শুক্রবার ● ১ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » ছুটির প্রথম দিনে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল:পথে চরম ভোগান্তি
ছুটির প্রথম দিনে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল:পথে চরম ভোগান্তি
ঢাকা : সরকারের নির্বাহী আদেশে টানা ৯ দিনের ঈদের ছুটি শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। ঈদের এই দীর্ঘ ছুটিতে ইতিমধ্যেই ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শেষ কর্মদিবসে বৃহস্পতিবার বহু মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। আর শুক্রবার সকাল থেকে এই ঈদযাত্রা অব্যাহত আছে। গত কয়েক দিন ধরে বিশেষ করে বৃহস্পতিবার বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়ার কারণে রাজধানীতে মানুষ কমে গেছে। শুক্রবার থেকে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে মানুষের ভিড় ছিল লক্ষ্যে করার মতো। তবে এবার ঈদযাত্রায় এখন পর্যন্ত ঘরে ফেরা মানুষদের নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।শুক্রবার সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট লঞ্চঘাট ও কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের যে চাপ ছিল তার তুলনায় আজকের ভিড় ছিল কিছুটা কম। অবশ্য ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে যাওয়ার জন্য মহাখালী ও গুলিস্তানে ভিড় বেশি দেখা গেছে। তবে সার্বিক ভাবে এবার ঈদ যাত্রায় এখন পর্যন্ত তেমন ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলছে ৩ ও ৪ জুলাই ভিড় বাড়বে। এ সময় বেসরকারি চাকরিজীবীদের ছুটি শুরু হবে। তবে তাঁদের ধারণা এবার ঈদের লম্বা ছুটি হওয়ায় অন্যান্য বারের মতো যাত্রীদের ভোগান্তি হবে না। সময় মেনেই চলছে ট্রেন: ট্রেনের সময়সূচিতে বিপর্যয় নেই। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন আসছে। প্ল্যাটফর্ম ছেড়েও যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ে। তাই যাত্রীদেরও নেই হুড়োহুড়ি। শুক্রবার সকাল থেকে এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। শুক্রবার থেকে ঈদের ছুটি শুরু হলেও নির্ধারিত সময়ে ট্রেন আসা-যাওয়া করায় কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের কোনো চাপ নেই। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মতে, পোশাকশিল্প কারখানাসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ছুটি ৩ ও ৪ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার পর ভিড় বাড়বে।কমলাপুর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত ট্রেনের সময়সূচিতে কোনো বিপর্যয় দেখা দিলে প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ কারণে প্রচ- ভিড় হয়। শুক্রবার নির্ধারিত সময়ে ট্রেন আসায় এবং ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। তাই কোনো ভিড় নেই।রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ১৩টি আন্তনগর ট্রেন ঢাকা ছেড়েছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। অন্যগুলোর সময়সূচি ঠিক ছিল। দেরি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে ঢাকা রেলওয়ে পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মজিদ বলেছেন, ওই দুটো আন্তনগর ট্রেন ঢাকা আসতেই দেরি করেছে। এরপর ইঞ্জিন পরিবর্তন ও ট্রেনের কামরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য সময় নেওয়া হয়েছে। এসব কারণে ট্রেন ছাড়তে এক ঘণ্টা দেরি হয়েছে। ঈদ আসলেই ইট-কাঠের নগর ছেড়ে মা-বাবাসহ প্রিয়জনের কাছে ছুটে যান রাজধানীবাসী। সামনে সেই খুশির ঈদ আর তাই তো বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বিকেল-সন্ধ্যার পর থেকেই কমলাপুর ট্রেন স্টেশনে বাড়তে থাকে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। টার্মিনাল, ট্রেনের ছাদ কিংবা বগির সংযোগস্থলসহ সর্বত্র ছিল যাত্রীদের পদচারণায় মুখর।তবে ঈদযাত্রার প্রথম বিকেলেই রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি নির্ধারিত সময়ের ৪০ মিনিট পরে ছেড়েছে প্লাটফর্ম।কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, জামালপুরগামী ট্রেনের ছাদে যাত্রীদের ভিড় বেশি। জামালপুরগামী ট্রেনটির সব বগিই ছিল যাত্রীতে একদম পূর্ণ। এছাড়া রাজশাহীগামী দ্রুতগতির সিল্ক সিটিতেও অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখা গেছে।জামালপুরের ট্রেনে কথা হয় ৬০ বছরের মোবারক আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের সময় বাড়ি যাওয়াডাই আসল কথা, ক্যামনে গেলাম হেইডা কোনো কথা নয়। তয় আজই এমন ভিড় হইবো বুঝি নাই। পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজশাহীগামী ট্রেনে উঠেছেন সরকারি কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, অফিস মতিঝিলে, তাই বাসার সবাইকে বলে দিয়েছিলাম আগেই জিনিসপত্র নিয়ে স্টেশনে চলে আসতে। আমি অফিস থেকে বের হয়ে সরাসরি চলে এসেছি। ট্রেনে ভিড় বাড়ার আগেই চলে যাচ্ছি, তা না হলে ঈদের ভিড়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী দেরিতে সিল্ক সিটি যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ট্রেনটি ফিরে আসতে কিছুটা দেরি হওয়ায় এদিকেও কিছুটা দেরি হয়েছে। যাত্রীদেরও তো ট্রেনে ওঠার সময় দিতে হবে।এদিকে, রেলযাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ� ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কমলাপুরে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, খোলা হয়েছে তথ্যসেবা কেন্দ্র। কমলাপুর রেল স্টেশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের নিরাপত্তায় পুলিশ সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছে। এখানে যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি না হয় এ জন্য দুটি তথ্য সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ট্রেনে চেপে ঈদে বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন ঢাকার কর্মরত মানুষজন। তবে ছুটির প্রথম দিন হওয়ায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে মানুষের তেমন চাপ নেই।সময় মতো ট্রেন ছেড়ে যাওয়ায় চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী।শুক্রবার ঈদের ছুটির প্রথম দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৪টি ট্রেন ছেড়ে গেছে কমলাপুর স্টেশন থেকে। এর মধ্যে একটু বিলম্বে ছেড়ে গেছে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও ধুমকেতু। স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, খুলনা থেকে ঢাকায় পৌছাতে বিলম্ব হওয়ায় সুন্দরবন কমলাপুর ছাড়াতে বিলম্ব হয়। একই কারণে ধূমকেতুও ছাড়তে বিলম্ব হয়। মানুষের খুব একটা চাপ নেই এর কারণ উল্লেখ করে স্টেশন ম্যানেজার বলেন, মানুষ এসে ট্রেন পাচ্ছে এবং চলে যাচ্ছে। ট্রেন বিলম্ব নেই। এটা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছেন তারা। অতিরিক্ত বগি লাগানো হয়েছে বেশিরভাগ ট্রেনে। ছাদে যেন কেউ না উঠে সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখবে রেল কর্তৃপক্ষ।ঈদের আগের ৩ দিন থেকে ৩ জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলাচল শুরু করবে। রেলস্টেশনের তথ্যে দেখা দেছে, প্রতিদিন ১৩২ টি ট্রেন কমলাপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে আসা যাওয়া করে। ঈদের আগের ৩ দিন থেকে আরও ৩ জোড়া ট্রেন চলাচল বাড়বে।এদিকে, গাবতলীর শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের কর্মী মজিদ বললেন, যাত্রীদের বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। আবার ছেড়ে যাচ্ছে। তবে তাঁর দাবি এখন পর্যন্ত বিশেষ �ট্রিপ� চালু হয়নি। ৩ ও ৪ জুলাই গাড়ির অতিরিক্ত �ট্রিপ� দেওয়ার কথা আছে।সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে খুলনার উদ্দেশ্যে হানিফ পরিবহনের একটি গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেটি ১০ টা ৩৫ মিনিটে ছেড়েছে। ওই গাড়ির যাত্রী অভিজিৎ বললেন, বাসস্ট্যান্ডে আসতে বা বাস পেতে দেরি হয়নি। ১৫ থেকে ২০ মিনিট বা আধা ঘণ্টা অন্য সময়েও দেরি হয়। তবে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, নরসিংদীগামী গাড়িগুলোতে উঠতে সকালের দিকে লাইন ছিল। এসব গাড়ির জন্য আগে থেকে টিকিট দেওয়া হয় না। ফলে গাড়ি থাকা সাপেক্ষে লাইনে দাঁড়িয়েই টিকিট কাটতে হয়।মহাখালী থেকে ময়মনসিংহগামী বাস এনা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার বললেন, রাস্তায় যানজট নেই। ফলে গাড়িগুলো সময়মতো আসছে। যাত্রীদের খুব বেশি সময় লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে এমন নয়। তবে অন্য সময়ের তুলনায় যাত্রী বেশি হওয়ায় ঈদের সময়টায় ভোগান্তি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।সকালের দিকে ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী লঞ্চগুলোতে ভিড় ছিল বেশি। তবে সদরঘাটে উপচে পড়া ভিড় ছিল না। বিকেলের দিকে বরিশালগামী লঞ্চগুলো ছাড়ছে। ওই সময়ে এখানে ভিড় বাড়বে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। দাদু মনির সাথে ঈদ কত্তে যাচ্ছি আধো আধো স্বরে বলছিলো লামিয়া। লামিয়া বাবা-মায়ের সাথে এনা পরিবহনে যাচ্ছে ময়মনসিংহে দাদার বাড়িতে। লামিয়ার পরিবারের মতো হাজারো নগরবাসী ঈদে টানা নয় দিনের ছুটিতে ছুটছেন নাড়ির টানে।শুক্রবার মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে ভোর থেকে যাত্রীদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। কেউবা ছুটছেন বাবা-মায়ের কাছে কেউবা আবার দাদা-দাদী, নানা-নানীর কাছে। তবে অন্যান্যবারের মতো টিকিটের জন্য ঝক্কি পোহাতে হয়নি বলে জানিয়েছেন লামিয়ার বাবা মোকসেদ আলম। তিনি বলেন, অন্যবার তো ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় মহাখালীতে সকালে আসলে দুপুর হয়ে যেত টিকিট পেতে। কিন্তু এবার সকালে এসেই টিকিট পেলোম। বাসও ছাড়ছে সময়মতো।শৃঙ্খলায় টিকিট বিক্রি করতে পেরে খুশি পরিবহন কোম্পানির কর্মকর্তারা। এনা পরিবহনের মহাখালীর বুকিং মাস্টার মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, কে ঝামেলা পছন্দ করে বলেন। অন্যান্যবার সময় কম থাকে যাত্রী বেশি। ফলে অনেক চাপ থাকে। টিকিট দিতে সময় লাগে। রাস্তায় জ্যাম থাকে। গাড়ি ছাড়তে লেট হয় আর যাত্রীদের গালাগাল সহ্য করতে হতো আমাদের। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। যে যখন আসছে টিকিট পাচ্ছে। সব শৃঙ্খলা মাফিক হচ্ছে। গাড়িও ছাড়ছে সময়মতো।অন্যদিকে সহজে টিইকট পেলেও রাস্তায় জ্যাম থাকবে কি না তাই নিয়ে চিন্তিত তিতাস পরিবহনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রী মোমেন ইসলাম। তিনি বলেন, এবার তো ভালোয় ভালোয় টিকিট পেলাম। এখন রাস্তায় যানজট না থাকলেই মিটে গেলো। টানা নয় দিনের ঈদের ছুটিতে অনেকেই পরিবার পরিজন আরো আগেই গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে ৩ জুলাই থেকে আবার ভিড় বাড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। পিপিএল সুপার পরিবহনের কর্মকর্তারা জানান, ৩ জুলাই থেকে রাজধানীর গার্মেন্টসগুলোতে ঈদের ছুটি শুরু হবে। তখন আবার লালমনিরহাট যাবো। এখানে এসেছি রাত সাড়ে ১১টায়। রাত ১২টা থেকে বসিয়ে রেখেছে তারা। বলছে, লালমনিরহাটের গাড়ি আসবে। কিন্তু প্রায় দুই ঘণ্টা হয়ে গেছে, একটি গাড়িও আসেনি। তাও বলছে, গাড়ি আসছে-আসছে। এখন সারারাত বাসস্ট্যান্ডে বসে থাকতে হবে কিনা কে জানে। বুধবার মধ্যরাত ২টার দিকে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে এ কথা বলছিলেন লালমনিহাটের বাসের জন্য অপেক্ষমান যাত্রী রাসেদুল ইসলাম। তার মতোই অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেল আরও জনাবিশেক যাত্রীকে, যাদের মধ্যে রয়েছেন নারী-শিশু-বৃদ্ধও।রাত ১২টার পর বন্ধ হয়ে যায় গাবতলী বাস টার্মিনালের সব পরিবহনের টিকিট কাউন্টার। সেই সুযোগে সক্রিয় হয়ে ওঠে একটি চক্র। আর তাদের হাতে হয়রানির শিকার হতে হয় রাসেদুল ইসলামের মতো নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ দূরপাল্লার যাত্রীদের। এবারের ঈদকে সামনে রেখে চক্রটির প্রতারণার পরিসর আরও বেড়েছে। বুধবার মধ্যরাতে গাবতলী টার্মিনাল এলাকা ঘুরে যাত্রী হয়রানির তেমন চিত্রই দেখা যায়। টার্মিনালের সামনের রাস্তায় একটা ছোট্ট টেবিল পাতা। তার ওপরে কিছু টিকিট রাখা। সঙ্গে রয়েছে একটি চেয়ার ও দু�টি বেঞ্চ। এই টেবিল-চেয়ার সাজিয়ে �টিকিট বিক্রি� করছে ৭-৮ জনের একটি দল। এই দলটি সক্রিয় থাকে ভোর ৫টা পর্যন্ত।তাদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, যখন টার্মিনালের সব ধরনের দূরপাল্লার বাস গাবতলী থেকে চলাচল বন্ধ হয়, সেসময় থেকে শুরু হয় এই কার্যক্রম। কাউন্টার বন্ধ থাকে বলে মধ্যরাতের যাত্রীদের গাড়িতে তুলে দিতেই তারা রাত জেগে এই �সেবা� কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। টার্মিনালের সব পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ থাকার পরও কীভাবে যাত্রীদের গাড়িতে তুলে দেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অস্থায়ী টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেন, অনেক বাস নারায়ণগঞ্জসহ ওই অঞ্চল থেকে গাবতলী হয়ে যায়। বাস মালিক সমিতির অনুমতি নিয়েই গভীর রাতে যাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের এই কার্যক্রম।তিনি বলেন, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের সব রুটের শ্যামলী, ঈগল, হানিফ, সোহাগ, মামুন স্পেশাল ও মিতু পরিবহনের সিট ফাঁকা থাকলে যাত্রী তুলে দেই। এ বিষয়ে আলামিন নামের আরেকজন জানান, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে একাধিক পরিবহন গাবতলী হয়ে মধ্যরাতে উত্তরাঞ্চলে যায়। আর অনেক সময় এসব গাড়ির সিট ফাঁকা থাকে। তখন যাত্রীদের সেসব গাড়িতে তুলে দেই।আলামিনের কথা, টাকার জন্য আমরা এই কাজ করি না। যাত্রীদের সেবার জন্য রাত জেগে কাজ করি। কয় টাকা আসে এখান থেকে সেটা বড় কথা নয়, কতো মানুষের উপকার হচ্ছে সেটাই বড় কথা। তিনি জানান, প্রতিযাত্রীর জন্য পরিবহন থেকে ২০-৫০ টাকা বকশিস পান তারা। তবে যাত্রীর কাছ থেকে পরিবহনের নির্ধারিত ভাড়াই নেন। দিলু-আলামিনরা এমন দাবি করলেও যাত্রীদের অভিযোগ ভিন্ন। তারা বলছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে কেবলই যাত্রীদের হয়রানি করছে চক্রটি। উপরন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেয়।ইমরান নামে বগুড়ার এক যাত্রী জানান, রাত ১২টার দিকে তিনি গাবতলী এসেছেন। লোকাল গাড়ি চলাচল করছে। তিনি সেসব গাড়িতে ওঠেন না। তখন এই চক্রের সদস্যরা তাকে ভালো গাড়িতে তুলে দেওয়া বলে আশ্বাস দেয়। টিকিট কেটে নিলেও রাত ২টা পর্যন্তও কোনো খবর নেই বাসের। ইমরান বলেন, এরা আসলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। শুধু শুধু যাত্রীদের বসিয়ে রেখে কস্ট দিচ্ছে।ইমরানের বক্তব্য অনুযায়ীই দেখা যায়, অশীতিপর বৃদ্ধা-নারী-শিশুসহ আরও জনাবিশেক যাত্রীকে এভাবে অপেক্ষায় বসিয়ে রেখেছে চক্রটি। কোনো পরিবহন এলেও সেসব সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে।াত্রীরা জানান, কাউন্টার নির্ধারিত ভাড়া রাখার কথা বলে যাত্রীপ্রতি ৫০-১০০ টাকা বেশি নিচ্ছে চক্রটি। অর্থাৎ তারা পরিবহন থেকেও �বখশিস� নিচ্ছে, �বখশিস� নিচ্ছে যাত্রীর কাছ থেকেও। টানা নয় দিনের সরকারি ছুটির প্রথম দিন শুক্রবার (০১ জুলাই) সকাল থেকেই গাবতলীতে অগ্রিম টিকিট সংগ্রহকারী যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। এসব যাত্রীরা অধিকাংশই চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থী। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের বিশাল ঢল ধীরে ধীরে কমে আসছে।যশোরের যাত্রী সুমন তালুকদার গাবতলীতে বাসের অপেক্ষায়। সকাল সাড়ে ৮টায় বাস আসার কথা থাকলেও ৯টায়ও তার বাসের খবর নেই। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নয় দিনের ছুটি পেয়েছি। বৃহস্পতিবারও রাতে যেতে পারতাম। কিন্তু বাসার টুকিটাকি কাজ সম্পন্ন করে আজ বাড়ি যাচ্ছি।এদিন সকালে যেসব যাত্রীরা গাবতলীতে টিকিট সংগ্রহ করছেন তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুলনার আমির রশিদ জানান সৌখিন পরিবহনে ৬২০ টাকা দিয়ে তিনি টিকিট সংগ্রহ করেছেন। অথচ অন্যান্য সময় একই রুটের ভাড়া ৫২০ টাকা। ওই যাত্রী বলেন, বাগে পেয়ে নগদের উপর ১০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া রাখছে সৌখিন।তবে সৌখিন পরিবহনের ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, অন্যান্য সময় যাত্রী কম তাই ভাড়াও কম রাখতাম কিন্তু এখন সরকারি রেটের ভাড়া রাখছি। কারোর কাছ থেকে বেশি রাখছি না কমও রাখছি না।তবে বর্তমানে যাত্রীদের যে ঢল তা চার তারিখ থেকে আরও বাড়বে। লম্বা ছুটি হওয়ায় অন্যান্য ধর্মালম্বীরাও বাড়ি ফিরছেন। সরকারি চাকরিজীবী পরিমল কর বলেন, লম্বা ছুটি পরিবারের সঙ্গে কাটানোর জন্যই বাড়ি যাচ্ছি। তাছাড়া উৎসব তো সবার জন্য!যাত্রী ঢল প্রসঙ্গে সহকারী পুলিশ কমিশনার খায়রুল আমিন (ট্রাফিক দারুস সালাম জোন) বলেন, থেকে প্রেসার শুরু হয়েছে। শুক্রবার ভোর পাঁচটা থেকে চাপ ছিল। সেটা কমে এসেছে ৮টার বাজার পর। এখনও যাত্রী আছে তবে চার তারিখ থেকে চাপ সব থেকে বেশি থাকবে। তবে লম্বা ছুটি হওয়ার কারণে অন্যান্য বারের মতো তীব্র ভিড় এবার হবে না।জাতীয়ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল নেমেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। মানুষের ভিড়ে মুখরিত ঘাট, প্লাটফর্ম, লঞ্চের ডেক আর করিডোর। নাড়ির টানে ছুটে চলছেন যে যার গন্তব্যে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঈদের আগে সরকারি কার্যদিবসের শেষদিনে এবং শুক্রবার (০১ জুলাই) ঈদের ছুটির প্রথম দিন সকালে সদরঘাট কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনালে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।সরকারি শেষ কার্যদিবস শেষে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ঈদ-উল ফিতরের লম্বা ছুটি। ৯ দিনের দীর্ঘ কর্মবিরতি। বৃহস্পতিবার অফিসে কাজ শেষ করেই ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে দলে দলে মানুষ ঢাকা ত্যাগ করেছেন। অনেকে নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটছেন শুক্রবার ভোর থেকে।সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের সামনের ভাগ থেকে শুরু করে লঞ্চের ডেক পর্যন্ত মানুষের ভিড়। টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন, প্লাটফর্মে যাত্রীরা বসে আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ঘাট থেকে লঞ্চের দিকে মানুষের �্রােত। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল কেন্দ্র এই সদরঘাট নৌ-বন্দর। এখান থেকে পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, হাটুরিয়া, ভান্ডারিয়াসহ দেশের ৪১টি নৌ-পথের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন প্রায় ১৮০টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। সরকারি চাকরিজীবী রাশেদুল হাসান তার আটজনের পুরো পরিবার নিয়ে ঈদ কাটাতে যাচ্ছেন বরিশালে। এ পরিবারের শান্তি, নওরিন, মিথিলা, আতিয়া, মিনা ও নাবিলা জানালো যে, ওরা অনেক আনন্দে আছে।স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী, ব্যাচেলর চাকরিজীবী, বয়স্ক মানুষসহ বিভিন্ন পেশার অসংখ্য মানুষও ব্যাগ, বস্তা এবং অন্য সামগ্রী হাতে-কাঁধে চাপিয়ে বাড়ি ফিরছেন।সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-বরিশাল রুটের সুন্দরবন-৬, সুন্দরবন-১০ ও সুরভী-৯, ঢাকা-পটুয়াখালী রুটের দ্বীপরাজ-২, সুন্দরবন-৯ ও এমভি ঈগল, ঢাকা-ভোলা রুটের এমভি দিঘলদী, কর্ণফুলী-১০ ও এমভি ইয়াদ, ঢাকা-চাঁদপুর রুটের এমভি মধুমতি ও নিউ আল বোরাক, ভাষানচরের স�্রাট-২ লঞ্চগুলোর কোথাও এক চুল ফাঁকা নেই। লঞ্চের কেবিন, বারান্দা, ডেক, করিডোর এমনকি ছাদেও মানুষ আর মানুষ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পক্ষ থেকে যাত্রীদের সুবিধার্থে পণ্টুনগুলোতে বড় করে লিখে দেওয়া হয়েছে- কোন ঘাটের লঞ্চ কোথায় দাঁড়ানো থাকবে। যেমন: ঘোষেরহাট, ভোলা, বোরহানউদ্দিন, হাতিয়া,লালমোহন, বরগুনা, মুলাদী। তবে এখানে রয়েছে ত্রটি।কিছু কিছু পন্টুনে গন্তব্যস্থলের নাম লেখা নাই। সেসব এলাকার যাত্রীরা পড়ছেন মহাবিপাকে।ব্যাংকার মোহাম্মাদ জাকির হোসেন ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন, হাইমচরের চরভৈরবী। ৯ জুলাই ঢাকায় ফিরে অফিস ধরবেন।তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, তিন ঘণ্টায়ও কাঙ্খিত লঞ্চ খুঁজে পাইনি। কেউ বলছেন, ওদিকে, কেউ বলছেন, এদিকে। একবার ওই দিকটায় যাচ্ছি, একবার এই দিকটায় আসছি। কিন্তু লঞ্চ আর খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ঘাটের নামটা যদি ছোট্ট করেও দেওয়া থাকতো, তাহলে এত কষ্ট হতো না। অনেক ঘাটের নামই এখানে দেওয়া নাই। অথচ দেওয়ার জায়গা ছিলো। এতো এতো লঞ্চের মধ্যে বুঝতেই পারছি না, আমার লঞ্চ কোনটা ।মাদ্রাসার চাকরিজীবী মাইদুল ইসলাম বলেন, একটু দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে, কিন্তু টিকিট পেয়েছি। এখন সহি সালামতে বরিশালে পৌঁছাতে পারলেই হয়।