সোমবার ● ১৪ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » ভোলার প্রতিটি ইউনিয়নে চলছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা: নির্বিকার রিটার্নিংকর্তারা
ভোলার প্রতিটি ইউনিয়নে চলছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা: নির্বিকার রিটার্নিংকর্তারা
স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন প্রথম দফার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোলায় প্রায় প্রতিনিয়তই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদপ্রার্থীরা। এখানে যেন আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা চলছে। নির্বাচন অফিসে কিংবা রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দিলেও সংশ্লিষ্টরা কোন কার্যকরি ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের স্তুপ জমা পড়ে আছে নির্বাচন অফিস এবং রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। কিন্তু আমলে নিচ্ছেন না তারা। এতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক প্রার্থীরা।
নির্বাচনী আচরণবিধিতে কোন প্রকার মিছিল কিংবা শো-ডাউন নিষিদ্ধ করা হলেও ভোলার অনেক উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ ইউনিয়নে প্রার্থীরা প্রকাশ্যে মিছিল ও শো-ডাউন করছেন। একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী তার নির্বাচনী এলাকায় ৩টির বেশী নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেক প্রার্থী সেই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। অনেক ইউনিয়নে ১০-১২ টি করে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনী ক্যাম্পে টেলিভিশন ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেক প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে টেলিভিশন ব্যবহার করতে দেখা গেছে। নির্বাচনী ক্যাম্পে ভোটারদের কোনরুপ পানীয় বা খাদ্য সরবরাহের ওপর বিধি নিষেধ আরোপিত করা হলেও অনেক প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে চা পানি এবং খাদ্য সরবরাহ করতে দেখা গেছে। নির্বাচন আচরণবিধিতে দেওয়াল ও যানবাহনে আঠা বা অন্য কোন পদার্থ দ্বারা পোষ্টার লাগানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও অধিকাংশ প্রার্থীরাই সেই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। তারা বিভিন্ন যানবাহনে, ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়াল ও বেড়ায় এবং বৈদুুতিক খুঁটির সঙ্গে আঠা দিয়ে পোস্টার লাগিয়েছেন। ভোলা সদর উপজেলা, দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সরেজমিন পরিদর্শনকালে এসব চিত্র চোখে পড়ে।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের ঘুইগারহাট এলাকায় ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে নৌকা প্রতীকের বিশাল তোরণ নির্মাণ করেছেন ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী লিয়াকত হোসেন মনসুর। এ বিষয়ে লিয়াকত হোসেন মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ওই ইউনিয়নের বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রাইসুল আলমের অভিযোগ, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রতিনিয়তই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। এসব বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারকে বহুবার জানিয়েছি। কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
এব্যাপারে ওই ইউনিয়নের দায়িত্বরত রিটার্নিং অফিসার আকতার হোসেন বলেন, তোরণ নির্মাণ নির্বাচনী আচরণবিধির মধ্যে পড়ে। এটা কোন প্রার্থী করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি আমার অজানা। এ বিষয়ে কোন প্রার্থী লিখিত অভিযোগও দেননি। এছাড়া দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন দেওয়ালে আঠা দিয়ে পোষ্টার লাগিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত অনেক চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থী।
এদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে দেড় শতাধিক মোটরসাইকেল বহর নিয়ে বিশাল শো-ডাউন করেন বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান চৌধুরী। তবে, এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী যুবলীগ নেতা বেলায়েত হোসেন ও বিএনপি দলীয় প্রার্থী সোহরাব হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল আহসান চৌধুরীকে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এব্যাপারে টবগী ইউনিয়নের রিটার্ণিং অফিসার ও বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাচন অফিসার কল্লোল বিশ্বাষ বলেন, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমাকে ফোনে জানিয়েছেন। আমি তাকে লিখিতভাবে জানানোর জন্য বললেও তিনি লিখিতভাবে কোন অভিযোগ দেননি।
অপরদিকে একই উপজেলার বড়মানিকা ইউনিয়নের বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী সিহাব উদ্দিন হাওলাদার অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার রাতে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সেন্টার বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন তার পোষ্টার ছিঁড়ে তাতে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আওয়ামী লীগের কর্মীরা তার কর্মীদেরকে হুমকি-ধামকি দেয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সরকার দলীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদপ্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলছেন।