বৃহস্পতিবার ● ৬ আগস্ট ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » বদলে যাচ্ছে একশত বছরের পূরনো ঢালচর
বদলে যাচ্ছে একশত বছরের পূরনো ঢালচর
মোকাম্মেল হক মিলন :: চরের দুই দিকে চীনের প্রচীরের মত দাড়িয়ে ঘন সবুজ বন, শত প্রজাতির পাখী, মায়ময় হরিন বিভিন্ন প্রজাতির সরিসৃপ, বানর, কাঠবিড়ালী শীতে সূদুর সাইবেরিয়া পাড়ি দিয়ে আসা মৌসুমী অতিথি পাখীর কলতান। মায়াময় অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই দ্বীপ কে বদলে দেবার, মানুষের বসবাস আর কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে এসেছেন এই এলাকার কৃতি সন্তান সরকারের অতিরিক্ত সচিব জনাব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ।
বদলে যাচ্ছে একশত বছরের পূরনো চর মনপুরা উপজেলাধীন ঢালচর। দশ কিলোমিটার দীর্ঘ চার কিলোমিটার প্রস্থ, এই দ্বীপ চরে আশার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। পৈতৃক ভাবে প্রাপ্ত শতশত বিঘা জমি। ফসলি জমি আর মহিষের বাতান, এই নিয়ে এই চরের মানুষের জীবন, বাড়তি আয় মেঘানায় মাছ ধরা। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে কঠিন জীবন যাপন এই অঞ্চলের মানুষের। মনপুরা উপজেলা সদর থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ৩০ মিনিটের দুরত্বের এই চরে এখনও মানুষ বাস করে আদিম যুগের মত। বিদ্যুৎ নেই, চিকিৎসা নেই, পানিও জলের ব্যবস্থা নেই, স্কুল নেই, যাতায়াতের রাস্তা নেই, ডাক্তার নেই, নেই নিত্য প্রয়োজনের অনেক কিছুই। এক অনিশ্চয়তার জীবন নিয়ে চারটা ডাল ভাত জোগারের তাগিদে এই এলাকায় বসবাস করে মানুষ।
নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মনপুরার মাটি আর মানুষের কাছে আমি এবং আমার পরিবারের ঋন রয়েছে। আমাদের পূর্ব পুরুষ এখানে এসে বসবাস শুরু করে আমার দাদা আবুল ফাতাহ্ চৌধুরী আমার বাবা ও কাকাদের ভোলা এবং বরিশালে পড়ালেখা করান। সেই সূত্রে আমার বাবা বরিশালে ও ভোলাতে বাড়ী করে আমাদের নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। আমার বড় হওয়া বেড়ে উঠা বরিশালে। পড়া লেখা বরিশাল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে মনপুরায় যেতাম ,শীতেও যেতাম পাখী শিকার করতে। মানুষের মমতা ভালবাসা আমাদের পরিবারের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা আমাকে তাগিদ দেয় এই অঞ্চলের মানুষের জন্য কিছু করার।
নাজিমউদ্দিন চৌধুরীর বাবা জনাব বরসাত উল্লাহ্ চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্থান আমলে তিনি ছিলেন ওয়াপদার একজন শীর্ষস্থানীয় ঠিকাদার। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি সাতক্ষীরায় একটি কাজের বিল পান, এবং ঐ সমুদয় টাকা এবং তার ব্যবহৃত জীপ নিয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গে ডুকে যান।
বাংলাদেশ সরকারের তহবিলে টাকা প্রধানঃ-
টাকার পুরোটাই তিনি তৎকালীন ভোলার জাতীয় পরিষদ সদস্য উনসত্তরের গন অভ্যুত্থানের মহানায়ক মুজিব বাহীনির প্রবক্তাদের একজন জনাব তোফায়েল আহমেদের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সরকারী তহবিলে দান করেন এবং তার জীপ এবং ড্রাইভার মোনায়েম মুজিব বাহিনীর বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হত।
নাজিম উদ্দিন চৌধুরী পড়া লেখা শেষে প্রথমে ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরিবর্তিকালে অডিট ও একাউন্টস অফিসে কাজে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি জ্বালানী এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ে অতিরিক্ত সচিব এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানীর চেয়ারম্যান। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ শুটিং ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করছেন।
কি করা যায় এ চরাঞ্চলেঃ-
কর্ম সূত্রে পৃখিবীর বহু দেশ ঘুরে নানা কিছু দেখার সুযোগ হয় তার। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান চৌধুরী। এখানে তাই তিনি বেশ কয়েক বছর আগ থেকে শুরু করেন একটু একটু করে তার স্বপ্নের বীজ বোনা ।
এখন তিনি তার চুড়ান্ত পর্বে হাত দিয়েছেন। তার চাকরির ভবিষৎ তহবিল থেকে লোন নিয়ে তিনি এখানে গড়ে তুলছেন ১০০ একর জায়গায় আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত মৎস চাষ প্রকল্প। ৫টা ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ইতিমধ্যে তিনি তার প্রজেক্টের কাজ সম্পন্ন করেছেন। চলছে সোলার প্যানেল দিয়ে পানি তোলার ব্যবস্থা এবং আরও ৩৮ টি সোলার দিয়ে সম্পুর্ণ প্রজেক্টকে আলোকিত করার কাজ। ব্যায়োগ্যাস প্লান্ট বসানোর কাজ আগেই শেষ হয়েছে।
প্রাথমিক প্রস্তুতিতে ছিলো ৪টি পুকুর যাতে পূর্ব থেকে মাছ চাষের অভিজ্ঞতা নেয়া যায়। আছে তার ১০০শত মহিশ, ১০০শত গরু, ১০০শত ছাগল, ১০০শত ভেড়া, ১০০ শত হাঁস, ১০০শত মুরগী এই সমস্তই তার পরিকল্পনার পূর্ব প্রস্তুতি। এখন তার স্বপ্ন ছুয়ে দিচ্ছে এলাকার মানুষকেও।
ভবিষ্যত পরিকল্পনাঃ-
অনআগ্রসর এই এলাকায় তিনি এখানকার মানুষদের সম্পৃক্ত করে ঢালচর উন্নয়ন কমিটি গঠন, শিশুদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, প্রথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, যাতায়াতের জন্য রাস্তা এবং নদী পারাপার ও মালামাল পরিবহনের জন্য ইতিমধ্যেই তিনি চট্টগ্রাম থেকে জাহাজের একটি রেসকিউ বোট সংগ্রহ করেছেন। ১০০শত বিশ (এইচ পি) এই বোটে যে কোন দুর্যোগে মানুষ নিরাপদ স্থানে দ্রুত চলে যেতে পারবে।
তার কাজের প্রেরনায় আরও ২টি প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছেন এই এলাকার চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন। নাজিমউদ্দিন চৌধুরীর ফুফাত ভাই সেলিম চৌধুরীও শুরু করবেন একটির কাজ। সব মিলিয়ে ঢালচরে এক নতুন স্বপ্নের দিগন্ত উন্মোচীত হবে এমনই ধারনা এই এলাকার মানুষের। চৌধুরীর স্বপ্ন আরও বড়, তিনি বলেন মাটির প্রতি অনুগত হতে না পারলে দেশের প্রতি ভালবাসা জন্মায় না। আমি জানিনা, আমি কতটা কি করতে পারব, আমার যোগ্যতা আর সামর্থ দিয়ে আমি আমার এলাকার একটি চরকে মডেল হিসাবে দার করাতে চেষ্টা করছি। তা থেকে অনুপ্রেরনা নিয়ে আমার মত কেউ তার এলাকায় এগিয়ে আসলে আমার স্বপ্ন ও চেষ্টা সার্থক হবে।
ঢালচরের মহিষের এবং গবাদি পশুর দুধ ও মাংস এবং এর প্রকৃতিক সৌন্দর্য্য পর্যটকদের আকর্ষনের স্থান হতে পারে। উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে যে মালদ্বীপ তাদের ছোট ছোট দ্বীপ গুলিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটিয়েছে। যেমন সিঙ্গাপুর তাদের বিকাশ ঘটিয়েছে আমাদের দেশেও আছে অফুরুন্ত সম্ভাবনা শুধু চাই সমষ্টিক পরিকল্পনা ও দেশ প্রেম ।