রবিবার ● ২১ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » ঝড়ে ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লন্ডভন্ড: নিহত ৭
ঝড়ে ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লন্ডভন্ড: নিহত ৭
ডেস্ক: ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ঝড় ও আকস্মিক বন্যায় বন্যা দেখা দিয়েছ্ ে। এতে ফরিদপুরে ঝড়ে পাটকল শ্রমিকসহ নিহত ৫ এবং গোপালগঞ্জে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় আবু সরদার (৩৫) ও অনিল চন্দ্র হালদার (৬০)নামে ২ ব্যাক্তি নিহত হয়েছেন। ফরিদপুর :ফরিদপুর সদর উপজেলায় ঝড়ে পাটকলের শেড ভেঙে ও গাছ চাপায় পাঁচজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন।রোববার দুপুরে বয়ে যাওয়া ঝড়ে উপজেলার বাখুন্ডা এলাকার জোবাইদা করিম জুট মিলের শেডের নিচে চাপা পড়ে তিন শ্রমিক এবং কেশবনগর ও দড়ানীপাড়া গ্রামে গাছ চাপায় দুই জনের মৃত্যু হয় বলে জানান ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি নাজিমউদ্দিন।নিহতরা হলেন জোবাইদা করিম জুট মিলের শ্রমিক হযরত আলী (৪০), আকাশ (২২), মালতি (২৫) ও কেশবনগর এলাকায় বীরেন বিশ্বাস (৩৫) এবং মানিকগঞ্জের আবুল হোসেন (৪০)।আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।এছাড়া ঝড়ে জেলার শতাধিক বাড়িঘর ও সহ�্রাধিক গাছপালা ভেঙে পড়েছে।ওসি বলেন, বেলা ১টার দিকে প্রচ- ঝড় শুরু হলে জোবাইদা করিম জুট মিলের প্রায় ৫/৬ হাজার বর্গফুট স্টিলের শেড ভেঙে পড়ে। এ সময় শেডের নিচে চাপা পড়ে এক নারীসহ তিন শ্রমিক নিহত হন।আহত হয় অন্তত ৫০ শ্রমিক।এছাড়া উপজেলার কেশবনগর এলাকায় বীরেন বিশ্বাস ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের দড়ানীপাড়া গ্রামে আবুল হোসেন গাছচাপায় মারা যান।আবুল হোসেন মানিকগঞ্জ থেকে ওই এলাকার বারেক দড়ানীর বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিুকর রহমান।মিলের জেনারেল ম্যানেজার মতিউর রহমান বলেন, মাত্র কয়েক মিনিটের ঝড়ে সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।খনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের এনডিসি মনদীপ ঘরাই বলেন, নিহত পাঁচজনের পরিবারকে ২০ হাজার করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মিলের আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের মাঝে খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জোবায়দা করিম জুট মিলের বিধ্বস্ত শেডে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।এছাড়া ঝড়ে ফরিদপুর সদর উপজেলার গঙ্গাবর্দী, সাদীপুর ও খুশীরবাজার এলাকায় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে ফরিদপুর সদরের মধুখালীর গড়াই সেতু পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে পাঁচ শতাধিক গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।সড়কে গাছ পড়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কেরও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। গোপালগঞ্জ: পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় আবু সরদার (৩৫) ও অনিল চন্দ্র হালদার (৬০) নামে ২ ব্যাক্তি নিহত হয়েছেন। আজ রোববার দুপুর ১টার দিকে কাশিয়ানীর উপজেলার চর ভাটপাড়া গ্রামে এবং বেলা ১১টার দিকে কোটালীপাড়ার উপজেলার পীরার বাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।এলাকাবাসী জানায়, কৃষক আবু সরদার সকালে বৃষ্টির মধ্যে জমিতে কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে তিনি গ্রুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যূ হয়। নিহত আবু সরদার কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল ইউনিয়নের চর ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। অপর দিকে, সকালে বৃষ্টির মধ্যে উঠানে যান অনিল। এসময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনা স্থলেই তিনি মারা যান। নিহত অনিল চন্দ্র হালদারের বাড়ি কোটালীপাড়ার উপজেলার পীরার বাড়ি গ্রামে। মুন্সীগঞ্জ: লৌহজং উপজেলার গাউদিয়া ইউনিয়নে প্রতিবছরের মত ঘূর্ণি ঝড়ের কবলে পরে স্থানীয় মাছ বাজার, মসজিদ ও ঘর-বাড়িসহ বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত: ৩০ জন। আজ রবিবার সকাল ১০টার দিকে গাউদিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে।লৌহজং উপজেলার ইউনো মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান জানান, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১০/১২ টি পরিবারের ঘড়বাড়ি, ১৫ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, একটি মাছের বাজার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ ছাড়া একটি মসজিদের উপরের পানির ট্যংক ও মাওলানার আধাপাকা বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়া শিমুলিয়া বাজার এলাকায়ও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় নারী-পুরুষসহ অন্তত: ৩০ থেকে ৩৫ জন আহত হয়েছে। ঘটনায় সকলকে প্রথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে, মো. সোহেল সরর্দার (৫২) ও মো. শেরু ফকির (৫০) গুরুতর আহত হওয়ায় তাদের ঢাকা মেডিঃ পাঠানো হয়েছে। কাউখালী: সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে রবিবার উপকূলীয় উপজেলা পিরোজপুরের কাউখালীতে দিনভর ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি চলছে। কচাঁ, সন্ধ্যা, গাবখান নদী উত্তাল ।নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে হাজার হাজার ঘর-বাড়ি ডুবে গেছে।স্মরন কালের অতি বৃষ্টির কারনে কাউখালী উপজেরা সদরসহ নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার ৪৫টি গ্রাামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। পানিবন্দি এসব মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনও ব্যাহত হচ্ছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘর থেকে রাস্তায় বের হতে দেখা যায়নি।এদিকে দুর্যোগ আবহাওয়ার কারনে কাউখালী থেকে ঢাকাগামী কোন যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। বিআইডব্লিউটিএ সুত্র জানা গেছে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে । বৃষ্টি ও বাতাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাউখালীতে সকাল থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফেনী :দুই দিনের প্রবল বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সীমান্তবর্তী ফেনীর ছাগলনাইয়ায় আকস্মিক বন্যায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট ও রোপা আমনের ফসলি ক্ষেত ।জানা গেছে, সীমান্তের ওপারে গত কয়েকদিন ধরে প্রবল ভারী বর্ষণের ফলে সীমান্তবর্তী মুহুরী, কহুয়া, ফুলছড়ি খাল ও ফেনী নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার ফুলছড়ি, জঙ্গলমিয়া খালসহ সীমান্তঘেষা খালগুলো দিয়ে হু হু করে ধেয়ে আসা উজানের পানি জনবসতিপূর্ণ এলাকা গুলোতে প্রবেশ করছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়ক ও ছাগলনাইয়া-মুহুরীগঞ্জ সড়কের ওপর দিয়ে ুবন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাস্তাঘাট, আগাম লাগানো শীলকালীন শাকসবজি ও রোপা আমনের উঠতি ফসলি জমির ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ এলাকা, রাধানগর ইউনিয়নের উত্তর আধাঁর মানিক, জঙ্গলমিয়া বাজার এলাকা, মধুগ্রাম, পৌরসভার মটুয়া, হিছাছড়া, বাঁশপাড়া, পশ্চিম ছাগলনাইয়া, কুহুমা, ফুলছড়ি খালের পাড় ভেঙ্গে উত্তর সতর এলাকা ও রৌশন ফকির মাজার এলাকায় আকস্মিক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে । এদিকে, ফেনীর পরশুরামে টানা বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে মূহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ৪ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রবিবার বিকাল ৫টার দিকে ওই অংশে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ফেনী-পরশুরাম সড়কের ঘনিয়া মোড়া থেকে ফুলগাজী বাজার পর্যন্ত অংশে হাটু পরিমান পানি থাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সরেজমিনে জানা গেছে, বন্যার পানির তোড়ে চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন শালধরে মূহুরী নদীর বেড়িবাঁধে প্রায় ২শ ফুট ভেঙ্গে গেছে। ভাঙ্গা অংশ দিয়ে দক্ষিন শালধর, শালধর, মালিপাথর ও রাজষপুর গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। দক্ষিন শালধর গ্রামের আবদুল মমিন জানান, হঠাৎ মুহুরী নদীর ভাঙ্গনে বন্যার পানি গ্রামে প্রবেশ করছে। ইতিমধ্যে কয়েকশ পুকুর, ফসলি জমি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া পরশুরা�ম-ফুলগাজীর আরও বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। চলতি বছরের বন্যায় মুহুরী নদীর ভাঙ্গন কবলিত অংশগুলো স্থায়ী মেরামত না করায় বন্যা আতংকে রয়েছে পরশুরাম-ফুলগাজী উপজেলা কয়েক লক্ষ মানুষ।পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা হক জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় বর্ন্যাতদের সহযোগিতার জন্য উপজেলা প্রশাসন চেষ্টা করছে।