বুধবার ● ৮ জুলাই ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » খালেদার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালের পরিকল্পনা: প্রধানমন্ত্রী
খালেদার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালের পরিকল্পনা: প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা :: প্রধানমন্ত্রীশেখহাসিনা বলেছেন,পেট্রোল বোমা হামলার নির্দেশদানকারী হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সেলিনা বেগমের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ পরিকল্পনার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেট্রোল বোমা হামলার নির্দেশদানকারী খালেদা জিয়া ও তার সহযোগীসহ সব অপরাধীর নামে দায়ের করা মামলাগুলো বিচার করার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ এর ২৭ ধারা অনুযায়ী সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রয়েছে। ভবিষ্যতে উক্ত আইনের ২৭ ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত আইনের অধীন অপরাধসমূহের দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করার জন্য দায়রা জজ বা দায়রা কর্তৃক অতিরিক্ত দায়রা জজের নিকট স্থানান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত দায়রা জজকে বিচারকার্য সম্পন্ন করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল বোমা হামালার প্রতিটি ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত সুষ্ঠু ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং তা যথাযথ প্রতিপালনের বিষয়টি মনিটর করা হচ্ছে। এসব মামলার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের নেত্রী খালেদা জিয়ার হুকুমে এ বছর ৫ জানুয়ারি থেকে চলমান হরতাল ও অবরোধকালীন এবং গত ২ জুন পবিত্র শবে বরাতের রাতে কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে ৬ জনসহ পেট্রোল বোমা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ১৩৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের ইস্যুবিহীন কথিত আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ফলে ১ হাজার ৩৯৫টি যানবাহন, ১৩ দফা ট্রেনে এবং ৬টি লঞ্চে নাশকতা চালানো হয়।তিনি বলেন, নিহতদের স্বজন ও আহতদের চিকিৎসা ও পুনবার্সনের জন্য আর্থিক সাহায্য করা হচ্ছে। এটা চলমান থাকবে। নিহতদের স্বজন ও আহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২২০ জনকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া আহত ৫ জন ও নিহত আরো ১৩ জনের স্বজনের জন্য ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার চেক প্রস্তুত করা হয়েছে, যা শিগগিরই বিতরণ করা হবে। অর্থাৎ আহত ও নিহতদের মধ্যে সর্বমোট ২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বিতরণ শেষের পথে। বুধবার জাতীয় সংসদে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে আনিত প্রস্তাব সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নিম্ন মধ্যম থাকতে চাই না, উন্নত অর্থনীতির দেশ হতে চাই, উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত হতে চাই। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য এ দেশের জনগণ। বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছি বলেই উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে।এজন্য দেশবাসীসহ সরকারের সব স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছি। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। বাবার বড় সন্তান হিসেবে তার পাশে থেকে অনেক কিছুই দেখেছি। কীভাবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। আমরা এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে ক্ষুধা, দারিদ্র্য থাকবে না। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছিতিনি বলেন, আমাদের একটা লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের মানুষ যেন কুড়ে ঘরে না থাকে। আজ সেই কুড়ে ঘর নেই। কুড়ে ঘরের পরিবর্তে টিনের ঘর দিচ্ছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কারও কাছে হাত পাততে চাই না। আমরা আজকে যা অর্জন করেছি, তাতে অনেক বাধা এসেছে, জ্বালাও পোড়াও হয়েছে। এগুলো না থাকলে আজ প্রবৃদ্ধির হার সাতে পৌঁছাতো।হাসিনা বলেন, দেশের মানুষকে আমি ধন্যবাদ জানাই। কারণ তারা জ্বালাও পোড়াও প্রত্যাখান করেছে। ফলে সহিংসতা বন্ধ হয়েছে। আমরা এখন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে চাই।২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার জন্য সবার সহযোগিতা আরও একবার দরকার বলেও জানান তিনি।২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই উদযাপনের সময় আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। আশা করি আমরা এটি করতে পারবো। জাতীয় সংসদ ভবন থেকে বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, �বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া রোজার মাসে মিথ্যাচার করছেন। ইফতার পার্টিতে তিনি (খালেদা জিয়া) বলছেন- পেট্রোল বোমা নাকি পুলিশ মেরেছে! পবিত্র রমজান মাসে তিনি এতো মিথ্যাচার করেন কীভাবে?তিনি বলেন, দেশবাসী জানে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট ৯৩দিন ইস্যুবিহীন আন্দোলন করেছে। পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে তারা।পত্রিকায় প্রকাশিত পেট্রোল বোমায় হতাহতদের ছবি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা মারছে এরা কারা? এরা বিএনপি কর্মী! তারপরও কী করে তিনি (খালেদা জিয়া) বলেন, পুলিশ বোমা মারছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন। নিজের অপরাধ অন্যদের ওপর চাপাতেই পুলিশকে দায়ী করছেন তিনি।ইফতার মাহফিলে গিয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) কীভাবে মিথ্যাচার করেন?,� বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। তিনি আদালতে যাবেন না। আদালতে গেলে তো ধরা খেয়ে যাবেন!অবশেষে ৯৩ দিন আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়ে আদলতে আত্ম সমপর্ন করেছেন তিনি (খালেদা জিয়া)। এখন আবার মিথ্যাচারও শুরু করছেন। তার বিচার আল্লাহ করবে, যোগ করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন,এ অর্জন আমার একার নয়, এটা সম্মিলিত অর্জন। দেশের সবার প্রচেষ্টায় এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এজন্য দেশবাসীই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।আগামীতেও অগ্রগতির এ ধারা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা চান তিনি। বাংলদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়াদ নিয়ে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর আলোচনা হয়।দুই ডজনেরও বেশি সাংসদ আলোচনায় অংশ নেন। ধন্যবাদ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা বলেন, অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। অনেক বাধা এসেছে। আজ যেটুকু অর্জন হয়েছে, জ্বালাও- পোড়াও না হয়ে সুষ্ঠুভাবে দেশ এগিয়ে চললে জিডিপি ৭ ভাগের উপরে থাকত। যারা জ্বালাও- পোড়াও করেছে, তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে এ দেশের জনগণ। জ্বালাও- পোড়াও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বলেই বাংলাদেশ আজ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছে।তিনি বলেন, ধাপে ধাপে আমরা আরও এগিয়ে যাব। এজন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই।সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বুধবার সংসদে এই ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, সিডিপি প্রতি তিন বছরে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হালনাগাদ করে। এর সর্বশেষ সভা হয় ২০১৫ সালে। পরবর্তী সভা হবে ২০১৮ সালে। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থানের উত্তরণ হবে।তিনি বলেন, কালের পরিক্রমায় অনেক দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় এসেছে। বাংলাদেশ, কেনিয়া, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান নিম্ন আয়ের তালিকা থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে গেছে।এই উত্তরণে তিনটি বিষয় বিবেচনা করা হয়, মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদের অবস্থান এবং তিন নম্বরে সবচেয়ে কষ্টকর অর্থনৈতিক ঝুঁকিগ্রস্থতা।আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, �স্বাধীনতার পর বিশ্বব্যাংক বলেছিল- আমাদেরকে সব সময় পরনির্ভরীল হয়ে থাকতে হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেখে গেলেন না, এই সেই দেশ যা তিনি দেখতে চেয়েছিলেন।এখন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে ধনী। আমরা এখানেই থেমে থাকব না। আমরা উন্নত দেশে পরিণত হব। আমাদের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিশ্ব ব্যাংক বলেছে; কিন্তু হাতের চুড়ি আয়নায় দেখতে হয় না। বিশ্বব্যাংক বললে আমাদের পেট ভরবে না।এই সেই বিশ্ব ব্যাংক যারা কাল্পনিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুর কাজ পিছিয়ে দেয়। এই সেই বিশ্ব ব্যাংক যারা কৃষিতে ভর্তুকির ঘোরতর বিরোধী। কিন্তু আমাদের নেত্রী বলেছেন, এটা ভর্তুকি না। এটা বিনিয়োগ। কৃষক সেই প্রতিদান দিয়েছে।বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকে বসে থাকলে সেখানে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কম্পিউটারাইজড হয়ে থাকে না।বিশ্ব ব্যাংককে বলব- হুঁশ করে চলেন। আপনি সিগারেট খাবেন, আর আমার কোট পুড়ে যাবে। পরে আপনি সরি বলবেন। সরি বললেন, কিন্তু আমার কোটের কী হবে?