সাঁড়াশি অভিযানে ৩৭ জঙ্গিসহ দুইদিনে গ্রেপ্তার ৩১৯২ জন

ঢাকা : গত ২৪ ঘণ্টায় সাঁড়াশি অভিযানে সারা দেশে গ্রেপ্তার হয়েছে ৩ হাজার ১৯২ জন। তাদের মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছে ৩৭ জন। বাকি ৩ হাজার ১৫৫ জনকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।শুক্রবার সকাল থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ৩৭ জনের মধ্যে ২৭ জন জেএমবি, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের ৭ জন রয়েছেন। বাকি তিনজনের পরিচয় সম্পর্কে জানায়নি পুলিশ সদর দপ্তর।শনিবার পুলিশ সদরদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানিয়ে বলা হয়, তাদের মধ্যে এক হাজার ৮৬১ জনকে আদালতের পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যে ৩৭ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার মধ্যে ২৭ জন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য ও সাতজন জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের (জেএমজেবি) সদস্য।বাকি তিনজন অন্যান্য সংগঠনের বলে জানানো হলেও ধারণা করা হচ্ছে, তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। এই তিনটি সংগঠনই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩৭ জনের মধ্যে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নড়াইল ও গাইবান্ধা জেলা এবং রাজশাহী মহানগর পুলিশ একজন করে জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।রাজশাহী জেলা পুলিশ জেএমবির দুইজনকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ তিনজনকে, বগুড়া জেলা পুলিশ ১১ জনকে, দিনাজপুর জেলা পুলিশ দুইজনকে ও কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ দুইজনকে এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ অন্যান্য সংগঠনের তিন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে।রাজশাহী জেলা পুলিশ দুই জেএমবি সদস্যের পাশপাশি জেএমজেবির সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত এক বছরে লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের হত্যার পাশাপাশি বিদেশি, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক, বৌদ্ধ ভিক্ষু আক্রান্ত হওয়ার পর সম্প্রতি চট্টগ্রামে একই কায়দায় এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী খুন হওয়ার পর এই সাঁড়াশি অভিযানের যোষণা আসে।শুক্রবার শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী এই অভিযানের প্রথম দিনে সহরাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের খবর এসেছিল স্থানীয় পর্যায় থেকে।সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩৭ জঙ্গি ছাড়া আদালত কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, নিয়মিত মামলা, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার মামলায় মোট ৩ হাজার ১৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।এর মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ১ হাজার ৮৬১ জন, নিয়মিত মামলার ৯১৭ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলার ১৯ জন এবং মাদক মামলার ৩৫৮ জন রয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় একটি শুটার গান, ৫০০ গ্রাম গানপাউডার এবং ১৫টি হাতবোমা, ২১টি জেহাদী বই, ১৫টি ডায়েরি এবং ৭৫৭টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। জেএমবি সদস্যদের মধ্যে গাজীপুরে একজন, ময়মনসিংহে একজন, শেরপুরে একজন, রাজশাহীতে দুজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনজন, সিরাজগঞ্জে একজন, বগুড়ায় ১১ জন, নড়াইলে একজন, দিনাজপুরে দুজন, গাইবান্ধায় একজন, কুড়িগ্রামে দুজন ও রাজশাহী থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে ঢাকা জেলা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া তিন জঙ্গির সাংগঠনিক পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া রাজশাহী থেকে জেএমজেবির সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।সাঁড়াশি অভিযান চলাকালে একটি শাটার গান, ৫০০ গ্রাম গানপাউডার, ১৫টি ককটেল, ২১টি জিহাদি বই ও ১৫টি ব্যক্তিগত ডায়েরি উদ্ধার করে পুলিশ।গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় ১ হাজার ৮৬১ জন, নিয়মিত মামলায় ৯১৭ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ১৯ জন ও মাদক উদ্ধার মামলায় ৩৫৮ জন রয়েছেন।অভিযানে গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৩৭ জঙ্গি বাদে বাকিরা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশ একটি বড় অভিযান চালাচ্ছে। এখানে ফোর্সও বেশি থাকে। ফলে বিভিন্ন মামলার আসামিরাও এই অভিযানের সময় ধরা হয়েছে। বগুড়ায় : বগুড়ায় জিহাদী বই ও ধারাল অস্ত্র সহ ১১ জঙ্গীকে গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা জামায়াত শিবিরের ক্যাডার, তারা ভিন্ন ব্যানারে নাশকতার পরিকল্পনার জন্য বৈঠক করছিলো। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ি ৩৬ টি জিহাদী বই ও ২টি ধারাল অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানায়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- সাদ্দাম হোসেন(২৬), সাইফুল ইসলাম(২৭), ফারুক হোসেন(৩৫), সাদ্দাম আলী(২১), সানাউল্লাহ রানা(২১), সালমান কবির রাসেল(২০), আব্দুল আজিজ(২৪), আমিনুল ইসলাম(৩২), সোহাগ আলী(২২), বিপ্লব মন্ডল(২০) ও আজিজুর রহমান(২৩)।পুলিশ জানায়, বন্ধু ফান্ড বায়তুল মাল নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে গোপন বৈঠক চলার খবরে শুক্রবার পুলিশ শহরের খোকন পার্ক এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় সেখান থেকে মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়ে গ্রেফতারকৃতরা গোপন বৈঠকের মাধ্যমে জিহাদী বই বিতরণ ও নাশকতার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধংসের পরিকল্পনা করছিলো। সুত্র জানায়, গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীরা জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং গোপনে তারা জঙ্গী কার্যক্রমের জন্য বন্ধু ফান্ড বায়তুল মাল নাম দিয়ে ছদ্মনামে সদস্য সংগ্রহ করছিলো। শহীদ খোকন পার্ক থেকে গ্রেফতারারে পর রাতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ি শহরের মালতিনগর এলাকায় সাদ্দামের বাড়ি থেকে জিহাদী বই ও ধারল অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।এব্যপারে পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে বগুড়া সদর থানায় মামলা দায়ের করেছে। অপর দিকে বিভিন্ন অভিযোগে গত ২৪ ঘন্টায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আরো ৭৯ জন গ্রেফতার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। টাঙ্গাইল :টাঙ্গাইল জেলায় পুলিশের বিশেষ সাড়াঁশি অভিযানের দ্বিতীয় দিনে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়ে শনিবার সকাল পর্যন্ত টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সূত্র জানান, টাঙ্গাইল সদর, মির্জাপুর, নাগরপুর, সখীপুর, বাসাইল, দেলদুয়ার, মধুপুর, ঘাটাইল, কালিহাতী, ভূঞাপুর, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা, ধনবাড়ি, গোপালপুর থানাগুলো থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃদের মধ্যে ওয়ারেন্টভুক্ত, বিভিন্ন মামলার নিয়মিত আসামীসহ সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারী রয়েছে বলে পুলিশ জানি সাতক্ষীরা :সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত জেলার আটটি থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে ১০ জন, কলারোয়া থেকে ৩জন, তালা থেকে ২ জন, আশাশুনি থেকে ৪ জন, দেবহাটা থেকে ২ জন, কালিগঞ্জ থেকে ৫ জন, শ্যামনগর থেকে ৭ জন এবং পাটকেলঘাটা থানা থেকে ২ জনকে আটক করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইও (পরিদর্শক) এস,আই কুমকুম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় মামলা রয়েছে। তিনি আরো জানান, আটককৃতদের মধ্যে তিন জন জামায়াত-শিবিরের কর্মী রয়েছে।