বুধবার ● ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষ: আটক ৭০
চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষ: আটক ৭০
চট্টগ্রাম : বিজয় দিবসে চট্টগ্রাম কলেজের শহীদ মিনারে ছাত্রলীগ কর্মীরা ফুল দেওয়ার পর তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির কর্মীরা। বুধবার দুপুরে এই হামলার পর দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর জেরে ছাত্রদের আজ রাত আটটার মধ্যে এবং ছাত্রীদের আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি।শিবির নিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের বিজয় র্যালিতে শিবিরের হামলার ঘটনায় কলেজ ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে সংগঠনটির ৭০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বুুধবার দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে চকবাজার থানার ওসি আজিজ আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগের বিজয় র্যালিতে হামলার ঘটনায় চট্টগ্রাম কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে অর্ধশতাধিক শিবিরের নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ সংখ্যা প্রায় ৭০ জন। এর আগে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মহান বিজয় দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে এসে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ ও শিবির। ছাত্রলীগের বিজয় র্যালিতে শিবিরের হামলায় দুই ছাত্রলীগকর্মী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শিবিরের হামলার খবর পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুরো চকবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধের মাধ্যমে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে পুলিশের সর্তক অবস্থানের পরও চট্টগ্রাম কলেজের একটি ফটক ভেঙে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে হামলাকারীদের খোঁজ করে ছাত্রলীগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।চকবাজার থানার ওসি আজিজ উদ্দিন জানান, বেলা ১২টার দিকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ক্যাম্পাসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করার সময় শিবিরকর্মীরা হামলা চালায়। অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মী ও শিক্ষার্থীরা জানান, শিবিরনিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রাম কলেজে অন্য কোনো সংগঠন কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারে না। সেখানে দুটি আবাসিক হলও শিবির দখল করে রাখায় সাধারণ ছাত্ররা থাকার সুযোগ পায় না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে শিবিরের অবস্থান উপেক্ষা করেই কালেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা শহীদ মিনারে ফুল দিতে যায়।শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জয় বাংলা শ্লোগান দেওয়ার পরপরই কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন থেকে হাতবোমা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। পরে শহীদ মিনারে থাকা ছাত্রলীগ কর্মীদের দিকে ইটও ছোড়া হয়।এক পর্যায়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয় শিবির ও ছাত্রলীগ; শুরু হয় হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।সংঘর্ষের মধ্যে দুই পক্ষই বৃষ্টির মত ঢিল ছুড়তে থাকে বলে কলেজের এক কর্মচারী জানান। এভাবে ১০/১৫ মিনিট চলার পর শিবিরের কর্মীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে যায়। প্রধান ফটকে তালা লাগানো হয়। পরে ছাত্রলীগের ছেলেরা কলেজের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে, সড়ক থেকে ইট ছোড়ে।২০/২৫ মিনিট পরে পুলিশ এসে কলেজের মূল ফটকের তালা কেটে ভেতরে ঢুকে অভিযান চালায়। ওই সময়ও থেমে থেমে মিছিল করছিল ছাত্রলীগ।এদিকে কলেজ অডিটোরিয়ামে বিজয় দিবসের আলোচনাসভা ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সংঘর্ষের কারণে মাঝপথে পণ্ড হয়ে যায়। সেখানে আটকা পড়েন অনুষ্ঠানে আসা সবাই।পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে বেলা দেড়টার দিকে পুলিশের সহায়তায় অধ্যক্ষসহ সবাই বেরিয়ে আসেন। কলেজের অধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার বলেন, অনুষ্ঠানের সময় বাইরে গোলমাল হয়েছে। কারা করেছে আমরা জানি না। ভেতরে আমিসহ চারশজনের বেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী আটকে ছিলাম। নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা বের হইনি। পুলিশ এলে বের হয়ে আসি।ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিমের অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে শিবির আধিপত্য চালাচ্ছে। অন্য কোনো সংগঠনকে রাজনীতি করতে দেয় না। তারা আমাদের উপর নির্লজ্জভাবে হামলা করেছে।চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার বলেন, ছাত্রাবাস বন্ধ করা নিয়ে ছাত্রলীগ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমরা শুধু আইনশৃঙ্খলার বিষয় দেখব। ছাত্রাবাস বন্ধ করার আমরা কেউ না।