সোমবার ● ১৩ জুলাই ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » অভিযোগপত্রের আগে সরকারি চাকুরে গ্রেপ্তারে অনুমতি লাগবে
অভিযোগপত্রের আগে সরকারি চাকুরে গ্রেপ্তারে অনুমতি লাগবে
ঢাকা :: ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে সরকারের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে সরকারের অনুমতি লাগবে। তবে আদালত অভিযোগপত্র অনুমোদন করলে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি লাগবে না। সরকারি কর্মচারীদের বিষয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত যুক্ত করে সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।এদিকে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় একটি সরকারি কোম্পানি গঠনের সুযোগ রেখে একটি অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অধ্যাদেশ, ২০১৫� এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ এটোমিক এনার্জি কমিশন রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে পারমাণবিক কেন্দ্র স্থাপনের কাজ করছে।এই কেন্দ্র বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য সরকারি কোম্পানি গঠনে অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৫ হাজার ৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সরকার দেবে ১ হাজার ৮৭ কোটি ৮১ লাখ এবং বাকি ৪ হাজার কোটি টাকা দেবে রাশিয়া।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শেষ হলে পরিচালনা পদ্ধতি ঠিক করতে একটি কোম্পানি গঠন করা দরকার। বাংলাদেশ ও রাশিয়া মনে করে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি গঠন প্রয়োজন। কোম্পানি গঠিত হয় কোম্পানিজ আইনের অধীনে, কিন্তু এটা হাইটেক প্রকল্পের কারণে বিদ্যমান আইনে পরিচালনা কঠিন হবে।এজন্য একটি আইনের আওতায় কোম্পানি গঠনের কথা বলা হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।গত ৪ মে মন্ত্রিসভায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আইন, ২০১৫� এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হলেও কাজটি জরুরি হয়ে পড়ায় সংসদ অধিবেশন না চলার কারণে আইন পাসের সুযোগ না থাকায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে এই অধ্যাদেশ উত্থাপন করা হয়। এখন রাষ্ট্রপতি সই করলে অধ্যাদেশ জারি হয়ে যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আর সংসদ অধিবেশন বসলে অধ্যাদেশটি উত্থাপন করা হবে আইনে পরিণত করার জন্য।নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে এই কোম্পানি ভবিষতে অন্যান্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করবে।কোম্পানিতে একটি ওনার অর্গানাইজেশন থাকবে, তা হবে অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশন। আর অপারেটিং অর্গানাইজেশন হিসেবে থাকবে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড।এতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা ও বেটার ম্যানেজমেন্ট হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় অভিজ্ঞতা না থাকায় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার নীতিমালা মেনে রূপপুরে সব কাজ করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। কোম্পানি পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব চেয়ারম্যান হবেন। এছাড়া সর্বনিম্ন ৭ জন এবং সর্বোচ্চ ১২ জন পরিচালক থাকবেন। প্রকল্প পরিচালক হবেন কোম্পানির প্রথম এমডি।২০১৩ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের জুন প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়িত প্রকল্প ২০২১ সালের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হবে বলে আশা করছে সরকার।এদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ঝুঁকিহ্রাসের জন্য একটি নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা ও ক্যাপাসিটি আছে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি স্থায়ী আদেশের পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২ রয়েছে। এই আইনের ১৯ ধারায় নীতিমালা করার কথা বলা আছে।দুর্যোগের প্রস্তুতি, ঝুঁকিহ্রাস, সহনশীলতার প্র্যাকটিস, সমন্বয়, স্থানীয় জ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎসাহিত করা, সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্ব, অ্যাডাপটেশন নীতিমালার উদ্দেশ্য বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।দুর্যোগে কারা প্রথম সাড়া দেবে, যেমন- ফায়ার সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন প্রথম রেসপন্স করবে বলে নীতিমালায় বলা রয়েছে।দুর্যোগ সংক্রান্ত শিক্ষা সম্প্রসারণ, প্রশিক্ষণ, কমিউনিটি বেইজ সংগঠনগুলোকে প্রশিক্ষণ ও শক্তিশালী করার কথা বলা আছে নীতিমালায়।নীতিমালা আইনটির পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে সরকারের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে সরকারের অনুমতি লাগবে। তবে আদালত অভিযোগপত্র অনুমোদন করলে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি লাগবে না।সরকারি কর্মচারীদের বিষয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত যুক্ত করে সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন বলেন, সরকারি কর্মচারী আইন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। জাতীয় সংসদ এতদিন এ ব্যাপারে আইন প্রণয়ন করেনি বিধায় সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির বিধিমালার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীরা পরিচালিত হচ্ছেন। এ আইনকে সরকারি কর্মচারী আইন বলা হলেও সাংবিধানিক পদে নিয়োজিত বিচার বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী,যেকোনো পোশাকধারী সুশৃঙ্খল বাহিনী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী, উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ আইনের আওতায় পড়বেন না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশারফ হোসাইন ভূইঁয়া জানান, এটা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই আইন জারি হওয়ার পরে এর বিধি বিধান সরকারী কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে। এছাড়া এ আইনের আওতায় বিধি জারি করা হবে।এই আইনে আরো বলা হয়েছে, পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা এবং কর্মমূল্যায়নের জন্য বিধি হবে। উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষন সংক্রান্ত বিধি হবে, প্রতিবন্ধীর জন্য বিধি হবে। এছাড়া কর্মচারীদের অসাদাচরণ বিষয়ে বলা হয়েছে, চার্জশিট হওয়ার আগে গ্রেপ্তার করতে সরকারের অনুমতি লাগবে। এবং চার্জশিট হওয়ার পর গ্রেপ্তার করতে সরকারের অনুমতি লাগবে না।এটিকে আর্মি (সংশোধনী) অ্যাক্ট ২০১৫ এবং এয়ারপোর্ট সংশোধনী অ্যাক্ট এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হবে। এই আইন দুটি সামরিক শাসনামলে হওয়ায় আপডেট করে মন্ত্রী সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে।দপ্তর হারানোর পর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বৈঠকের পর পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে আশরাফের অনুপস্থিতির বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন।উত্তরে তিনি বলেন, আজ বৈঠকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন না। তার মানে এই নয় যে আগামীতে তিনি আসবেন না। সৈয়দ আশরাফকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরালেও দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।গত ৯ জুলাই তাকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা শোভিত গাড়ি নিয়েই অংশ নিতে দেখা গেছে আশরাফকে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য সৈদয় আশরাফকে কেবিনেটফোল্ডার পাঠানো হয়েছিল কি না- সাংবাদিকদের সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সৈয়দ আশরাফকে কেবিনেট ফোল্ডার পাঠানো হয়েছিল কি না- সে বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কোনো কর্মকর্তাই সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি।গত ৬ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকের ছবি, যাতে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামগত ৬ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকের ছবি, যাতে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামমন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, যে মন্ত্রণালয়ে পূর্ণমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী রয়েছেন সেসব মন্ত্রণালয়ের শুধু মন্ত্রী মন্ত্রিসভা বৈঠকে অংশ নিতে �কেবিনেট ফোল্ডার পান। ওই সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীদের তিন মাস পর পর মন্ত্রিসভা বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য ফোল্ডার পাঠানো হয়।নাম প্রকাশ করার না করার শর্তে একজন প্রতিমন্ত্রী বলেন,এই সরকারের আগের কেবিনেটে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে নিয়মিতই মন্ত্রিসভা বৈঠকে অংশ নিতে পারতাম। এখন আমার মন্ত্রণালয়ে পূর্ণমন্ত্রী থাকায় তিন মাস পর পর কেবিনেট মিটিংয়ে যেতে পারি। সৈয়দ আশরাফকে সরানোর পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তিনি সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।মন্ত্রিসভায় আরও কোনো রদবদল হচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে সচিব মোশাররাফ বলেন, রিশাফল হয়ে যাওয়ার পর জেনে যাবেন।অ্যাজ আর্লি পসিবল প্রেসরিলিজ দিয়ে দেব।আমাদের ওয়েসবাইটেও দেখতে পাবেন।