সোমবার ● ১১ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » কর্মব্যস্ত হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকায় ফিরছে মানুষ
কর্মব্যস্ত হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকায় ফিরছে মানুষ
মো.জোবায়ের হোসাইন: ঈদের ছুটি শেষে গত শুক্রবার থেকেই রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। আজ থেকে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় আরও বেড়েছে। অন্যদিকে ঈদের ছুটির পর রোববারই প্রথম খুলেছে ঢাকার অফিসপাড়া। সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা যোগদান করেছেন কর্মক্ষেত্রে। ধীরে ধীরে আবার চিরচেনা ব্যস্ততায় ফিরে যাচ্ছে ঢাকা।নাড়ির টান শেষে এবার যেন শুরু হলো জীবিকার টান। ঈদ করতে বাড়িতে যাওয়া মানুষগুলোর ফের শুরু হলো জীবনযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি। আর তাইতো সকল মমতা, ভালোবাসা ও স্নেহের বন্ধনকে পেছনে রেখে শুরু হয়েছে কর্মস্থলে ফেরার পালা। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে আজ রোববার ছিল প্রথম কার্য দিবস।
এদিকে ঈদের দুই দিন পর ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে বেশি দেখা গেছে। তবে গণপরিবহনের সংখ্যা এখনো কিছুটা কম। নিউমার্কেট, শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার মোড়ে বাসের অপেক্ষায় অনেককেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পেশায় দোকানদার মো. আরিফুল রহমান বলেন, সময়মতো বাস না পেয়ে শেষে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে দোকানে গেছেন তিনি। মিটারে গেলেও অটোরিকশার চালককে কিছু টাকা বখশিশ দিতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।ঈদ-উল ফিতরসহ ৯ দিনের টানা ছুটি শেষে খুলেছে সরকারি অফিসগুলো। ছুটির পর প্রথম কার্যদিবস হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি প্রায় শতভাগ। চলছে সহকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়।রোববার সকাল থেকেই সচিবালয়ে কর্মমুখর পরিবেশ। একই অবস্থা রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলসহ অন্যান্য স্থানে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা পরিক্ষীৎ চৌধুরী বলেন, এবারে ঈদে টানা ৯ দিন ছুটি থাকায় বাড়তি ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। গ্রামের বাড়িতে মানুষ আগে গেলেও ঈদের পরপরই ফিরে ব্রাক্ষ্ণবাড়িয়া থেকে ফিরেছেন কাইয়ুম তিনি বলেন, টানা ছুটি থাকায় চাপমুক্তভাবেই ঈদের ছুটি কাটানো গেছে। ফলে সময়মতোই প্রায় সবাই ফিরে এসেছেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অফিসগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। বেশিরভাগ টেবিলেই উপস্থিত রয়েছেন স্টাফরা।সবাই বলেন, প্রথম দিনের অফিস হওয়ায় কাজের চাপ একটু কম। তবে দু একদিনের মধ্যেই পুরোদমে কর্মব্যস্ত হয়ে উঠবে সব অফিস।
রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রোববার থেকেই ক্লাস শুরু হয়েছে। একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিক জনাব মহিউদ্দিন বলেন, প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছিল ঈদের আমেজ। সহকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন তিনিও। তবে কিছুদিনের মধ্যেই শ্রেণির জন্য নির্ধারিত পরীক্ষা শুরুর কথা থাকায় পাঠ্যসূচি নিয়ে তাঁকে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে।তবে যথারীতি ভিড় আছে খাবারের দোকানসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে।
গাজীপুর থেকে আসা আবু সাইদ বলেন, পরিবারের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো খুবই দ্রুত কেটে গেল। কিভাবে যে এতোগুলো দিন পার হয়ে গেল, বুঝতেই পারিনি। আপনজনদের ছেড়ে আসতে খুবই খারাপ লাগছে। কিছুদিন পরই শুরু হবে ক্লাস। ভোলা থেকে থেকে আসা মমিন বলেন, এবারের ঈদে তেমন একটা সমস্যা হয়নি। রাস্তা-ঘাট অনেকটাই ফাকা ছিল। অগ্রিম টিকিট কাটা ছিল। তাই আসতেও কোনো ঝামেলা পোহাতে হলো না।তবে সাভার-আশুলিয়ার কল-কারখানা এখনো বন্ধ রয়েছে। এখনো শুরু হয়নি কাজের চাপ। আগামী আরো দু একদিনের মধ্যেই কল-কারখানার শ্রমজীবী মানুষেরাও ফেরা শুরু করলে আবার মুখরিত হয়ে উঠবে পুরো এলাকা।
ঈদ-উল ফিতরের টানা নয়দিনের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে ঢাকায় ফিরছেন হাজারো মানুষ। মহাসড়কে যানজট না থাকায় স্বস্তিতে ফিরতে পেরে সবাই বেশ খুশি। রোববার সকাল থেকেই রাজধানীর গাবতলী আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালে দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছাড়া দূরপাল্লার বাসগুলো নির্দিষ্ট সময়ে গাবতলীতে যাত্রী নামাচ্ছে।
মানুষের মধ্যে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি।ঈদের মাত্র একদিন পর থেকেই বরিশাল নৌ-বন্দরে স্বাভাবিকের চেয়ে রাজধানীমুখী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। যার ধারবাহিকতায় এ ভিড় কয়েকগুণ বেড়েছে রোববার। বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যেই বহু লঞ্চের ডেকের জায়গা দখল হয়ে গেছে।বরিশাল নৌ বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে সুরভী, সুন্দরবন, পারাবত, টিপু, ফারহান, দীপরাজ, কালামখান কোম্পানির ১৪ টি লঞ্চ ও সরকারি ২টি জাহাজ ঢাকার উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে রওয়ানা দেবে। অপরদিকে, যাত্রীদের নিরাপত্তার লক্ষে নৌ-বন্দরের প্রবেশ দ্বারগুলোতে নিরাপত্তা গেট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি সন্দেহজনক যে কাউকে তল্লাশি চালানোর জন্য পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। নৌ-বন্দরের টার্মিনাল জুড়ে আনসার বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। নদীতে নৌ-পুলিশের সদস্যরা টহল দিচ্ছে, পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশের সহযোগিতায় লঞ্চগুলোতে নজরদারি রাখছেন। যেন কোনো লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে না পারে।এদিকে স্কাউট, মেডিকেল টিম ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদেরও টার্মিনাল এলাকায় সক্রিয় অবস্থানে দেখা গেছে। বরিশাল নৌ-বন্দরে লঞ্চের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে শুধু বরিশাল নগরের নয়, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি জেলারও মানুষ রয়েছেন। এ নৌ-বন্দরে অন্যান্য স্থানের চেয়ে লঞ্চ বেশি থাকা ও বড় বড় বিলাশবহুল লঞ্চ থাকায় যাত্রীরা এখানে বেশি ভিড় জমাচ্ছেন।যাত্রীরা জানান, নৌ-পথে যানজট যেমন নেই, তেমন বড় বড় লঞ্চ হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কম। তাই সবকিছু ঠিক থাকলে হাসিমুখেই কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন সবাই।বাড়তি যাত্রীর জন্য ঈদের পরদিন থেকেই বাড়তি লঞ্চ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেণ সুন্দরবন লঞ্চের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা জাকির হোসেন। ভোলার বোরহান উদ্দিনের হাকিমউদ্দিন লঞ্চঘাটের দায়িত্বরত জনাব নুরু মিয়া জানান, যাত্রীদের চাপ থাকলেও কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে রাজি নন তারা। তাই যাত্রী হলে নির্ধারিত সময়ের আগেই লঞ্চগুলো ঘাট ত্যাগ করে।