বৃহস্পতিবার ● ৭ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু
গাজীপুর: আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা শুক্রবার ফজর নামাজের পর শুরু হবে।তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্যায়ে আখেরী মোনাজাত আগামী ১০ জানুয়ারি রোববার অনুষ্ঠিত হবে।দ্বিতীয় পর্যায়ে ইজতেমা ১৫ জানুয়ারি শুরু হবে এবং আগামী ১৭ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।ধর্মপ্রাণ মুসরুীগণ ইতোমধ্যে ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছেন। তারা রেলপথ, সড়ক পথ, নৌপথ এবং অনেকে পায়ে হেঁটে ইজতেমাস্থলে আসছেন।ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বৃহস্পতিবার বিশ্ব ইজতেমায় হামদর্দের একটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করেছেন এবং রেলমন্ত্রী মজিবুল হক আজ টঙ্গী জংশনে মুসল্লীদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থাদী পরিদর্শন করেছেন। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন জেলা প্রশাসন, র্যাব, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি ৫টি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে। ইজতেমায় আগত দেশী-বিদেশী মুসল�ীদের স্বাগত জানিয়ে ৮টি তোরণ, নিরাপত্তার জন্য র্যাবের ৯টি ও পুলিশের ৫টিসহ মোট ১৪টি ওয়াচ টাওয়ার, ইজতেমায় নিয়োজিত নিরাপত্তা সদস্যদের জন্য ১৫০টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। ২০টি ফগার মেশিনের মাধ্যমে মশক নিধন কার্যক্রম গ্রহণ, ইজতেমা কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক ৭০ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার সরবরাহসহ ইজতেমা চলাকালে ২০টি গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে দিন-রাত বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিশ্চিত করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমসহ অন্যান্য স্থানে অস্থায়ীভাবে খুঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ৪শ�টি বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা, তুরাগ নদীতে নিরাপত্তার জন্য টঙ্গী ব্রিজ ও কামারপাড়া ব্রিজের নীচে দুই পার্শ্বে বাঁশ দিয়ে ২টি বেষ্টনী নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের চৌরা��া পর্যন্ত দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও রা��ায় পার্কিং করা গাড়িসমূহ অপসারণ, ধূলাবালী নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্বক্ষণিক পানি ছিটানোর ব্যবস্থা, রা��ার দুই পাশে দেয়ালের অশ�ীল পোস্টার অপসারণ ও সিনেমা হলসমূহ সম্পূর্ণ বন্ধের ব্যবস্থা, বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ৬টি টেলিফোন লাইন ও ২টি হট লাইন স্থাপন, বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য কন্ট্রোল রুমের সামনে ৫৪টি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র স্থাপনসহ বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আগত বিদেশী মেহমানদের রান্নার কাজের জন্য ১২৫টি গ্যাসের চুলা স্থাপন কাজ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপে ২৭টি খিত্তা এবং দ্বিতীয় ধাপে ২৯টি খিত্তা স্থাপন করা হয়েছে। দেশের ৩২টি জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লীগণ ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন।ইজতেমায় ১২টি উৎপাদক নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ১১ কিঃমিঃ পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন ঘন্টায় ৩ কোটি ৫০ লাখ গ্যালন সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা অবস্থান করছেন। ময়দানের প্রতি খিত্তায় ফায়ার এক্সস্টিংগুইসারসহ ফায়ারম্যান, গুদাম ঘর ও বিদেশি মেহমান খানা এলাকায় ৩টি পানিবাহী গাড়ি, ৩-সদস্যের ডুবুরী ইউনিট, ১টি স্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট এবং ৫টি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। ডেসকো� কর্তৃপক্ষ জানান, ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।গাজীপুর জেলা সির্ভিল সার্জন এম আলী হায়দার খান ও টঙ্গী সরকারী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ পারভেজ আলম জানান, টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে নিয়মিত শয্যা ছাড়াও অতিরিক্ত শয্যা বাড়িয়ে মুসল��ী�দের চিকিৎসা সেবা প্রদান করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিকেল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবা করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মুসল্লীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে মন্নু গেইট, এটলাস গেইট, বাটা কারাখানার গেইট ও টঙ্গী হাসপাতালমাঠসহ ৬টি অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ণ, চক্ষু এবং ওআরটি কর্ণারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ চিকিৎসা দেবেন। রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে।গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম জানান, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কল্যাণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বিশ্ব ইজতেমায় মনিটরিং করা হচ্ছে।সকালে ইজতেমার মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ইতোমধ্যেই নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন আগত মুসল্লিরা। মাঠে তারা প্রয়োজনীয় কাজের পাশাপাশি নফল ইবাদত-বন্দেগি, তালিম, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকারে সময় কাটাচ্ছেন। ইজতেমার মাঠের প্রবেশমুখের স্বাগত তোরণ কিংবা টঙ্গির অলি-গলিতে টাঙানো বিশ্ব ইজতেমার সফলতা কামনাসমৃদ্ধ ফেস্টুনগুলো ছাপিয়ে সবর্ত্রই এখন ভীড় তাবলিগের মুসল্লিদের।স্থান সঙ্কুলান না হওয়া ও মানুষের কষ্ট লাঘব করতে এবার নতুনধারার বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে। এবার দুইপর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও সমগ্র বাংলাদেশের তাবলিগের সাথীরা তাতে অংশ নিতে পারছেন না। প্রথমবারের মতো দেশের মোট ৩২টি জেলা নিয়ে এ বছর ইজতেমার দুইপর্ব অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী বছরের (২০১৭ সালে) ইজতেমা বাকি ৩২ জেলা নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার ফজরের নামাজের পর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে সভাপতিবিহীন বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব। এতে অংশ নেবে ঢাকার একাংশসহ ১৭টি জেলার তাবলিগ অনুসারীরা।রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথমপর্বের ইজতেমা শেষ হবে। এরপর ১৫ জানুয়ারি দ্বিতীয়পর্ব শুরু হবে। ওই পর্বে অংশ নেবে ঢাকার বাকি অংশসহ ১৬টি জেলার তাবলিগ অনুসারীরা। ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয়পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে দুইপর্বের বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নেওয়া ১৭টি জেলা হচ্ছে- ঢাকা (একাংশ), শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, ল�ীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, নড়াইল, মাদারীপুর, ভোলা, মাগুরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও পঞ্চগড়।১৯৬৭ সালে টঙ্গির পাগাড় গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্ব ইজতেমা। আর ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।১৬০ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ইজতেমা মাঠে বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা অংশ নেয়। তারা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতের কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।প্রতি বছরের মতো এবারও সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থী, কলকারখানার শ্রমিক ও মালিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ইজতেমার মাঠের প্রস্তুতিমূলক কাজে অংশ নিয়েছেন। ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতির কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা তাবলিগের মুরব্বি গিয়াস উদ্দিন জানান, ইজতেমার মাঠের সব কাজ করা হয় মাশওয়ারার (পরামর্শ) ভিত্তিতে। বিদ্য্যুৎ সংযোগ, পানি লাইন বসানো, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্র�পের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে।ইজতেমায় আগত বিদেশি মেহমানদের জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিশেষ কামরা তৈরির কাজও সম্পন্ন হয়েছে। বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাদের জন্য নির্মিত আবাসস্থলের প্রবেশ পথে প্রথমবারের মতো আর্চওয়ে বসানো হয়েছে।মুসল্লিদের তুরাগ নদী পারাপারের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা তুরাগ নদীতে ৯টি স্থানে ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে।ইজতেমার মাঠে স্থাপিত নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন তিন কোটি লিটারেরও বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অজু-গোসলের হাউজ ও টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পাকা দালানে প্রায় ছয় হাজারের মতো টয়লেট ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত অজু- গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো সংস্কার করে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে। ডেসকো ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে।