপারগ। কারণ, শপথ ভঙ্গ করার বিষয়টি এখানে বিচার্য ছিল না। এ বিষয়ে বিবাদীদের কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি। তাঁরা এখন মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁরা আদালত অবমাননা করেছেন কি করেননি, তা বিচার্য বিষয় ছিল। ৫ মার্চ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির আদেশ পাওয়া মীর কাসেম আলীর আপিল মামলা পুনরায় শুনানির দাবি জানান। ওই শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন।যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর চূড়ান্ত রায়ের আগে সর্বোচ্চ আদালতকে নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য দুই মন্ত্রীর নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগ গত ২৭ মার্চ ওই রায় দেয়। সেই রায় বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।রায়ে বলা হয়, সংবিধানে বর্ণিত আইনের শাসন রক্ষার যে শপথ বিবাদীরা নিয়েছেন, সেই দায়িত্বের প্রতি তারা অবহেলা করেছেন। তারা আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং সংবিধান রক্ষা ও সংরক্ষণে তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন।সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে হওয়া এই রায় লিখেছেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।এর মধ্যে বিচারপতি ইমান আলীর সঙ্গে অপর চার বিচারপতি একমত পোষণ করায় তার লেখা রায়ই আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার রায়ের বিষয়ে বিচারপতি ইমান আলীর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। অন্যদিকে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মো. নিজামুল হক।বিচারপতি সিদ্দিকী তার রায়ে বলেছেন, আমি আমার ভাই মোহাম্মদ ইমান আলীর রায় পড়েছি। অবমাননাকারীদের দোষী সাব্যস্ত করা এবং তাদেরকে দেওয়া দন্ডের বিষয়ে দ্বিমত পোষণের কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না। তবে অবমাননাকারীদের শপথ লঙ্ঘন বিষয়ক অংশের সঙ্গে আমি একমত পোষণ করতে পারছি না।আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করে মন্ত্রী কামরুল ও মোজাম্মেলকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দেয় আদালত। ওই অর্থ সাত দিনের মধ্যে ইসলামিয়া চক্ষুু হাসপাতাল ও লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশে দিতে বলা হয়। পরে তারা সেই অর্থ পরিশোধও করেন।