ভয়াল রুপে মেঘনা ॥ প্রতিদিন-ই বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ী আর স্থাপনা

বিশেষ প্রতিনিধি • ভোলা সদরের ইলিশা ইউনিয়নের পুরাতন ফেরিঘাট এলাকা থেকে তালতলী লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদীর উপকূলবর্তী মানুষ। গত ৩ দিনে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে নতুন ফেরিঘাট, তালতলী লঞ্চঘাট, পুরাতন ফেরিঘাট সড়কসহ হাজার হাজার ঘরবাড়ি। নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও বড় ধরনের ¯্রােতের ঘোল সৃষ্টি হওয়ায় এ ভাঙন বেড়েছে বলে এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যার ফলে ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন মানুষ। তবে, ভাঙন রোধে সাধ্য মতো কাজ করে যাচ্ছে পাউবো। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের তালতলী লঞ্চঘাট এলাকা দিয়ে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। সেখানকার মানুষরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। কেউ ব্যস্ত দোকানপাট সড়াতে কেউ বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেউবা কাটছেন গাছ। এছাড়াও পুরাতন ফেরিঘাট এলাকার পয়েন্ট দিয়ে তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। তালতলী লঞ্চঘাটের ইজারাদর প্রতিনিধি ইউসুফ জানান, বর্ষায় তীব্র ভাঙন শুরু হলেও গত ২দিন ধরে আকস্মিক ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা অব্যাহত থাকলেও দু’একদিনের মধ্যে লঞ্চঘাট বিলীন হয়ে যাবে।

ভাঙন কবলিত এলাকার মৎস্য আড়ৎদার খোকন মোল্লা জানান, হঠাৎ করেই ভাঙন বেড়ে গেছে। দু’দিনে ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হয়েছে গেছে অন্তত ৪শ’ মিটার এলাকা।

ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা সামসুদ্দিন, আজিজল মাঝি, আবুল কাসেম ও সালাউদ্দিন জানান, যে হারে ভাঙছে তাতে ঘরবাড়ি সরানোর সময় পাচ্ছে না মানুষ। তোফাজ্জল হোসেন, শাজাহান ও আবদুর রহমান জানান, ভাঙন শুরু হলে প্রটেকশন কাজ শুরু হয়, যদি ভাঙনের আগে ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে মানুষকে এভাবে বিপদের মধ্যে পড়তো হতো না।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোয়ারের সময় ভাঙন কিছুটা কম হলেও ভাটার সময় তীব্র ভাঙন শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যেই বড় বড় মাটির খন্ড ধ্বসে পড়ছে নদীতে। মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘর সরিয়ে নিলেও ফের শুরু হয় ভাঙন।

ইলিশা ইউনিয়নের ফেরিঘাট এলাকা থেকে এখন তালতলী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন চলছে। তবে, চডার মাথা পয়েন্ট দিয়ে ভাঙন রোধে পাউবো জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ করলেও বন্ধ হচ্ছে না  ভাঙন।

নদীর এ ভাঙন অব্যাহত থাকলে ৩টি মৎস্য আড়ৎ, জংশন বাজার, ২টি মসজিদ, শত শত ঘরবাড়ি, বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যাবে। এতে হুমকির মুখে পড়বে ভোলার ৬টি ইউনিয়নসহ জেলা সদর। যে কোনো মুহূর্তে প্লাবিত হতে পারে পুরো এলাকা।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হেকিম জানান, ভাঙন রোধে ৩শ’ ২০ মিটার এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাক ডাম্পিং করা হচ্ছে এবং আরো ৮০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলতে হবে। তবে নদী যে হারে ভাঙছে তাতে ৫ থেকে ৬শ’ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলতে হবে।

তিনি আরো জানান, ভাঙন রোধ না হওয়ায় পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড সব ধরনের পদক্ষেপ নিবে। এতে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি। ভোলা জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) মো. সেলিম রেজা বলেন, ভাঙন রোধে সরকার প্রয়োজনীয় সবরকম ব্যবস্থা নেবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙন রোধে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।