বৃহস্পতিবার ● ২৯ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » চাকরির খবর » ভারতীয় লেখকেরা তসলিমাবিরোধী!
ভারতীয় লেখকেরা তসলিমাবিরোধী!
ডেস্ক রিপোর্ট : ভারতে সাহিত্যিক হত্যা ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পর দেশটির লেখকদের রাষ্ট্রীয় সাহিত্য পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে মুখ খুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। শুক্রবার ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির লেখকদের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন তিনি। ভারতের লেখকরা তাকে সহ্য করতে পারেন না সেই বিষয়টিও তার সাক্ষাৎকারে ওঠে এসেছে।
সম্প্রতি লেখকদের পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে কেউ একজন একটি ধারণা দেন আর সেটাই অন্যরা অনুসরণ করেন বলে দাবি তার। সরকার এ পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করলেও তা নাকচ করে দেন তিনি। লেখকরা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সচেতন থাকার কারণেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মত তার।
তাকে টার্গেট করে আক্রমণের সময় লেখকেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় এমন প্রশ্নের জবাবে তসিলমা বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে আমার বইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আমার বিরুদ্ধে পাঁচটি ফতোয়া জারি করলেও কেউ এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করেননি। সবাই নিশ্চুপ ছিলেন। যখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমাকে বিতারিত করা হয়েছিল, দিল্লিতে আমাকে কয়েক মাস ধরে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল, ভারত ছাড়ার জন্য আমাকে জোর দেওয়া হচ্ছিল, টিভিতে আমার মেগা সিরিয়াল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন কেউ মুখ খুলেনি। আমি সেখানে বেঁচে থাকতে এবং বাক স্বাধীনতার জন্য একাই যুদ্ধ করেছি। তারা শুধু চুপ করেই থাকেননি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শঙ্খ ঘোষের মতো বিখ্যাত লেখকেরা আবেদন করে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দিয়ে আমার বই নিষিদ্ধও করিয়েছিলেন।’
ভারতের লেখকদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখন কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়, তখন ভারতের লেখকরা ‘দুমুখো বস্তুতে’ পরিণত হন।
ধর্মীয় জঙ্গিবাদ নিয়ে ভারতীয় লেখকদের অবস্থানের সমালোচনা করে সম্প্রতি টুইট করেন তসলিমা। টুইটে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার পন্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তসলিমা বলেন, ‘দু-মুখো’ এ লেখকরা হিন্দু জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নেন এবং মুসলমান জঙ্গিদের নির্মম অপরাধগুলোকে ‘সমর্থন’ জানান।
সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ভারত সরকারের মনোভাব প্রসঙ্গে নির্বাসিত এ লেখিকা বলেন, ‘ভারতে রাজনীতিবিদরা ভোটের জন্য মুসলিমদের প্রতি বেশ সহনশীল। মুসলিমরা হিন্দুদের চেয়ে বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে তাদের কাছ থেকে। তবে এটা সত্যি যে মুসলিম হওয়ার কারণে অনেকে অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হন। এটা অন্য ধর্মের লোকদের ক্ষেত্রে ঘটে। এটা খুবই ধূর্ত একটি বিষয় যে, ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের একটি হিন্দুগ্রাম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যদি ভারতে মুসলমানরা নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে প্রতিবেশি (বাংলাদেশ ও পাকিস্তান) দেশে চলে যেতে পারে- যেমনটা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের হিন্দুরা করে।
উত্তরপ্রদেশের একটি গ্রামে ফ্রিজে গুরুর মাংস রাখার গুজবে একজন মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা এবং হিন্দু জঙ্গিবাদী দলগুলোর উগ্র তৎপরতার প্রতিবাদে ভারতে সাহিত্য একাডেমিসহ রাজ্য সরকারের দেওয়া নানা পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন অনেক লেখক।
দুই দশক আগে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর ভারতে ঠিকানা নেন তসলিমা। ক্রমাগত জঙ্গি হুমকির মুখে তিনি এ বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।