বুধবার ● ২ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » চরফ্যাশন - গলাচিপা সীমান্তে উত্তেজনা: কৃষকের সমাধানের দাবি
চরফ্যাশন - গলাচিপা সীমান্তে উত্তেজনা: কৃষকের সমাধানের দাবি
এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন: ভোলার জেলার চরফ্যাশন ও পটুয়াখালীর গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলার সীমানা ঘেষা সহস্রাধীক একর জমির ইরি-বোরো ধান নিয়ে ৯টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা বিরাজ করছে। মৌসম আসলে এক শ্রেণির জোতদারদের বাহিনীর ক্ষমতার দাপট বেড়ে যাচ্ছে। আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘ সূত্রিতার পাশাপাশি ভূমিদস্যুদের উস্কানীর কারণে ১৯৮০ সন থেকে চলমান এ বিরোধের কোন সুরাহা করা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনিয়ন মুজিব নগর। তেতুঁলিয়া নদী দ্বারা উপজেলার মূল ভু-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ ইউনিয়নের চর মোতাহার মৌজার সাথে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চর বোরহান ও চর শাহজালাল এবং চরফ্যাশনের চর মোতাহার, চর লিউলিন ও চর মনোহার মৌজার সাথে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার উত্তর চর বিশ্বাস, কপাল বেড়া এবং বড় শিবা মৌজার সীমানা বিরোধ চলছে। চর মনোহর মৌজার আব্দুল হক, চর নিউলিম মৌজার মোক্তার মিস্ত্রী, চর মোতাহার মৌজার মাওঃ শাহাবুদ্দিন, আবু তাহের মেম্বাররা অভিযোগ করেন, ১৯৭২-১৯৭৩ সনে বন্দোবস্ত নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা এসব জমি চাষ করে আসছে। জমির মাঠ জরিপ শেষ হয়েছে। ২০০৮ সনে আন্তঃজেলা সীমানা স্থির করার পর জরিপ অধিদপ্তর থেকে ৬২ টি সীমানা পিলার স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। কিন্ত দশমিনা ও গলাচিপার ভূমিদস্যুদের হামলার কারণে সীমানা পিলার স্থাপন করা যায়নি। ভূমি দস্যুরা সীমানা বিরোধকে পুঁজি করে ধান পাঁকার মৌসুমে বিরোধীয় এলাকায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে ক্ষেতের পাকা ধান আর গৃহস্থের বাড়ি-ঘর,গরু-মহিষ লুট করে নেয়। পুড়িয়ে দেয় বসত বাড়ি। পাকা ধানকে সামনে রেখে অতীত ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রামের সাধারণ কৃষক।
মুজিব নগরের চেয়ারম্যান আব্দুল অদুদ মিয়া বলেন, চরফ্যাশন এবং দশমিনা ও গলাচিপা সীমানায় বিরোধীয় এলাকার কিছু অংশে বুড়া গৌড়াঙ্গ দোন বিদ্যমান আছে। বাকী অংশে দোনের অস্তিত্ব নেই। ভূমি মন্ত্রণালয় ১৯৯৬ সনে বুড়া গৌড়াঙ্গকে মাঝে রেখে দু’ই জেলার সীমানা স্থির করে দেয় এবং যে অংশে দোনের অস্তিত্ব নেই সেখানে ১৯৪২-১৯৪৩ সনে অনুমোদিত আর,এস ম্যাফের লাইনকে সীমানা হিসেবে স্থির করে। কিন্ত দশমিনা ও গলাচিপার ভুমিদস্যুরা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এক তরফা আর,এস লাইনকে সীমানা দাবী করে চরফ্যাশনের চর মনোহার , চর মোতাহার এবং চর লিউলিন মৌজার সহস্রাধীক একর জমির মালিকানা নিয়ে বিবাদ করে আসছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, সীমানা বিরোধ সারা বছর আইন আদালতের বারান্ধায় ঘুমন্ত এবং শান্ত অবস্থায় থাকলেও পাঁকা ধান কাটার সময় উত্তেজনা নিয়ে বিরোধে ধান ক্ষেতেই গড়ায়। এ বছরও ইরি বোরো পাঁকা ধানকে সামনে রেখে বিরোধীয় চরফ্যাশন উপজেলার চর মনোহর,চর লিউলিন ও চর মোতাহার , পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চর বোরহান ও চর শাহজালাল এবং গলাচিপা উপজেলার উত্তর চর বিশ্বাস, কপাল বেড়া এবং বড় শিবা মৌজার কয়েক হাজার কৃষক আতংকের মধ্যে আছে। ভোলার দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইন চার্জ মো. হানিফ বলেন, বিচ্ছিন্ন মুজিব নগর ইউনিয়নের কৃষকদের পাকা ধানের নিরাপত্তার জন্য এখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে ১২জুন/২০১৪ তারিখে উপ-পরিচালক ফজলুর রহমান, চরফ্যাশন ও গলাচিপা উপজেলার ইউএনও, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সীমানায় মেপে ফিলার দেয়ার কথা থাকলেও ও ফিলার আর উত্তেজনার মধ্যে দেয়া হয়নি। সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে দিন দিন জন¯্রােতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক শ্রেণির কৃষক মুজিব নগর এলাকায় বসবাস করে ইউপি‘র থেকে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে। প্রায় সহস্ত্রাধিক পরিবার চরফ্যাশনের আওতাধীন মজিবনগর ইউনিয়নের ভোটার হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে এ সকল এলাকার সাধারণ মানুষ নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। মজিবনগর এলাকায় বসবাসকারীরা স্থায়ী ভাবে ভোটার হয়ে মজিবনগর এলাকায় বসবাস করার দাবী জানিয়েছেন।