বৃহস্পতিবার ● ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » মনপুরায় সবুজ উপকূল ২০১৫ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত
মনপুরায় সবুজ উপকূল ২০১৫ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত
মনপুরা প্রতিনিধি• ‘সবুজ বাঁচাই, সবুজে বাঁচি’ স্লোগান সামনে রেখে দ্বীপ জেলা ভোলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় অনুষ্ঠিত হল ‘ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সবুজ উপকূল ২০১৫’ কর্মসূচি। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে মনপুরার প্রাণকেন্দ্রে হাজীরহাট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় অঙ্গণে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, গাছের চারা রোপণ, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিদ্যালয়ের চার শতাধিক ছাত্রছাত্রীর অংশগ্রহনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। কর্মসূচি উপলক্ষে বিদ্যালয়ের আলোকযাত্রা দল প্রকাশ করে ‘বেলাভূমি’ নামের দেয়াল পত্রিকা। এতে শিক্ষার্থীদের পরিবেশ বিষয়ক লেখা প্রকাশিত হয়।
‘সবুজ উপকূল সুরক্ষায় আগামী প্রজন্মের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন খান। সভাপতিত্ব করেন হাজীরহাট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সবুজ উপকূল ২০১৫ কর্মসূচির স্থানীয় বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক মো. আলমগীর হোসেন।
অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তনে চরম ঝুঁকিতে থাকা উপকূল সুরক্ষার ওপর জোর দেন বক্তারা। তারা বলেন, উপকূল প্রতিনিয়ত চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এই এলাকার মানুষ বার বার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। একমাত্র দুর্যোগের কারণে এই এলাকা ছেড়ে বহু মানুষ জীবিকার সন্ধানে শহরে ছুঁটেছে। দুর্যোগে সংকটাপন্ন অবস্থায় বেড়ে উঠছে উপকূলের পড়–য়ারা। এ অবস্থায় পরিবেশ সংরক্ষণে আগামী প্রজন্ম, বিশেষ করে স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে সচেতন হতে হবে। গাছ লাগানোর পাশাপাশি গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ভোলা শাখার ব্যবস্থাপক মো. মনজুরুল আহসান, মনপুরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবুল কাসেম মাতাব্বর, উপকূল বাংলাদেশ-এর পরিচালক রফিকুল ইসলাম, মনপুরা মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজের প্রভাষক জুরান চন্দ্র মজুমদার, মনপুরা প্রেসক্লাবের সাংগঠণিক সম্পাদক আবদুল্লাহ জুয়েল, প্রেস ক্লাবের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সীমান্ত হেলাল, কোস্টট্রাস্ট মনপুরা শাখার ম্যানেজার রাজিব চন্দ্র ভৌমিক, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিজা সুলতানা তানহা প্রমূখ।
সকালে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। এরপর বক্তাদের আলোচনা শেষে রচনা লিখন, পত্র লিখন ও দেয়াল পত্রিকায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এরপর বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাছের চারা রোপণ করা হয়। কর্মসূচি উপলক্ষে বিদ্যালয়ে ‘বেলাভূমি’ নামে একটি দেয়াল পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে।
অনুষ্ঠানে ‘সবুজ উপকূল সুরক্ষায় আমার ভাবনা’ বিষয়ে রচনা লিখন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে দশম শ্রেণীর আয়শা সিদ্দিকা সানজিদা, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে নবম শ্রেণীর সানজিদা আকতার রিয়া, তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে দশম শ্রেণীর সুমাইয়া ইসলাম তামান্না। একই বিষয়ে পত্র লিখন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে ষষ্ঠ শ্রেণীর সাদিয়া আক্তার, দ্বিতীয় হয়েছে অস্টম শ্রেণীর মো. সজিব এবং তৃতীয় হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণীর ঐশি মজুমদার। দেয়াল লিখন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে দশম শ্রেণীর নাফিসা সুলতানা তানহা, দ্বিতীয় হয়েছে দশম শ্রেণীর জিন্নাতুন নেছা আঁখি, তৃতীয় হয়েছে সপ্তম শ্রেণীর মো. অপূর্ব। বিজয়ীদের পুরস্কার হিসাবে বই ও সাফল্য সনদ দেয়া হয়। এছাড়া সকল অংশগ্রহনকারীদের বিশেষ পুরস্কার দেয়া হয়।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এই কর্মসূচির আয়োজন করেছে উপকূল বাংলাদেশ। এতে মিডিয়া পার্টনার হিসাবে ছিল এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ ও দৈনিক সমকাল, আইটি পার্টনার ছিল আইটি প্রতিষ্ঠান ডট সিলিকন। আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্টট্রাস্ট ও স্কুল পড়–য়াদের লেখালেখির সংগঠণ আলোকযাত্রা।
উপকূলের ১০ জেলার ১৩টি উপজেলা এই কর্মসূচির আওতায় এসেছে। ১৫টি স্থানের ৭০টি স্কুলের প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নিচ্ছে। স্কুল-ভিত্তিক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে ভোলার তজুমদ্দিন, মনপুরা, বরগুনা সদর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, সাতক্ষীরার তালা, খুলনার পাইকগাছা, বাগেরহাটের সদর, মোরেলগঞ্জ, পিরোজপুরের কাউখালী, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর (২টি), চট্টগ্রামের বাঁশখালী এবং কক্সবাজারের সদর ও মহেশখালীতে। ১৪টি স্কুল-ভিত্তিক কর্মসূচি শেষে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে দ্বীপ জেলা ভোলা সদরে। ৮ সেপ্টেম্বর ভোলার তজুমদ্দিন থেকে এই কর্মসূচির সূচনা ঘটে।
কর্মসূচিতে স্কুল-কলেজ পড়–য়াদের সৃজনশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রচনা লিখন, পত্র লিখন এবং দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। লেখালেখির মাধ্যমে ওরা প্রকাশ করেছে নিজেদের কথা।