বৃহস্পতিবার ● ১৬ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » পাঁচ দিনে ১৬৬ জঙ্গিসহ গ্রেপ্তার প্রায় ১২ হাজার
পাঁচ দিনে ১৬৬ জঙ্গিসহ গ্রেপ্তার প্রায় ১২ হাজার
ঢাকা নিউজ ডেস্ক: দেশব্যাপী পুলিশের চলমান জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযানের পঞ্চম দিনে সারা দেশে ২১ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ১৭ জন, হিযবুত তাহরীর একজন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুজন ও হরকাতুল জিহাদের একজন রয়েছে।মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসংক্রান্ত অভিযান ১৩ জুন শেষ হওয়ায় এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।এ নিয়ে পাঁচ দিনে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১১ হাজার ৭০৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান জানান, ৬ জুন থেকে শুরু জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শেষ হবে ১৭ জুন। পুলিশের পাঠানো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রথম দিনে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ৩৭ জনের মধ্যে ২৭ জন জেএমবি ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের (জেএমজেবি) সাতজন রয়েছে। বাকি তিনজনের পরিচয় সম্পর্কে জানায়নি পুলিশ সদর দপ্তর। ওই দিন গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১ হাজার ৮৬১ জন, নিয়মিত মামলার ৯১৭ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলার ১৯ জন ও মাদক উদ্ধার মামলার ৩৫৮ জন রয়েছে।দ্বিতীয় দিনে গ্রেপ্তারকৃত ৪৮ জঙ্গি ছাড়া অন্যদের মধ্যে ১ হাজার ৪৯৬ জন গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। আর নিয়মিত মামলার আসামি ৫৮৮ জন।তৃতীয় দিনের অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ২ হাজার ৫৭৮ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ১৯ জন, মাদক উদ্ধার মামলায় ১৬০ জন ও অন্যান্য মামলায় ৪৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জঙ্গি ছিলেন ৩৪ জন। চতুর্থ দিনের অভিযানে ২৬ জন জঙ্গি ছাড়া পরোয়ানাভুক্ত ২ হাজার ৩৬৮ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ৩৮ জন, মাদক উদ্ধার মামলায় ২৯৫ জন ও অন্যান্য মামলায় ৩৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।সাঁড়াশি অভিযান: পঞ্চম দিনে গ্রেপ্তার ২১ জঙ্গি দেশজুড়ে চলা সাঁড়াশি অভিযানের পঞ্চম দিনে মোট গ্রেপ্তারের তথ্য না দিলেও জঙ্গি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট আরও ২১ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।পুলিশের হিসাবে এ নিয়ে পাঁচ দিনে মোট ১৬৬ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হল। পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল হাসান বুধবার জিজ্ঞাসায় ২১ জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানান।মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এদের গ্রেপ্তার করে।জঙ্গিদের মধ্যে ১৭ জন জেএমবি, দুজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য, একজন হিযবুত তাহরীর ও একজন হুজি সদস্য, বলেন কামরুল।তাদের থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ৪টি ককটেল, ৫০০ গ্রাম গান পাউডার, ৫টি পেট্রোল বোমা ও ১০টি জিহাদি বই উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি। দেশজুড়ে চলা এ অভিযানের পঞ্চম দিনে অন্য কাউকে আটক বা গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য পুলিশের তথ্য কর্মকর্তার কাছে পাওয়া যায়নি।চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুন হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার সপ্তাহব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানের সিদ্ধান্ত আসে।পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিযানের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ জঙ্গি সহ ৩ হাজার ১৯২ জন, দ্বিতীয় দিন ৪৮ জঙ্গি সহ ২ হাজার ১২৮ জন, তৃতীয় দিন ৩৪ জঙ্গি সহ ৩ হাজার ২৪৫ জন এবং চতুর্থ দিনে ২৬ জন জঙ্গিসহ ৩ হাজার ১১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।বিএনপি শুরু থেকেই এই সাঁড়াশি অভিযানকে সরকারবিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ান চালানোর কৌশল হিসেবে অভিযোগ করে আসছে।অভিযানের প্রথম তিন দিনে গ্রেপ্তার হওয়া আট হাজার মানুষের মধ্যে তাদের অন্তত ২১ শ নেতাকর্মী ছিল বলে দলটির অভিযোগ।তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, পুলিশের এই অভিযানে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অভিযানের ৬ষ্ঠ দিনে জেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রোমানসহ ৫৭জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সদর উপজেলায় ছাত্র শিবিরের সাবেক সভপাতি রাশেদুল ইসলাম রোমানসহ ৪ জন, উলিপুর উপজেলায় ১৫ জন, চিলমারী উপজেলায় ৫ জন, রৌমারী উপজেলায় ৫ জন, রাজিবপুর উপজেলায় ৬ জন, নাগেশ্বরী উপজেলায় ৩ জন, ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় ৭ জন, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৬ জন ও রাজারহাট উপজেলায় ৬ জন। পুলিশ সুপার তবারক উল্ল্যাহ জানান, সন্ত্রাস দমন আইনে অভিযান চালিয়ে জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আটক ছাত্র শিবির নেতা রোমানকে ১৫১ ধারায় আটক করে নিয়মিত মামলার আসামি হিসেবে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি ৫৬ জন এজাহারভুক্ত নিয়মিত মামলার আসামি। সাতক্ষীরা :জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সাতক্ষীরায় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের ৬ষ্ঠ দিনে জামায়াত-শিবিরের নয় জন কর্মীসহ মোট ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত জেলার আটটি থানায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে, সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে ১১ জন, কলারোয় থানা থেকে ৬ জন, তালা থানা ১০ জন, কালিগঞ্জ থানা ৮ জন, শ্যামনগর থানা ৬ জন, আশাশুনি থানা ৪ জন, দেবহাটা থানা ৪ জন, ডিবি পুলিশ একজন এবং পাটকেলঘাটা থানা থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়।এদিকে, গত ছয়দিনে এনিয়ে জেলায় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে মোট ২শ ৭১ জনকে আটক করা হয়েছে।সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইও (পরিদর্শক) এস,আই কুমকুম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় মামলা রয়েছে। টাঙ্গাইল :সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানের ষষ্ঠদিনে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এক জেএমবি সদস্যসহ ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্গলা রক্ষাকারী বাহিনী। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) আসলাম খান জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওয়ারেন্টভুক্ত বিভিন্ন মামলার আসামী ও নাশকতা করতে পারে এমন সন্দেহভাজনসহ ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে জেএমবি সদস্য হাবিবুর রহমানকে (২৬) বাসাইল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।