বৃহস্পতিবার ● ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে খুড়িয়ে-ই চলছে ভোলার ১শ’ শয্যা হাসপাতাল
৫০ শয্যার জনবল দিয়ে খুড়িয়ে-ই চলছে ভোলার ১শ’ শয্যা হাসপাতাল
স্টাফ রিপোর্টার• দ্বীপজেলা ভোলার চিকিৎসা ব্যবস্থার একমাত্র অবলম্বন ভোলা সদর হাসপাতাল। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে-ই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে ১শ’ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে ডাক্তার ও নার্স সংকটে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। অন্যদিকে ১ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে সকল ধরনের জটিল ও কঠিন অস্ত্রপাচার। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার অভাবের পাশা-পাশি ঔষুধ, অক্সিজেন ও পরীক্ষা-নিরিক্ষার অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। বাধ্য হয়ে-ই উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা শহরের ক্লিনিক কিংবা বরিশাল ও ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরিক্ষা করাতে হচ্ছে রোগীদের। এই দুর্ভোগ বেশি সইতে হয় দরিদ্র-হতদরিদ্র রোগীদের।
অনুসন্ধানে জানা যা, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ভোলা সদর হাসপাতাল। এরপর ১৯৯৮ সালে হাসপাতালটিকে ৫০ থেকে ১শ’ শয্যায় উন্নতি করা হয়। ১শ’ শয্যায় উন্নয়ন করলেও জনবল ঠিক আগের মতই রয়ে যায়। নতুন কোন জনবল নিয়োগ দেয়া হয় নাই। তাই বাধ্য হয়ে ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চলে আসছে হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রম।
ভোলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া তথ্যে জানা যায়, হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১শ’ শয্যা উন্নীত হলেও ৫০ শয্যার চিকিৎসা সেবাও নেই এখানে। ৫০ শয্যা অনুযায়ী ২২টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ১৭টি এবং ৫২টি নার্স পদের মধ্যে ৩৬টি পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য রয়েছে হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদটিও।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী শুণ্যপদগুলোর মধ্যে ১২টি মেডিকেল অফিসারের মধ্যে ১১টি এবং ১০টি কলসালটেন্টের মধ্যে ৬টি পদ শূণ্য। অন্যদিকে ৩৬টি সিনিয়র স্টাফ নার্সের মধ্যে ২৯টি, ১১টি স্টাফ নার্সের মধ্যে ৫টি এবং ৫টি জুিনয়র নার্সের মধ্যে ১টি পদ শূণ্য রয়েছে। এতে একদিকে যেমন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। অন্যদিকে সরকারি এই হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে।
ভোলা সদর হাসপাতালে ডাক্তারদের থাকার জন্য কোনো কোয়াটারের ব্যবস্থা নেই। শুধু মাত্র সিভিল সার্জন ও আরএমওর জন্য আবাসিক ব্যবস্থা থাকলেও আরএমওর কোয়াটারটি থাকার অনুপযোগী হয়ে রায়েছে।
রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও পরিক্ষা-নিরিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় বাইরে থেকে ঔষধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। এমনই এক রোগীর স্বজন রোজিনা আক্তার বলনে, ভেলুমিয়া থেকে ২ দিন আগে দুর্ঘটনায় আহত রোগী নিয়ে এসেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত চিকিৎসকের দেখা পাইনি।
ধনিয়া এলাকার রোগীর স্বজন জয়নব বিবি বলেন, ৫ দিনে ডাক্তারের দেখা পেয়েছি মাত্র ৩ বার। তাও স্বল্প সময়ের জন্যে। ভেদুরিয়া এলাকার রোগীর স্বজন মোঃ জামাল হোসেন বলেন, রোগ নির্ণয়ে হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় বাইরে থেকে ৩ হাজার টাকার টেস্ট করিয়েছি। শান্তিরহাট থেকে আসা মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন জান্নাত বলেন, হাসপাতাল থেকে সামান্য কিছু ঔষধ দিলেও অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
দৌলতখান উপজেলার মিয়ারহাট থেকে আসা গাইনি ওয়ার্ডের রোগী সুমা বেগম বলেন, পেট ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি, ৩ দিনেও রোগ নির্ণয় হয়নি, ঠিকমত ডাক্তার পাওয়া যায়না।
ভোলা সদর হাপাতাল ঘুরে রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালের পরিবেশ দুর্গন্ধময় থাকায় রোগী এসে আরো বেশী অসুস্থ্য হয়ে যায়। টিউবওয়েল নষ্ট থাকায় দুর-দুরান্ত থেকে খাবার পানি আনতে হয়। ওয়ার্ডের আবকাঠামো সরঞ্জাম র্জীন দশা। হাসপাতালে এক্সরে মেশিন থাকলেও ইসিজি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, জেলার ১৮ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য একমাত্র ভরসা ভোলা সদর হাসপাতালে শয্যার অভাবে নারী ও পুরুষ মেডিসিন, সার্জারী, অর্থপেডিকস, গাইনী, ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে প্রায়ই রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয়। এক বছররে অধিক সময় ধরে এনেসেথসিয়া চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ রয়েছে সকল ধরনের অপারেশন। ডাক্তার স্বল্পতায় চিকিৎসক নার্সরাও দিশেহারা।
ভোলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ সামি আহমেদ বলেন, ছোট ছোট কাটা-ছেড়া ও ভাঙ্গার চিকিৎসা হলেও বড় ধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রেেয়ছ সিজারিয়াল অপারেশনও। এতে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স প্রতিভা রানী সিকদার বলেন, নার্স সংকট; তাই একজন নার্সকে গড়ে ২/৩টি ওয়ার্ড সামলাতে হয়। রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে মারাত্মকভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সরকার থেকে বিভিন্ন ৫০ আইটমেরে ইনজকেশন ও ঔষধ সরবরাহ করা হলেও হাসপাতালে ঔষুধ সংকট তীব্র। হাসপাতালে সরবরাহ নেই হৃদরোগীদের কোন ঔষধ। তাই এ ধরনের রোগীদের পড়তে হয় চরম বিরম্বনায়।
তবে হাসপাতালের স্টোর কিপার আরিফুল ইসলাম বলেন, মাঝে মধ্যে ঔষধ সংকট থাকে। চাহিদা অনুযায়ী ঔষধ সরবরাহ হচ্ছে। এ মুহুর্তে পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ রয়েছে।
হাসপাতাল সুত্র জানায়, সদর হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন বহিঃবিভাগে ৫শ’ রোগী চিকিৎসা নেন। আর ইনডোরে শতাধিক রোগী ভর্তি হন। এতে দেখা দিচ্ছে শয্যা সংকট। শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, একটি বেডে ২/৩টি শিশু চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিশুদের জন্য মাত্র ১০ বেড রয়েছে, কিন্তু তার বিপরীতে দৈনিক গড়ে ৪০/৪৫জন রোগী থাকায় গাদাগাদি করে শিশুদের চিকিৎসা নিতে হয়।
এদিকে, ১শ’ শয্যার হাসপাতালে এ হাসপাতালটিকে শয্যা সংকট লেগেই থাকে। শয্যার অভাবে রোগীদের মেঝেতে বসে চিকিৎসা নিতে হয়। তবে ৫০শয্যার খাবার সরবরাহ থাকায় বাকি ১শ’ জন পাচ্ছেন না খাবার।
ভোলা সদর হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মডেকিলে অফিসার (আরএমও) ডাঃ ইকবাল আহমদে জানান, বর্তমানে সদর হাসপাতালে ডাক্তার সংকট তীব্র। একজনের পক্ষে এতো রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব নয়। দিনের বেলা কমপক্ষে ৬ জন চিকিৎসক থাকা জরুরী। কিন্তু সে তুলনায় চিকিৎসক নেই।
এ ব্যাপারে ভোলার সিভিল সার্জন ডাঃ ফরিদ আহমেদ বলেন, ডাক্তার সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবুও চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছে। সদর হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সের পদায়ন চেয়ে উর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষের নিকট চিঠি প্রেরণ করেছি, তারা খুব শীঘ্রই আমাদের চিকিৎসক দিবেন বলে আস্বস্ত করেছেন।