বুধবার ● ১০ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » নিম্নচাপ: সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা
নিম্নচাপ: সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা
ঢাকা : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থানতর মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।বুধবার একই কারণে সংশ্লিষ্ট নদীবন্দরগুলোকে দুই নম্বর সতর্কতা দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।বর্ষা মৌসুমের শেষ সময়ে এসে গতকাল ২৬ শ্রাবণ মঙ্গলবার দেশের অনেক এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়। আগামী শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাসও রয়েছে।মঙ্গলবার দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় টেকনাফে ২১৯ মিলিমিটার। অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, নিম্নচাপটির প্রভাবে উপকূলে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান খান বলেন, মৌসুমি নিম্নচাপটি বুধবার সকাল ৬টায় খুলনা অঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ছিল; এটি আরও অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে সমুদ্রবন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও দেশের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।তিনি জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও তাদের অদূরবর্তী চরগুলোর উপর দিয়েও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।এসময় দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে৪ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে।অধিদপ্তর জানিয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটে বৃষ্টিসহ ঝড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে।এজন্য সংশ্লিষ্ট নদী বন্দরগুলোকে দুই নম্বর সতর্কতা দেখাতে বলেছে অধিদপ্তর।বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের সব বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী রিপন কর্মকার বলেন, প্রধান নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। ৯০টি পর্যাবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৬৯টি পয়েন্টে পানি কমছে। ধলেশ্বরী, কালিগঙ্গা ও তিতাস নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। টানা বৃষ্টিতে বুধবার চট্টগ্রাম নগরের নিচু এলাকায় পানি উঠেছে। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে নগরবাসীর। মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। একই কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে কখনো মাঝারি, কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি মাত্রায় এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে।টানা বৃষ্টিতে নগরের হালিশহর, কাপাসগোলা, চকবাজার উর্দু গলি, শুলকবহর, বাদুড়তলা, ষোলোশহর, দুই নম্বর গেট, মোহাম্মদপুর, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ সিডিএ, চান্দগাঁও, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।সরেজমিনে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুলকবহর মুন্সিরপুকুর পাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাঁটুসমান পানি। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহিম জানালেন, সকাল থেকে এখানে পানি উঠেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।দুপুর ১২টার দিকে নগরের চকবাজারের উর্দু গলিতে দেখা যায়, হাঁটুসমান পানি থই থই করছে। এর মধ্যে এলাকার বাসিন্দারা চলাফেরা করছেন। নালার ময়লা-আবর্জনা ভাসছে এই পানিতে। টানা বৃষ্টিতে নগরের চকবাজার মুন্সিরপুকুর পাড় এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। এ সময় দুর্ভোগে পড়ে এলাকাবাসী। ছবিটি বুধবার বেলা একটার দিকে তোলা। ছবি: জুয়েল শীলবৃষ্টির কারণে নগরে যানবাহনের সংখ্যাও কমে যায়। এর ফলে রিকশা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বেড়ে যায়। পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর সূত্র জানায়, উপকূলীয় গাঙ্গেয় এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থানরত মৌসুমি নিম্নচাপটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকাল ছয়টার সময় খুলনা অঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্রবন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।