বুধবার ● ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আর কোন ছাড় নয়, ডাইরেক্ট অ্যাকশন
আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আর কোন ছাড় নয়, ডাইরেক্ট অ্যাকশন
ঢাকা : পৌর নির্বাচনে বিধি ভঙ্গ ঠেকাতে অসহায় নির্বাচন কমিশন এবার সরাসরি অ্যাকশন দেখানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে।নির্বাচন কমিশনার মো.শাহনেওয়াজ বলেছেন, সংসদ সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আচরণবিধি ভঙ্গের জন্যে আর কোনো চিঠি দিয়ে সতর্কতার সময় নেই। এখন সরাসরি এ্যাকশন নেওয়া হবে।এখন আর সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হবে না, কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে �ডাইরেক্ট অ্যাকশন নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. শাহ নেওয়াজ।বুধবার দুপুরে তিনি নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ হুঁশিয়ারি দেন।শাহ নেওয়াজ বলেন,মাঠ পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত রয়েছেন।এখন থেকে আর কাউকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে না। যে-ই আচরণবিধি লঙ্ঘন করবে, তার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন নেওয়া হবে। তিনি বলেন, চিঠি দিয়ে সর্তক করার বিষয় নয়, এখন অ্যাকশনের বিষয়। এখন সরাসরি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে অ্যাকশন নেওয়ার জন্য বলেছি। আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সবার প্রতি নির্দেশ, যেন সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাকশন নেয়। সংসদ সদস্য বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কোনো ব্যক্তি অথবা প্রার্থী, যে-ই হোক, আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সবার প্রতিই আমাদের আদেশ এবং নির্দেশ যেন অ্যাকশন নেওয়া হয়। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করে দেবো।আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ জনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলেছিল নির্বাচন কমিশন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা এ অভিযোগগুলোর অধিকাংশেরই কোনো তদন্ত প্রতিবেদন ইসিতে পাঠাননি। যেসব প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে সেসবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।এই অবস্থায় ইসি শাহ নেওয়াজ প্রার্থী এবং প্রার্থীর পক্ষের ব্যক্তিদের প্রতি এমন হুঁশিয়ারি দিলেন। তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও হঠাৎ অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়, মারামারি হয়। তখন ব্যবস্থা নিতে হয়। তবুও নির্দেশ দিয়েছি, আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তারা পিছপা যেন না হয়। আমি আগেও বলেছি, যে পিছপা হবে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবো। কিন্তু দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ডিফেন্ড করবো। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রতিদিনই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শোকজ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলছি। যত বড় লোকই হোক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি, আশা করছি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবাইকে আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। সংসদ সদস্যরাও বিধি লঙ্ঘন করলে সরকার প্রধানের সহায়তা চেয়েছি। তিনি নিশ্চয় খেয়াল করবেন। কেননা, সুষ্ঠু নির্বাচন একা করা সম্ভব নয়। কারো সহায়তা চাওয়াও ইসির আয়ত্ত্বে নয়। এজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তা চাচ্ছি। শাহ নেওয়াজ বলেন, নির্বাচনের শেষের দিকে আক্রমণাত্মক হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরাই বলেছে। তবে নির্বাচন যেন ব্যাহত না হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছি।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিপক্ষে চলে গেছে মোটেই সত্য নয়। এমন পরিস্থিতি দৃষ্টিগোচর হলে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছি ব্যবস্থা নিতে।৩০ ডিসেম্বরের এই নির্বাচনে মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের বিধি ভঙ্গের বেশ কয়েকটি ঘটনা গণমাধ্যমে এলেও ইসি শো-কজ নোটিস দেওয়া ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।এমপিদের বিধি ভঙ্গে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে শাহওনেওয়াজ বলেন, এখন আর চিঠির বিষয় নয়, অ্যাকশনের বিষয়।এখন যে সময় রয়েছে চিঠি-চুঠির বিষয় থাকবে না; এখন সরাসরি রিটার্নিং অফিসারকে বলেছি, ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তারা সরাসরি অ্যাকশন নেবে।আচরণবিধি ভঙ্গের ব্যাপক অভিযোগ উঠলেও এই নির্বাচন কমিশনার বলছেন, দু-একটি �বিচ্ছিন্ন ঘটনা� ঘটেছে।নির্বাচনের পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদের বিপক্ষে চলে গেছে, একথা মোটেও সত্য নয়। এখনও আমাদের কাছে যে রিপোর্ট আছে-দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে; ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয় আমাদের দৃষ্টিগোচরে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশও দিচ্ছি।রিটার্নিং কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে কি না, তার খোঁজ-খবরও নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও শো-কজ করার ব্যবস্থা করছি। আচরণবিধি ভঙ্গ করলে যত বড় লোকই হোক, ক্ষমতাশালীই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।�সংসদ সদস্য হোক বা অন্য কেউই হোক; যদি কেউ এখন আচরণবিধি ভঙ্গ করে বা মানতে অপারগতা প্রকাশ করেন, আমাদের আদেশ এবং নির্দেশ সবার প্রতি, যাতে সাথে সাথে অ্যাকশন নিয়ে নেওয়া হয়।নিজেদের ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারেরও ইঙ্গিত দিলেন এ নির্বাচন কমিশনার।গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে সে প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমাদের কাছে এ ধরনের রিপোর্ট আছে-প্রার্থীকে সহায়তা করছে বা সহয়তা নিচ্ছে প্রার্থী; তেমন ঘটনা ঘটলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে দেব।আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, ছয় মাসের দণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। দলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার ক্ষমতা রয়েছে ইসির।আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৩ পৌরসভায় একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৯২০ জনের মতো মেয়র প্রার্থী এবং ১১ হাজার ১০০ জনের মতো কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।নির্বাচনী প্রচারণায় এখন পর্যন্ত মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে।