বুধবার ● ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » আসছে ভারতীয় গরু, ঝুলছে ব্যবসায়ীদের ভাগ্য
আসছে ভারতীয় গরু, ঝুলছে ব্যবসায়ীদের ভাগ্য
ঢাকা • গত কোরবানি ঈদে মোটা অংকের লোকশান গুনলেও এবার বুকভরা আশা নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু নিয়ে রাজধানীতে আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে গরু না আসলে ব্যবসায়ীরা গত বছরের লোকসান কিছুটা পোষাতে পারবেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় ভারত থেকে অতিরিক্ত গরু আনা হলে এবারও ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়বেন। দেশের সর্ববৃহৎ পশুহাট গাবতলীর ব্যবসায়ীরা এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের যে পরিমাণ গরু রয়েছে, তাতে অন্য দেশের গরু আনার প্রয়োজন পড়ে না। এদিকে পশুহাটে আসা ক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে গরু না আনা হলে তাদের চড়া দামে গরু কিনতে হবে। সুযোগ বুঝে পকেট কাটবে অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে তথ্য অনুসারে, সারা দেশে সাধারণ মানুষ ও খামারিদের কাছে কোরবানির যোগ্য প্রায় ৪০ লাখ গরু ও মহিষ রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখের মতো পশু কোরবানি দেয় এ দেশের মানুষ। ব্যবসায়ীদের অনেকে জানিয়েছেন, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারত থেকে গরু আনার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে দেশটি। উন্মুক্তভাবে গরু না এলেও কিছু কিছু সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসছে। তবে এর মাত্রা এখনও সহনীয়। ভারত সরকার কড়াকড়ি তুলে নিলে গরু আমদানির মাত্রা বাড়লে ব্যবসায়ী ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে গাবতলী পশুহাটে ৬টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী ইসারত আলী। তার আরও অর্ধশতাধিক গরু গ্রামের বাড়িতে প্রস্তুত রয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে সেগুলোও রাজধানীতে নিয়ে আসবেন। গত বছরে মোটা অংকের টাকা লোকসান হওয়ায় তিনি এবার সব গরু একসঙ্গে আনেননি। তিনি বলেন, ‘গত বছর অনেক গরু ব্যাচতি পারিনি। ১০ থেকি ১২ লাখ টাকা লস হয়ছি। কানতি কানতি (কাঁদতে কাঁদতে) বাড়ি গেছিলাম। এবারও বাজারের পরিস্থিতি খারাপ মনি হচ্ছি (মনে হচ্ছে)। তার উপুর যদি ভারতের গরু আসি (আসে) তাহলে এবারও লস হবি। এবার লস হলে আর কখনো গরু নিয়ে গাবতলীতে আসবেন না বলেও জানান এ ব্যবসায়ী। শুধু ইসারত আলী নয়, গাবতলীর হাটের একাধিক ব্যবসায়ী ভারতীয় গরু দেশে না আনার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। ভারতীয় গরু না এলে দেশের সাধারণ গরু পালনকারী ও খামারী উভয়ই লাভবান হবেন। এতে তারা গরু পালনে আরও উৎসাহিত হবেন বলে মত তাদের। কুড়িগ্রাম থেকে ৬০টি মহিষ ও ২০টি গরু নিয়ে ব্যবসায়ী হান্নান ও তার অংশীদার এসেছেন। তাদের কণ্ঠেও একই কথা। হান্নান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ভারতীয় গরু এবার কোরবানিতে দেশে না এলে যে গরু হাটে এনেছি তা বিক্রি করে হাসি মুখে বাড়ি ফিরতে পারবো। তবে এর উল্টো হলে গতবারের মতো এবারও ২০টি গরুতে প্রায় ৫ লাখ টাকা লস (লোকসান)হবে।’ হান্নান বলেন, ‘৭৮ হাজার টাকার কেনা গরু এখন ৬৫ হাজার টাকা দাম উঠছে। এখনি যদি এ অবস্থা হয়? তাহলে ভারত থেকে অতিরিক্ত গরু আনা হলে তো লোকশান কেউ আটকাতে পারবে না।’ চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা মঞ্জু ব্যাপারী ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ভারত থেকে গরু আনতে হবে কেন? আমাদের দেশে কি গরু কম আছে? যা গরু আছে তাতে দুই বার কোরবানি দেওয়া যাবে।’ তিনি বলেন, ‘ভারতে গরু আসা মানে দাম পড়ে (কমে) যাওয়া। তখন ব্যবসায়ী ও খামারিরা উভয়ই লোকশানে পড়ে। গাবতলী হাট কর্তৃপক্ষের মুখেও ভারতীয় গরু না আনার পক্ষের সুর। হাসিল ঘরের কর্মকর্তা জুয়েল খান বলেন, ‘সীমান্তে ব্যাপক কড়াকড়ি। ভারত থেকে এবার গতবারের মতো গরু আসবে না। তবে যদি ভারতের গরু হাটে ঢোকে তাহলে গরুর দাম কমে যাবে।’ তবে বিক্রেতাদের যুক্তির সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন একাধিক ক্রেতা। রইস হাওলাদার নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘ভারত থেকে গরু দেশে না আনা হলে মাত্রাতিরিক্ত দামে গরু কিনতে হবে। বাজারে গরু না থাকলে সুযোগ বুঝে পকেট কাটবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এখনো জমে ওঠেনি গাবতলীর গরুর হাট ঈদুল আযহা আসতে কয়েকটা দিন বাকি থাকলেও এখনও দেশের সর্ববৃহৎ গরুর হাট এখনও জমে ওঠেনি। শনিবারের আগে রাজধানীতে গরু প্রবেশে পুলিশের কড়াকড়ি থাকায় বাজার জমে ওঠেনি বলে অনেকে মনে করছেন। তবে আগামী শনিবারের মধ্যে বাজার পুরো জমে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করছেন হাট কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা। গাবতলী হাট কর্তৃপক্ষের হাসিল ঘরের কর্মকর্তা জুয়েল খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এখনো হাট জমে ওঠেনি। ষোলআনার মধ্যে চারআনা পূর্ণ হয়েছে বলতে পারেন। তবে কয়েক দিনের মধ্যে জমে উঠবে।’ ফরিদপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী আকবর হোসেন জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু আসা শুরু হয়েছে। এখনও ব্যবসায়ীরা এসে পৌঁছতে পারেনি। কয়েকদিন পর হাটে পা ফেলার জায়গা থাকবে না। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী শনিবারের (১৯ সেপ্টেম্বর) আগে ঢাকায় গরু প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। মঙ্গলবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আয়োজতি আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় ডিএমপি। ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি গাবতলীর গরুর হাটে ক্রেতার চেয়ে বর্তমানে দর্শক বেশি আসছেন বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক ব্যবসায়ী। তাদের দাবি- ঈদের ৯ দিন বাকি থাকায় ক্রেতারা বাজারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। কিন্তু কিনছেন না। সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বাজারের গরুর সংখ্যা কম থাকলেও অনেকে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে যাচাই-বাছাই করতে আসছেন। গরু না কিনলেও দামের বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা নিচ্ছেন তারা।’ গরু দেখতে এসেছেন ২০০৫ সালের ক্লোজআপ তারকা রাশেদ। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরু কিনবো। তবে এখন বাজারের পরিস্থিতি দেখতে এসেছি। মনে হচ্ছে, দাম নাগালের মধ্যে রয়েছে। দেখি কয়েকটা দিন, দাম কিছুটা কমে কিনা।