সোমবার ● ২৮ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বৈধ ঘোষণা
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বৈধ ঘোষণা
ঢাকা: রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আবেদনটি খারিজ করার ফলে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম বৈধ থাকছে।
এবিষয়ে দেওয়া রুলের ওপর সোমবার দুপুরে শুনানি শুরু হলে বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনটি খারিজ করে দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সুব্রত চৌধুরি। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
এর আগে, ২৯ ফেব্রুয়ারি এই বিষয়টি শুনানির জন্য ২৭ মার্চ দিন ধার্য করেছিলেন বিচারপতি নাইমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির হাইকোর্ট বেঞ্চ। কিন্তু হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ২৮ মার্চ শুনানির দিন রাখা হয়। আদালত ওইদিন জ্যেষ্ঠ ১৪ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মনোনীত করা সংক্রান্ত ২০১১ সালের দেওয়া আদেশ প্রত্যাহার করেন।
বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল।
চতুর্থ জাতীয় সংসদে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী অনুমোদন হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২ (ক) যুক্ত হয়। ২ (ক)-তে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে।’
ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ১৯৭১ সালে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে এই পরিবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তখনই ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে নানা ধর্মবিশ্বাসের মানুষ বাস করে। এটি সংবিধানের মূল স্তম্ভে বলা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রধর্ম করে অন্যান্য ধর্মকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশের অভিন্ন জাতীয় চরিত্রের প্রতি ধ্বংসাত্মক।’
এর ২৩ বছর পর রিট আবেদনকারী পক্ষ ২০১১ সালের ৮ জুন একটি সম্পূরক আবেদন করেন। পরে তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সেদিনই বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল দিয়েছিলেন।
রুলে সংবিধানের ওই সংশোধনীর মাধ্যমে ২ (ক) অন্তর্ভুক্তি কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে হাইকোর্ট ১৪ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর নাম ১৪ অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ঘোষণা করেন।
এরা হলেন টি এইচ খান, কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, এম জহির, মাহমুদুল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আখতার ইমাম, ফিদা এম কামাল, আজমালুল হোসেন কিউসি, আবদুল মতিন খসরু, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এ এফ এম মেসবাহ উদ্দিন। এদের মধ্যে এম জহির ও মাহমুদুল ইসলাম মারা গেছেন।
‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে ২৮ বছর আগে যারা রিট আবেদনটি করেছিলেন, তাদের অধিকাংশই মারা গেছেন।
সেই সময় যারা আবেদন করেন তারা হলেন বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, বিচারপতি কে এম সোবহান, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক খান সরওয়ার মুর্শিদ, ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, শিল্পী কলিম শরাফী, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, সেক্টর কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্ত, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রাজনৈতিক-কলামিস্ট বদরুদ্দীন উমর, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
এদের মধ্যে সি আর দত্ত, বদরুদ্দীন উমর, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বেঁচে আছেন। ২০১১ সালের ২৫ জুন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের ওই ২ অনুচ্ছেদ আবারো সংশোধন করা হয়। প্রতিস্থাপিত ২ (এ) অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে।’
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি ফিরিয়ে আনার দাবি করেন আওয়ামী লীগ। এরপর রিট আবেদনকারী পক্ষ পঞ্চদশ সংশোধনীতে থাকা ওই বিধান চ্যালেঞ্জ করে সম্পূরক আবেদন করে।
শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ সম্পূরক রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা ২ (এ) অন্তর্ভুক্তি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।