সোমবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » পৌর নির্বাচনে মিছিল-শোডাউন নিষিদ্ধ: প্রার্থীর ৩০ শতাংশ স্বতন্ত্র
পৌর নির্বাচনে মিছিল-শোডাউন নিষিদ্ধ: প্রার্থীর ৩০ শতাংশ স্বতন্ত্র
ঢাকা : আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ৩০ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী। যারা মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটেই ভাগ বসাবেন বলে মনে করছেন খোদ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা।মনোনয়পত্র প্রত্যাহার শেষে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সমন্বয় করে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার তৈরি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।ইসির যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলী জনান,এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৯২১ জন।এদিকে,প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়ায় আসন্ন পৌর নির্বাচনে সাতটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হচ্ছেন।নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা) জেসমিন টুলী জানান, রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ১৬২ জন মেয়র প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন।এতে পিরোজপুর, মাদারগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া, ছেংগারচর, ফেনী, পরশুরাম ও চাটখিল পৌরসভায় একজন করে প্রার্থী হওয়ায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।তিনি জানান, সোমবার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা গণবিজ্ঞপ্তি করে এই সাতজনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন। তারা ইসিতেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণী পাঠাবেন।আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পৌর নির্বাচনে ২৩৪টি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৯২১ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৩৩ জন, বিএনপির ২১৯ জন এবং জাতীয় পাটিৃর ৭৩ জন রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে স্বতন্ত্র এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা আছেন।তিনি জানান, মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মাঠ পর্যায় থেকে ইসি সচিবালয়ে পাঠানো তথ্য সমন্বয় করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০টি দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৬৪৯ জন, আর স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হচ্ছেন ২৭১ জন; যা মোট প্রতিদ্বন্দ্বীর ২৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।এদিকে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ছেংগারচর পৌরসভার মো. রফিকুল আলম জর্জ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে একজন কেবল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু এরইমধ্যে বিএনপির প্রার্থী সারয়ারুল আবেদিন বৈধ প্রার্থী হিসেবে আদালতের আদেশ নিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ হেকমত আলী। এক্ষেত্রে রফিকুল আলমকে হয়তো ভোটের প্রতিযোগিতা করতে হবে জানান হেকমত আলী।নির্বাচনে ২০ দলের ৬৪৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দিয়েছে। এদের মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সংখ্যা ১ জন, জাতীয় পার্টি-জেপির ৬ জন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ৪ জন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৩৩ জন, বিএনপির ২১৯ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৭ জন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের ১ জন, জাতীয় পার্টির ৭৩ জন ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ১ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের ৩ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের ২০ জন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের ১ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি�র ১৭ জন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি-পিডিপির ১ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৫৬ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৩ জন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন ও খেলাফত মজলিশ ১ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ফরহাদ হোসেন জানান, মেয়র পদে মোট ১ হাজার ২১৪ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯২১ জন প্রার্থী।এটি দেশের নবম পৌরসভা নির্বাচন। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম পৌরসভা নির্বাচন হয়। এরপর ১৯৭৭ সালের ১৩ আগস্ট, ১৯৮৪ সালের ১১ ফেব্র�য়ারি, ১৯৮৯ সালের ২৮ জানুয়ারি, ১৯৯৩ সালের ৩০ জানুয়ারি, ১৯৯৯ সালের ২৩ ফেব্র�য়ারি থেকে ২৫ ফেব্র�য়ারি পৌরসভা নির্বাচন হয়। ২০০৪ সালের ৫ মে থেকে ১০ মে দেশব্যাপী ১১৫ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ২৬৯ পৌরসভার নির্বাচন হয়েছিল।এবার ২৩৪ পৌরসভায় ৩০ ডিসেম্বর একযোগে ভোটগ্রহণ হবে। এতে মেয়র পদে দলীয় এবং কাউন্সিলর পদে নির্দলীয়ভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে ৩ হাজার ৫৫৮টি ভোটকেন্দ্রে প্রায় ৭২ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। এদিকে, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের প্রতীক নিয়ে প্রচারণা শুরু সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) থেকেই। তবে প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো ধরনের মিছিল বা মশাল মিছিল বা যানবাহনে মিছিল সহকারে প্রচারণা চালাতে পারবেন না।এছাড়াও প্রচার-পচারণায় অন্তত দশ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে ইসি�র উপ-সচিব মো. সামসুল আলম বিধি-নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলো অবহিত করেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা বিভিন্ন মাধ্যমে তা প্রচারসহ নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি একটি ওয়ার্ডে পথসভার জন্য একটি এবং নির্বাচনী প্রচারণার জন্য একটি মোট দুইটি মাইক্রোফোন বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন।এক্ষেত্রে প্রচারণা দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। প্রার্থীর পোস্টার হতে হবে সাদা-কালো।পোস্টারের আয়তন হবে দৈর্ঘ্যে ৬০ সেমি এবং প্রস্থে ৪৫ সেমি। এতে ছাপানো ছবি পোট্রেট হতে হবে এবং কোনো অনুষ্ঠান বা মিছিলে নেতৃত্ব দান, প্রার্থনারত অবস্থা ইত্যাদি ভঙ্গিমার ছবি ছাপানো যাবে না। নির্বাচনী প্রতীকের আকার কোনোভাবেই তিন মিটারের বেশি হবে না।প্রার্থী বা অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও তারিখবিহীন কোনো পোস্টার লাগানো যাবে না। পোস্টার কেবল নির্বাচনী এলাকায় ঝোলানো যাবে। কোনো স্থাপনার দেয়াল বা যানবাহনে পোস্টার বা হ্যান্ডবিল বা লিফলেট লাগানো যাবে না।প্রার্থী তার পোস্টারে তার ছবি ছাড়া কেবল দলীয় প্রধানের ছবি ছাপাতে পারবেন। দলীয় প্রধানের ছবি লিফলেটেও ছাপানো যাবে।নির্বাচনে যেকোনো ধরনের মিছিল বা শোডাউন নিষিদ্ধ। প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কেউ যেকোনো প্রকারের মিছিল বা মশাল মিছিল বা শোডাউন করতে পারবেন না। ইসি অনুমোদিত কোনো ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রর চৌহদ্দির মধ্যে মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো যান চালাতে পারবেন না।পথসভা বা ঘরোয়া সভা ছাড়া কোনো সভা করতে পারবেন না। তবে ঘরোয়া সভা করতে হলে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে তা অবহিত করতে হবে। আর পথসভা কোনো স্থানে এমনভাবে করা যাবে না, যাতে জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধা হয়। এছাড়া অন্য প্রার্থী কোনো পথসভা বা ঘরোয়া সভায় বাধা দিতে পারবেন না। নির্বাচনে কোনো ধরনের স্থায়ী বা অস্থায়ী বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না। অথবা অন্য কোনো কাঠামো বা বৃক্ষ ইত্যাদিতে স্থাপন বা ব্যবহার করা যাবে না।নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের গেট-তোরণ বা ঘের নির্মাণ কিংবা জনগণের চলাচলের অসুবিধা হয় এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। প্রচারণার জন্য ৩৬ বর্গমিটারের বেশি স্থান নিয়ে প্যান্ডেল নির্মাণ করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বিদ্যুতের সাহায্যে কোনো ধরনের আলোকসজ্জা করতে পারবেন না প্রার্থীরা। কোনো সড়ক কিংবা জনগণের চলাচল ও সাধারণ ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস করা যাবে না।নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কেউ মসজিদ, মন্দির বা উপাসনালয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন না।নির্বাচনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ২৭ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এছাড়া বেবিট্যাক্সি, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিক-আপ, কার, বাস, ট্রাক বা টেম্পো চলাচল ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে প্রার্থী বা প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকরা এসব যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া জরুরি পণ্যবাহী বাহন বা অ্যাম্বুলেন্সও এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।এছাড়া নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরের ১৫ দিন পর্যন্ত ইসির অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি নির্বাচন সংক্রান্ত কাজের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা যাবে না।আবার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে আগে সভাপতি বা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে থাকলে নির্বাচনপূর্ব সময়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো সভায় সভাপতিত্ব বা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। অথবা ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজে জড়িত হবেন না। আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে মেয়র পদে দলীয় এবং কাউন্সিলর পদে নির্দলীয়ভাবে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাত মেয়র প্রার্থী। আর মেয়র পদে সব দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৯২১ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৩৩ জন, বিএনপির ২১৯ জন ও জাতীয় পার্টির ৭৩ জন প্রার্থী রয়েছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন ১৬২ জন বৈধ প্রার্থী।