বুধবার ● ২৬ আগস্ট ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » কুরবানীর ঈদ : হাটে থাকবে চিকিৎসক, অবৈধ তাজাকরণ ঠেকাবে মোবাইলকোর্ট
কুরবানীর ঈদ : হাটে থাকবে চিকিৎসক, অবৈধ তাজাকরণ ঠেকাবে মোবাইলকোর্ট
বিশেষ রিপোর্ট • পশুর শরীরে ক্ষতিকর উপাদান পরীক্ষায় সকল সিটি করপোরেশনসহ দেশের জেলা ও উপজেলাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কোরবানীর হাটে পশু চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে স্টেরয়েড ব্যবহার করে অবৈধভাবে গরু মোটাতাজাকরণ ঠেকাতে মোবাইলকোর্ট পরিচালিত হবে।
‘পশু খাদ্য আইন-২০১০’, ‘পশুরোগ আইন, ২০০৫’ ও ‘বাংলাদেশ পশু ও পশুজাত পণ্য সঙ্গনিরোধ আইন, ২০০৫’ বাস্তবায়নে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করা হবে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি আইন তিনটি মোবাইলকোর্ট আইনের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোরবানী ঈদের আগে অতি মুনাফার আশায় অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ক্ষতিকর স্টেরয়েড ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা করে থাকে। এ ধরনের গরুর মাংস মানুষের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন প্রাণী-সম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। গত বছর আদালতের নির্দেশে সিটি করপোরেশনসহ দেশের জেলা ও উপজেলাগুলোতে কিছু কিছু হাটে পশু পরীক্ষায় চিকিৎসক দল রেখেছিল প্রাণী-সম্পদ অধিদফতর। মৎস্য ও প্রাণী-সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. আলী নূর দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এবার সকল সিটি করপোরেশনের অধীন হাটগুলোতে আমাদের পশু চিকিৎসকরা থাকবেন। এ জন্য একটি বুথ রাখার জন্য সকল সিটি করপোরেশকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত বছর আমরা প্রথমবারের মতো গরুর হাটে চিকিৎসক দল রেখেছিলাম। আমাদের বেশ কিছু সমস্যাও ছিল। আশা করি এবার সেগুলো থাকবে না।’ মো. আলী নূর আরও বলেন, ‘পশু চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত টিম হাটে একটি বুথে চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে অবস্থান করবে। পশুর শরীরে ক্ষতিকর উপাদান পরীক্ষাসহ কোনো অসুস্থ প্রাণী পেলে তারা শনাক্ত করে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করবে।’ পশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় জিনিস ব্যবহার রোধে এবার আমরা আগে-ভাগেই উদ্যোগ নিয়েছি দাবী করে আলী নূর বলেন, ‘স্টোরয়েডের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। আমরা প্রতি বিভাগের নেতৃত্বদানকারী খামারীদের সঙ্গে বসেছি। আমরা তাদের বলেছি, গরু হৃষ্টপুষ্ট করতে রাসায়নিক ব্যবহার করবেন না।’ প্রাণী-সম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় বলেন, ‘গত বছর পশু খাদ্য আইনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনগুলো মোবাইলকোর্ট আইনের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় আমাদের ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এবার আর সে সমস্যা নেই। কিছুদিন আগে পশু খাদ্য আইন, পশুরোগ আইন এবং পশু ও পশুজাত পণ্য সঙ্গনিরোধ আইন তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করে আদেশ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানীকে সামনে রেখে এবার আমরা গত জুন মাস থেকেই নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। জেলা ও উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত খামারীদের তালিকা আছে আমাদের কাছে। অবৈধভাবে কিছু করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের পরিদর্শন অব্যাহত আছে।’
পশু খাদ্য আইন-২০১০ ও পশু খাদ্য বিধিমালা-২০১৩ অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে গত মাস পর্যন্ত ৬৯টি মামলা হয়েছে জানিয়ে মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর পশু খাদ্য জব্দ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ১০০ কেজি, খাবার ধ্বংস করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৬০০ কেজি। এ ছাড়া ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।’ স্টেরয়েডের গরু চেনা ও এর মাংসে মানব দেহে প্রভাব : প্রাণী-সম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘গরুকে স্টেরয়েড দিলে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের না হলে তা টিস্যুর মধ্যে চলে যায়। গরুকে মোটা দেখায়। এ ধরনের গরুর মাংস খেলে মানুষের কিডনিতে সবচেয়ে বেশী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাসায়নিক ব্যবহার করে হৃষ্টপুষ্ট করা গরু দেখতে অনেকটা নিস্তেজ ও নির্জীব হয়। এদের চঞ্চলতা থাকে না, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে থাকে। আচরণে অত্যন্ত ক্লান্ত ভাব থাকে। এ ধরনের গরু সাধারণত জাবর কাটে না, প্রস্রাবও কম করে।’ গত ২২ আগস্ট ‘কোরবানীর গরু মোটাতাজাকরণ এবং জনস্বাস্থ্যের প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। সেখানে বক্তারা জানান, কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খাওয়ার ফলে মোটাতাজাকরণের ওষুধ ও রাসায়নিক পদার্থ মানব শরীরে ঢোকে। এতে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ মানুষের শরীরে বেশী মাত্রায় জমা হলে মানুষের বিপাক ক্রিয়াতেও প্রভাব ফেলে। ফলে মানুষও মোটা হতে থাকে। অতি লাভের জন্য কিছু অসাধু মানুষের কার্যকলাপে কোরবানীর গরুর মাংস মানুষের, বিশেষভাবে শিশু ও প্রসূতি নারীর জন্য প্রতি বছর ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আসছে।