বৃহস্পতিবার ● ২৮ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » ভোলার ইটভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে সবুজ বেষ্টীত কাঠ
ভোলার ইটভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে সবুজ বেষ্টীত কাঠ
বিশেষ প্রতিনিধি• দ্বীপ জেলা ভোলা। বরিশাল বিভাগে কৃষির জন্য বিখ্যাত এ এলাকা। এখানে প্রতিনিয়ত ধান,শুপারি, গম, আলু সহ বিভিন্ন প্রকার রবি শস্য চাষ করা হয়। প্রতি বছর শুকনো মৌসুম এলে এসকল ফসলী জমিতে গড়ে তুলা হচ্ছে ছোট বড় ইটভাটা। এসকল ইটভায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন নিয়ম নিতি মানা হচ্ছে না। একের পর এক ফসলী জমিতে ঘরে উঠছে ইটভাটা। এতে একদিকে কমছে ফসলী জমি,অন্যদিকে কমছে সবুজ বেষ্টীত গাছ। পরিবেশ হয়ে পরছে হুমকির মুখে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভোলা সদর, দৌলতকান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন ও মনপুরা উপজেলায় প্রায় ৭০ টির মত ইটভাটা গড়ে উঠেছে। তবে সরকারি ভাবে অনুমোদন ও ছাড় পত্র রয়েছে ৪৮ টির। গড়ে উঠা এসকল ইটভাটায় মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম নিতি। এসকল ইটভাটায় কয়লা পোড়ানোর কথা থাকলে তা মানা হচ্ছে না সরকার দলীয় মালিক পক্ষরা। হাতে গোনা কয়েকটি ইটভাটায় কয়লা ব্যবহার করা হলেও বাকি সকল ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে সবুজ বেষ্টীত কাঠ। ফলে উজাড় হচ্ছে দ্বীপ জেলার বনাঞ্চল। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঝড় জলোচ্ছাস প্রতিরোধক সাগর উপকূলের ম্যানগ্রোভ বন। এসকল ইটভাটায় ৪০ ফুটের উন্নত মানের চিমনি ব্যবহার করার কথা থাকলে সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে ২০ থেকে ২২ ফুটের ড্রাম চিমনি। মাঝে মধ্যে প্রশাসরে লোকজন গিয়ে এ চিমনি নামিয়ে দিলেও তারা আসার পর আবারো ড্রাম চিমনি ব্যবহার করা হয়।
এসকল ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে হাটবাজার ও আবাসীক এলাকার আশপাশের ফসলী জমিতে। অধিকাংশ ইটভাটায় ৮ থেকে ১০ একরের বেশি আবাদী জমি নিয়ে অবৈধ ভাবে খাল ও পুকুর কেটে মাটি তুলে তা দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ইট। বিশেষ করে চরফ্যাশন উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন নিয়ম নিতিকে তোয়াক্কা করছেন ভাটা মালিকরা। কারণ তারা মনে করছেন পরিবেশ উপ-মন্ত্রীতো তাদের এলাকার। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন এলাকায় আসলেও অনেক কিছু দেখেও না দেখার মত করে চলে যেতে হয়। আবার এসকল ইটভাটার আশপাশের ফসলী জমি ও মাটি ও বিভিন্ন প্রকার গাছ পালা বিক্রি করার জন্য এক প্রকার দালালদের মাধ্যমে কৃষকদের বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে।
চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া লঞ্চঘাট এলাকার একাধিক কৃষক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, এখানে রূপালী ব্রিকস ও এ আলী ব্রিকস দু’টি ইটভাটা পাশাপাশি হওয়ায় মালিকরা প্রতিযোগিতা করে ভাটার আশপাশের কৃষদদের জিম্মি করে জমি ও মাটি বিক্রি করার জন্য বাধ্য করছেন। আবার পাশ্বর্তী ফাতেমাবাদ কাশেম চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন সাহা ব্রিকস ইট ভাটা সহ কয়েকটি ইট ভাটায় বিভিন্ন বন থেকে সরকারি গাছ কেটে এনে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় নির্বিঘেœ অবৈধ ভাবে এসকল ভাটায় ইট পোঁড়ানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নেই কোন নজরদারী।
তবে ভাটা মালিকরা কয়লার সঙ্কটের কারণে কাঠ পোঁড়াচ্ছেন স্বীকার করে বলেন, তারা অপ্রয়যোনীয় গাছ ক্রয় করে তা দিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন। তবে সরকারী গাছ ও কৃষকদের জমি ও মাটি বিক্রিয়র জন্য বাধ্য করছেন এসকল বিষয়টি সত্য নয় বলেন দাবি করেন তারা।
বরিশাল বিভাগের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সুকুমার বিশ্বাসর বলেন, যে সকল ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর নির্দেশ অমান্য করে ভাটা নিমার্র্ণ ও জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে সে সকল ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে ভোলা জেলা প্রশাসক মো. সেলিম রেজা বলেন, ভাটা মালিকদের কাঠ পোড়ানোর জন্য নিষেধ করা হয়েছে। যারা কয়লার পরিবর্তে কাঠ পুড়ছেন ইতোমধ্যে কয়েকটি ইটভাটাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি সহ জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর পরে যারা নির্দেশ অমান্য করছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।