সোমবার ● ২৭ জুলাই ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ভোলার ২০ গ্রাম প্লাবিত: মেঘনার ভাঙ্গনে ইলিশা-লক্ষ্মীপুর রুটের সড়ক বিচ্ছিন হওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ
টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ভোলার ২০ গ্রাম প্লাবিত: মেঘনার ভাঙ্গনে ইলিশা-লক্ষ্মীপুর রুটের সড়ক বিচ্ছিন হওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ
বিশেষ প্রতিনিধি : গত কয়েকদিনে দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানি নদনদীর বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভোলার ছয় উপজেলার ২০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়ারাও জোয়ারের পানি ও ভারি বর্ষণের ফলে ভোলা সদরের ইলিশা টু লক্ষ্মীপুর রুটের ফেরি ঘাট পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যে সড়কটি সহ অন্তত্য ৩শ’ মিটার এলাকায় মেঘনার ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেছে। সড়ক বিচ্ছিন হওয়ার ফলে এই রুটের ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকেই ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ভোলার সঙ্গে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে উভয় পাড়ে যানবাহনের তীব্র লাইন জটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রীরা।
জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ছয় উপজেলার ২০ টি গ্রাম ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানির কারণে ভোলার সদর উপজেলার রামদাসপুর, নাছির মাঝি, মাঝের চর, দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া, নেয়ামতপুর, চৌমাথা, বোরানউদ্দিন উপজেলার বাটা পাড়া, কাজির হাট, চর জহির উদ্দিন, লালমোহন উপজেলার কচুয়াখালীর চর, লঞ্চঘাট এলাকা , চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরী-মুকরী, ঢালচর, চর পাতালিয়া, মনপুরা উপজেলার কলাতলির চর, ঢালচর, সোনার চর, চর নিজামসহ ২০ টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চড়ম দুর্ভোগে পড়েছে।
ভোলার সদরের রামদাসপুর এলাকার পানিবন্দি কুলসুম বেমগ, সেতারা, জান্নাত বেগম জানান,কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির পানি আর জোয়ারের পানির কারণে আমাগো ঘর বাড়ি, ফসলি জমি তলাইয়া গেলে। এইবার আমাগো না খাইয়া থাকতে হইবো।
ভোলা সদরের ধনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমদাুল রহমান কবির জানান, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর ও ঘেরের মাছ তলিয়ে যাওয়ায় চড়ম দুর্ভোগে পড়েছে অনেকে।
দৌলতখান উপজেলার নেয়ামতপুর এলাকার পানিবন্দি ইসমাইল, খোকন মিয়া, আব্বাস মিয়া জানান, জোয়ারের পানির কারণে আমাগো ঘরবাড়ি, জমি ফসল, পুকুরের ও ঘেড়ের মাছ ভাইসা গেছে। আমাগো অনেক টাকা লোকসান গুনতে হইবো। অনেক দাড়-দেনা করছি এইবার না খাইয়া থাকতে হইবো।
অপরদিকে জোয়ারের চাপে উত্তাল মেঘনা গ্রাস করছে জনপদ, ভাঙছে রাস্তা, ফসলি জমি, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। প্রবল জোয়ারে চাপে ইলিশা টু লক্ষ্মীপুর ঘাট এলাকায় সড়কের এক তৃতীয়াংশ ভেঙে গেছে। এতে এই রুটের ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ফেরির ইনচার্জ আবু আলম জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে রোববার দিনভর ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সোমবার ভোরের দিকে প্রবল জোয়ারের চাপে ইলিশা ঘাট এলাকায় সড়কে ভাঙনের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছেনা। যার ফলে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ভাটার কারণে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেনি, তবে জোয়ার এলেই পুরো এলাকা তলিয়ে যাবে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাওবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হেকীম জানান, টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ওই সব এলাকায় ২ থেকে ৩ ফুট তলিয়ে গেছে। সোমবার মেঘনার পানি বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে। তবে ভাটা পরলে কোথাও পানি নেমে যায়। জোয়ারের চাপে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের সড়ক ভেঙে গেছে। আমরা ওই পয়েন্টে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, ঈদের দিন থেকেই ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ইলিশা পয়েন্টে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। ওই ভাঙন এখন অব্যাহত রয়েছে। গত ১০ দিনের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে।