মঙ্গলবার ● ২৩ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে অচল নৌবন্দর: ভোগান্তিতে যাত্রীরা
অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে অচল নৌবন্দর: ভোগান্তিতে যাত্রীরা
ঢাকা : নূন্যতম মজুরিসহ বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের নৌযান ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে দেশের প্রধান নদী বন্দরগুলো।এভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে সারাদেশে এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে বলে জানান নৌযান শ্রমিকরা।বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ্ আলম ভূঁইয়া বলেন, নৌশ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বানে চার দফা দাবিতে এ ধর্মঘট চলছে।চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নূন্যতম মজুরি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বেতন স্কেল ঘোষণা, দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ পুনর্নির্ধারণ, নৌপথে সন্ত্রাস, ডাকাতি ও চাঁদাবাজি বন্ধসহ নদীপথ প্রতিরক্ষা বলেও জানান তিনি।এদিকে, ধর্মঘটের খবর না জানার কারণে নদীবন্দরে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন দূরযাত্রার যাত্রীরা। এদিকে , শ্রমিকদেও ধর্মঘটে সত্বেও সদরঘাট থেকে বিভিন্ন রুটে লঞ্চ ছেড়ে গেছে।মঙ্গলবার বিকেলে লঞ্চ টার্মিলাল গিয়ে দেখা যায় দেশের বিভন্ন গন্তব্যেও এক এক করে ১১ টি লঞ্চ ছেড়ে গেছেঘাট সূত্রে জানা গেছে, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে ধর্মঘট চলল্যে মালিক পক্ষ এবং নৌ শ্রমিকদের অভ্যন্তরীর সমঝোতার ভিত্তিতে সদরঘাট থেকে লঞ্চ গুলো ছেড়ে যাচ্ছে। তাদের দাবী ভয়ভীতি দেখিয়ে শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এ ধর্মঘট পালন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এদিকে,শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ চার দফা দাবিতে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের নৌ ধর্মঘটে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের প্রধান বন্দরগুলো।মঙ্গলবার দিনের প্রথম প্রহর থেকে বেতন নূন্যতম ১০ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে দূরপাল্লার নৌশ্রমিকরা এই ধর্মঘট পালন করছে। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ্ আলম ভূঁইয়া বলেন, নৌশ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে চার দফা দাবিতে ডাকা ধর্মঘট সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে সারাদেশে শুরু হয়েছে। নূন্যতম মজুরি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বেতন স্কেল ঘোষণা, দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ পুনর্নির্ধারণ, নৌপথে সন্ত্রাস-ডাকাতি-চাঁদাবাজি বন্ধ ও নাব্যতা রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে ধর্মঘট শুরু হয়েছে।কর্মসূচিতে ১৭টি নৌযান শ্রমিক সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছে বলে জানান শ্রমিকনেতা শাহ্ আলম।তনি বলেন, শ্রমিকরা গত জানুয়ারিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করলে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নৌযান শ্রমিকদের মজুরিকাঠামো নির্ধারণ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।গত ২০ এপ্রিল শ্রমিকরা সারাদেশে ধর্মঘট শুরু করলে ছয় দিন পর নূন্যতম মজুরি ১০ হাজার টাকা করার ঘোষণা দেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তেলবাহী নৌযান শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ায় তারা আন্দোলনে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, অন্য সব নৌশ্রমিক চার দফা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাদের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম বলছেন, মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি শ্রম মন্ত্রণালয়ের।আমরা নৌমন্ত্রীর নির্ধারিত মজুরি দিতে পারব না বলে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। এতে নৌযান শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে গেলে তার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। চাঁদপুর: চাঁদপুর নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. বিপ্লব সরকার বলেন, চার দফা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। মুন্সীগঞ্জ: নৌ ধর্মঘটে দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ ও শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি রুটে লঞ্চ সার্ভিস চালু রয়েছে।অপরদিকে ধর্মঘটের খবর না জানার কারণে বন্দরে এসে দুর্ভোগে পড়েছেন দূরপাল্লার অনেক যাত্রী।মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণঞ্জ রুটের লঞ্চমালিক ও মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের ইজারাদার দিল মোহাম্মদ জানান, ছোট রুটগুলোয় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে তেমন দাবি-দাওয়া নেই। তাই ছোট রুটে লঞ্চ ও অন্য নৌযানও চলছে।শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি রুটের লঞ্চমালিক ইকবাল হোসেন জানান, এই রুটের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে অভিযোগ নেই।এম এল মকুলের সারেং মো. জামাল হোসেন বলেন, প্রতিদিনের মজুরি তিনি প্রতিদিন পেয়ে যান। তাই বেতন-ভাতা নিয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই। তিনি দৈনিক ৪০০ টাকা পান বলে জানান। রাজবাড়ী: দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-নগরবাড়ি নৌপথে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক।দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ম্যানেজার মিলন খান জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-নগরবাড়ি রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা পরিবহনগুলোর যাত্রীর পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে টার্মিনাল থেকে লঞ্চগুলো গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে।বাগেরহাট: নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে মংলা বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহন বন্ধ রয়েছে।মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ব্যবস্থাপক (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, বর্তমানে বন্দরে গম, সার, কয়লা ও সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিংকারসহ মোট ১২টি জাহাজ অবস্থান করছে।নৌ শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে বন্দরে অবস্থানরত জাহাজে পণ্য বোঝাই ও খালাস কাজ বন্ধ রয়েছে।ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে বন্দরে জাহাজের জট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে জানান তিনি। নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ওয়েজুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার নৌযানের দুই লাখ শ্রমিক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ ধর্মঘট পালন করছেন। চট্টগ্রাম: মজুরি বাড়ানোসহ চার দফা দাবিতে নৌশ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ডাকা ধর্মঘটে চট্টগ্রাম থেকে সব ধরনের লাইটার জাহাজ ও যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।দাবি আদায়ে সোমবার রাত ১২টা থেকে লাগাতার এই কর্মসূচি পালন করছেন চট্টগ্রামের নৌযান শ্রমিকরা।একই দাবিতে সারাদেশে নৌশ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের নৌ ধর্মঘটে স্থবির হয়ে পড়েছে প্রধান বন্দরগুলো।চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে আসা খাদ্যশস্য ও পণ্যবাহী মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস করা হয় লাইটার জাহাজে (পণ্যবাহী ছোট আকারের জাহাজ)।এসব জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলে বন্দরে ভোগ্য পণ্য ও বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল খালাস কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে। নৌশ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ওয়েজুল ইসলাম বলেন, নূন্যতম মজুরি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ চার দফা দাবিতে তাদের এ কর্মসূচি।তিনি জানান, তেল পরিবহনকারী ট্যাংকার মালিকরা মজুরি বাড়ানোর কারণে অয়েল ট্যাংকারের শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে না।ওয়েজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম থেকে সব ধরনের লাইটার জাহাজ ও যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে।এখনও কোনো আলোচনার প্রস্তাব আসেনি। ফলপ্রসূ আলোচনা না হলে কর্মবিরতি চলবে।এর আগে গত ২০ এপ্রিল মজুরি বাড়ানোসহ ১৫ দফা দাবিতে ধর্মঘট পালন শুরু করেছিলেন নৌযান শ্রমিকরা।ছয় দিনের মাথায় মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে নৌমন্ত্রীর বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছিল।ওই বৈঠকে সর্বনিম্ন মজুরি সাত হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করার ঘোষণা দেওয়া হলেও মালিকপক্ষ তা বাস্তবায়ন না করে আদালতে রিট করে।